১০/১২৮. অধ্যায়ঃ
সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতে বলতে নত হওয়া ।
নাফি’(রহঃ) বলেন, ইব্নু ‘উমর (রাঃ) সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখতেন । [১] [১] এ সম্পর্কে যুগ শ্রেষ্ঠ আল্লামাহ ও মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানীর সিফাতু সলাতুন্নাবী থেকে তাঁর উদ্ধৃতি পেশ করছি। তিনি উক্ত বিষয়ে শিরোনাম দিয়েছেনঃ হস্তদ্বয়ের উপর ভর করে সিজদায় গমন করা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হস্তদ্বয় রাখতেন। ইব্নু খুযাইমাহ (১/৭৬/১), দারাকুত্বনী, হাকিম এবং তিনি একে সহিহ বলেছেন ও যাহাবী তাতে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। এর বিপরীতে যে হাদিস এসেছে তা সহিহ নয়। এই মত পোষণ করেছেন ইমাম মালিক। ইমাম আহমেদ থেকেও এমনটি এসেছে। ইব্নুল জাওযীর ‘আতত্বাহকীক’ গ্রন্থে (১০৮/২), মারওয়াযী স্বীয় ‘মাসায়িল’ গ্রন্থে (১/১৪৭/১) ইমাম আওযায়ী‘ থেকে সহিহ সানাদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন আমি লোকজনকে হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার উপর পেয়েছি । তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলতেনঃ তোমাদের কেউ যখন সিজদা করে তখন যেন উটের ন্যায় না বসে বরং সে যেন স্বীয় হাঁটুদ্বয়ের পূর্বে হস্তদ্বয় রাখে। আবূ দাউদ, তাম্মাম ‘আল ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে (ক্বাফ ১০৮/১) সহীহ সানাদে নাসাঈ, ‘আসসুগরা’ ও ‘আল-কুবরা’ (৪৭/১ ফটোকপি) বাদশাহ আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি, মক্কা) ‘আবদুল হক্ব আল-আহকামুল কুবরাতে (৫৪/১) একে সহিহ বলেছেন এবং “কিতাবুত্তাহাজ্জুদে” (৫৬/১) বলেছেনঃ এটি পূর্বের হাদিস অর্থাৎ তার বিরোধী ওয়াইল এর হাদিস অপেক্ষা উত্তম সনদ বিশিষ্ট বরং এটি যেমন (ওয়াইলের হাদিস) উপরোক্ত সহীহ হাদিস ও তার পূর্বের হাদিস বিরোধী ঠিক তদ্রূপ সানাদের দিক দিয়েও তা সহিহ নয় এবং এ অর্থে যে সব হাদিস এসেছে এগুলোও অনুরূপ। দেখুন আমার আলোচনা ‘আয্ যঈফাহ্’ (৯২৯) ও ‘আল ইরওয়া’ (৩৫৭)। জেনে রাখুন উটের হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার বিষয়ে ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, সে সর্ব প্রথম হাঁটু রাখে এবং তার হাঁটু হাতের মধ্যে হয়ে থাকে। দেখুন ‘লিসানুল আরব’ ও অন্যান্য অভিধান গ্রন্থ, ত্বাহাবি ‘মুশকিলুল আ-ছা-র’ ও ‘শারহু মা’য়ানিল আ-ছার’ গ্রন্থে এরূপ কথাই উল্লেখ করছেন। ইমাম ক্বাসিম সরক্বসত্বী রাহিমাহুল্লাহ-ও ‘গরীবুল হাদিছে’ (২/৭০/১-২) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ পলাতক উটের ন্যায় যেন অবতরণ না করে ।” ইমাম ক্বাসিম বলেনঃ এটা সিজদার ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, পূর্ণ ধীরতা ও পরযায়ক্রমতা বজায় না রেখে বিচলিত উটের ন্যায় নিজেকে নিক্ষেপ না করে এবং ধীরস্থিরতার সাথে অবতরণ করে। প্রথমে হস্তদ্বয় রাখবে অতঃপর হাঁটুদ্বয় রাখবে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি হাদিছও বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর উপরোল্লিখিত হাদীছ উল্লেখ করেন। ইব্নুল কাইয়িম এমন এক মন্তব্য করেছেনঃ যেটা বিবেক সম্মত নয় এবং ভাষাবিদগণও এই ব্যাখ্যার সাথে পরিচিত নন। কিন্তু আমি যেসব প্রমানপঞ্জির দিকে ইঙ্গিত করেছি তা এর প্রতিবাদ করে এবং এছাড়াও আরো অনেক প্রমাণপঞ্জি আছে । (দেখুনঃ নাসিরুদ্দিন আলবানি কৃত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর “ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি” বঙ্গানুবাদ ও সম্পাদনায়– আকরামুজ্জামান বিন আবদুস সালাম ও আবূ রাশাদ আজমল বিন আবদুন নূর)
সহিহ বুখারী : ৮০৩
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৮০৩
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، كَانَ يُكَبِّرُ فِي كُلِّ صَلاَةٍ مِنَ الْمَكْتُوبَةِ وَغَيْرِهَا فِي رَمَضَانَ وَغَيْرِهِ، فَيُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْكَعُ، ثُمَّ يَقُولُ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ. ثُمَّ يَقُولُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ. قَبْلَ أَنْ يَسْجُدَ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ. حِينَ يَهْوِي سَاجِدًا، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَسْجُدُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ السُّجُودِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ حِينَ يَقُومُ مِنَ الْجُلُوسِ فِي الاِثْنَتَيْنِ، وَيَفْعَلُ ذَلِكَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ حَتَّى يَفْرُغَ مِنَ الصَّلاَةِ، ثُمَّ يَقُولُ حِينَ يَنْصَرِفُ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَقْرَبُكُمْ شَبَهًا بِصَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنْ كَانَتْ هَذِهِ لَصَلاَتَهُ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
আবূ বকর ইব্নু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) ও আবু সালামা ইব্নু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রমযান মাসের সালাত বা অন্য কোন সময়ের সালাত ফরয হোক বা অন্য কোন সালাত হোক, দাঁড়িয়ে শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন, আবার রুকু‘তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর (রুকূ’ থেকে উঠার সময়) 'سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه' বলতেন, সিজ্দায় যাওয়ার পূর্বে 'رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ' বলতেন। অতঃপর সিজদার জন্য অবনত হবার সময় আল্লাহু আকবর বলতেন। আবার সিজদা হতে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন এবং সিজদা হতে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। দু’ রাক’আত আদায় করে দাঁড়ানোর সময় আবার তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করা পর্যন্ত প্রতি রাক’আতে এরূপ করতেন। সালাত শেষে তিনি বলতেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমাদের মধ্য হতে আমার সালাত আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সালাতের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। দুনিয়া হতে বিদায় নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সালাত এ রকমই ছিল।