৯৫/১. অধ্যায়ঃ

সত্যবাদী বর্ণনাকারীর খবরে ওয়াহিদ আযান, সালাত, সওম, ফরয ও অন্যান্য আহ্কামের বিষয়ে অনুমোদনযোগ্য।

আল্লাহ্‌র কথাঃ “তাদের প্রত্যেক দল থেকে একটি অংশ কেন বের হয় না যাতে তারা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানের অনুশীলন করতে পারে এবং ফিরে আসার পর তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে যাতে তারা (অসদাচরণ) থেকে বিরত হয় ?” (সূরা আত্-তওবা ৯/১২২) (আরবী শব্দ) শব্দটি এক ব্যক্তিকেও বুঝায়। কেননা, আল্লাহর বাণীঃ “মু’মিনদের দু’দল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর একটি দল অপরটির উপর বাড়াবাড়ি করলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করে, তার বিরূদ্ধে তোমরা লড়াই কর যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। অতঃপর যদি দলটি ফিরে আসে, তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে ফায়সালা কর আর সুবিচার কর; আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন” (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯/৯)।অতএব যদি দু’ব্যক্তি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় তবে তা এ আয়াতের অর্থের মধ্যে শামিল হবে। আল্লাহর বাণীঃ “যদি কোন পাপাচারী তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে তোমরা তা পরখ করে দেখবে যাতে অজ্ঞতার কারণে তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত না কর...” (সূরা আল-হুজুরাত ৪৯/৬)। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিরূপে তাঁর আমীরদেরকে পর্যায়ক্রমে এক এক করে পাঠাতেন- যাতে তাদের কেউ ভুল করলে তাকে সুন্নাতের দিকে ফিরিয়ে আনা হয়। [‘খবরে ওয়াহিদ’-১৮৫] আযান, সালাত, সওম এবং অন্যান্য ফরয ‘ইবাদতের ব্যাপারে কোন বিশ্বস্ত ব্যক্তির একক সাক্ষ্যকে ‘খবরে ওয়াহিদ’ বলে। উসূলে হাদীসে এক, দু’ বা তিনজন রাবী’ (বর্ণনাকারী) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ বলে।ইবাদত, ফারায়েজ ও আহকামের ক্ষেত্রে (আরবী শব্দ) খবরে ওয়াহেদ হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েজ। ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত তিনটি বিষয় উল্লেখ করলেও আক্বীদার বিষয়ে (আরবী শব্দ) দলীল কি না তা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আক্বীদার ক্ষেত্রেও (আরবী শব্দ) হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়েয এবং সে অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। ড. আহমাদ আল আশকার উল্লেখ করেছেন যে, শাইখ নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী এর প্রমাণ স্বরূপ ২০টি কারণ বা দিক লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্য থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ দলীলগুলোর দু’একটি এখানে উল্লেখ করলামঃ১. কুরআন থেকে দলীল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ উল্লেখিত আয়াতটিতে (আরবী শব্দ) শব্দটির শাব্দিক অর্থ (আরবী শব্দ) এবং তার উপরের জন্য প্রয়োগ করা হয়। আর ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন যে,(আরবী শব্দ)কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী লাইন) (হুজরাত : ৯)ফলে যদি দু’ব্যক্তি লড়াই করে তবুও তারা এই আয়াতের অর্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।সুতরাং আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, যদি কোন ব্যক্তি তার স্বজাতির কাছে ফিরে আসে তাহলে সে তাদেরকে সতর্ক করবে। আর (আরবী শব্দ) শব্দটি (আরবী শব্দ) এর অর্থ যা ইলমের ফায়দা দেয়। আর (আরবী শব্দ) শব্দটি (আরবী শব্দ) এর অর্থে যা ইলমের ফায়দা দেয়। আর তা হবে আক্বীদা ও অন্যান্য বিষয়ের তাবলীগের মাধ্যমে। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি দ্বীনের কোন বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দিলে তা গ্রহণীয় হয়, তাহলে তো এটাই প্রমাণ করে যে, তার সংবাদ দলীল। আর দ্বীনের পাণ্ডিত্য অর্জন আক্বীদা ও আহকাম উভয়কে শামিল করে। বরং আহকামের ব্যাপারে পাণ্ডিত্য অর্জনের চাইতে আক্বীদার ব্যাপারে পাণ্ডিত্য অর্জন করাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। ২. হাদীস থেকে দলীল : রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয বিন জাবালকে ইয়ামানে প্রেরণের প্রারম্ভে বলেনঃ (আরবী লাইন)(সহীহ বুখারী ২/৫২৯ যাকাত অধ্যায়)হাদীসটিতে সুস্পষ্ট আহ্বান হচ্ছে তাওহীদের দিকে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা। আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনা আক্বাঈদের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্গত। সুতরাং খবরে ওয়াহিদ আক্বীদার ক্ষেত্রে (আরবী লাইন) দলীল। ৩. রসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিভিন্ন গোত্রের ও রাজা বাদশাহর নিকট দূত প্রেরণের ধারাবাহিকতা- যেমনঃ দাহইয়া কালবীকে হিরাকল এর নিকট, আবদুল্লাহ্ ইবনু হুযাইফা সাহমীকে কিসরার নিকট, আমর ইবনু উমাইয়া জমরীকে হাবশায়, উসমান ইবনু আবিলকে আসকে তায়েফে, হাতেব বিন বালাতাহকে মুকাওলিস এর নিকট প্রেরণ করেন।এই দূত প্রেরণের একমাত্র কারণ হল যাতে করে তাদের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তাদেরকে প্রেরণের উদ্দেশ্যই ছিল তাওহীদের দিকে আহ্বান। ----------------------------------------বিশেষত : যারা আক্বীদার ক্ষেত্রে (আরবী শব্দ) কে গ্রহণ করে না তাদের জন্য আক্বীদার অনেক বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে যা (আরবী শব্দ) হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। যেমন : ১. সমস্ত নবী রসূলদের উপর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব।২. কিয়ামত দিবসে তার শাফা‘আতে কুবরা।৩. কবীরা গুনাহগারদের জন্য তাঁর শাফা‘আত।৪. কুরআন ব্যতীত নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র সমস্ত মুজিযা।৫. ফেরেশতা, জিন, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা যা কুরআনে উল্লেখ হয়নি।৬. কবরে মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন।৭. মৃতকে কবরের চাপ দেয়া। ৮. প্রত্যেক ব্যক্তির তার মায়ের গর্ভের মধ্যেই ভাল-মন্দ, রিযিক ও মৃত্যু আল্লাহ্ লিপিবদ্ধ করেন তার প্রতি ঈমানের আনয়ন।৯. পুলসিরাত (আরবী শব্দ), হাউজ, দু পাল্লা বিশিষ্ট মীযান (দাঁড়িপাল্লা)। ( ফাতহুল বারী)

সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৭২৬০

أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ قَامَ رَجُلٌ مِنْ الأَعْرَابِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ اقْضِ لِي بِكِتَابِ اللهِ فَقَامَ خَصْمُهُ فَقَالَ صَدَقَ يَا رَسُولَ اللهِ اقْضِ لَهُ بِكِتَابِ اللهِ وَأْذَنْ لِي فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قُلْ فَقَالَ إِنَّ ابْنِي كَانَ عَسِيفًا عَلَى هَذَا وَالْعَسِيفُ الأَجِيرُ فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ فَأَخْبَرُونِي أَنَّ عَلَى ابْنِي الرَّجْمَ فَافْتَدَيْتُ مِنْهُ بِمِائَةٍ مِنْ الْغَنَمِ وَوَلِيدَةٍ ثُمَّ سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَأَخْبَرُونِي أَنَّ عَلَى امْرَأَتِهِ الرَّجْمَ وَأَنَّمَا عَلَى ابْنِي جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ فَقَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللهِ أَمَّا الْوَلِيدَةُ وَالْغَنَمُ فَرُدُّوهَا وَأَمَّا ابْنُكَ فَعَلَيْهِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ لِرَجُلٍ مِنْ أَسْلَمَ فَاغْدُ عَلَى امْرَأَةِ هَذَا فَإِنْ اعْتَرَفَتْ فَارْجُمْهَا فَغَدَا عَلَيْهَا أُنَيْسٌ فَاعْتَرَفَتْ فَرَجَمَهَا.

আবুল ইয়ামান (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

আবুল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ বর্ণনায় উল্লেখ করা হয় যে, তিনি [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] বলেছেন,আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ তা’আলার কিতাব অনুসারে আমার ফায়সালা করে দিন। তখন তার বিরোধী লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি সত্যই বলেছেন, আল্লাহ্‌র কিতাব অনুসারে তার ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি বল। তখন সে বলল, আমার ছেলে এ লোকটির বাড়িতে মজুর ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, হাদীসে উক্ত (আরবী) শব্দটির অর্থ মজুর। সে ছেলে এ লোকের স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করে। কতক লোক আমাকে বলল যে, আমার ছেলেটির উপর ‘রজম’ কার্যকর হবে। তখন আমি মুক্তিপণ হিসাবে একশ বক্‌রী ও একটি দাসী দেই। অতঃপর আমি আলিমদের নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তাঁরা আমাকে বললেন যে, তাঁর স্ত্রীর জন্য ‘রজম’। আর আমার ছেলের জন্য রয়েছে একশ’ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরের বিধান। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, অবশ্য অবশ্যই আমি তোমাদের দু’জনের মাঝে সেই মহান আল্লাহ্‌র কিতাব অনুসারে ফায়সালা করব। বক্‌রী ও বাঁদী ফিরিয়ে নাও। তোমার ছেলের জন্য রয়েছে একশ’ বেত্রাঘাত ও একবছরের জন্য দেশান্তরের হুকুম। অতঃপর তিনি আসলাম গোত্রের এক লোককে ডেকে বললেন, হে উনায়স! তুমি এর স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে ‘রজম’ করো। উনায়স সেই মহিলার নিকট গেলেন, সে স্বীকার করল, তখন তিনি তাকে রজম করলেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৬৪)

সেটিংস

ফন্ট সেটিংস

আরবি ফন্ট ফেস

আরবি ফন্ট সাইজ

২৪

অনুবাদ ফন্ট সাইজ

১৮

আল হাদিস অ্যাপ ডাউনলোড করুন

App Banner

ইসলামের জ্ঞান প্রচারে সহায়ক হোন

আপনার নিয়মিত সহায়তা আমাদের দ্বীনি ভাই-বোনের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে সাহয্য করবে। আমাদের মিশনে আপনিও অংশ নিন এবং বড় পরিবর্তনের অংশীদার হোন।

সাপোর্ট করুন