৭৮/৫. অধ্যায়:
পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারীর দু‘আ কবুল হওয়া।
সহিহ বুখারী : ৫৯৭৪
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৫৯৭৪
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عُقْبَةَ، قَالَ أَخْبَرَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " بَيْنَمَا ثَلاَثَةُ نَفَرٍ يَتَمَاشَوْنَ أَخَذَهُمُ الْمَطَرُ، فَمَالُوا إِلَى غَارٍ فِي الْجَبَلِ، فَانْحَطَّتْ عَلَى فَمِ غَارِهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ، فَأَطْبَقَتْ عَلَيْهِمْ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ انْظُرُوا أَعْمَالاً عَمِلْتُمُوهَا لِلَّهِ صَالِحَةً، فَادْعُوا اللَّهَ بِهَا لَعَلَّهُ يَفْرُجُهَا. فَقَالَ أَحَدُهُمُ اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَ لِي وَالِدَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، وَلِي صِبْيَةٌ صِغَارٌ كُنْتُ أَرْعَى عَلَيْهِمْ، فَإِذَا رُحْتُ عَلَيْهِمْ فَحَلَبْتُ بَدَأْتُ بِوَالِدَىَّ أَسْقِيهِمَا قَبْلَ وَلَدِي، وَإِنَّهُ نَاءَ بِيَ الشَّجَرُ فَمَا أَتَيْتُ حَتَّى أَمْسَيْتُ، فَوَجَدْتُهُمَا قَدْ نَامَا، فَحَلَبْتُ كَمَا كُنْتُ أَحْلُبُ، فَجِئْتُ بِالْحِلاَبِ فَقُمْتُ عِنْدَ رُءُوسِهِمَا، أَكْرَهُ أَنْ أُوقِظَهُمَا مِنْ نَوْمِهِمَا، وَأَكْرَهُ أَنْ أَبْدَأَ بِالصِّبْيَةِ قَبْلَهُمَا، وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَىَّ، فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِي وَدَأْبَهُمْ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ لَنَا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ، فَفَرَجَ اللَّهُ لَهُمْ فُرْجَةً حَتَّى يَرَوْنَ مِنْهَا السَّمَاءَ. وَقَالَ الثَّانِي اللَّهُمَّ إِنَّهُ كَانَتْ لِي ابْنَةُ عَمٍّ، أُحِبُّهَا كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النِّسَاءَ، فَطَلَبْتُ إِلَيْهَا نَفْسَهَا، فَأَبَتْ حَتَّى آتِيَهَا بِمِائَةِ دِينَارٍ، فَسَعَيْتُ حَتَّى جَمَعْتُ مِائَةَ دِينَارٍ، فَلَقِيتُهَا بِهَا، فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتْ يَا عَبْدَ اللَّهِ اتَّقِ اللَّهَ، وَلاَ تَفْتَحِ الْخَاتَمَ. فَقُمْتُ عَنْهَا، اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي قَدْ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا مِنْهَا فَفَرَجَ لَهُمْ فُرْجَةً. وَقَالَ الآخَرُ اللَّهُمَّ إِنِّي كُنْتُ اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرَقِ أَرُزٍّ فَلَمَّا قَضَى عَمَلَهُ قَالَ أَعْطِنِي حَقِّي. فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَقَّهُ، فَتَرَكَهُ وَرَغِبَ عَنْهُ، فَلَمْ أَزَلْ أَزْرَعُهُ حَتَّى جَمَعْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرَاعِيَهَا، فَجَاءَنِي فَقَالَ اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَظْلِمْنِي، وَأَعْطِنِي حَقِّي. فَقُلْتُ اذْهَبْ إِلَى ذَلِكَ الْبَقَرِ وَرَاعِيهَا. فَقَالَ اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَهْزَأْ بِي. فَقُلْتُ إِنِّي لاَ أَهْزَأُ بِكَ، فَخُذْ ذَلِكَ الْبَقَرَ وَرَاعِيَهَا. فَأَخَذَهُ فَانْطَلَقَ بِهَا، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ مَا بَقِيَ، فَفَرَجَ اللَّهُ عَنْهُمْ ".
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনজন লোক হেঁটে চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড় হতে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন অন্যদের বললোঃ তোমরা তোমাদের কৃত ‘আমালের প্রতি লক্ষ্য করো যে নেক ‘আমাল তোমরা আল্লাহ্র জন্য করেছ; তার ওয়াসীলাহ্য় আল্লাহ্র নিকট দু’আ করো। হয়তো তিনি এটি হটিয়ে দেবেন।তখন তাদের একজন বললোঃ হে আল্লাহ! আমার বয়োবৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিল এবং ছোট ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্যে মাঠে পশু চরাতাম। যখন সন্ধ্যায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতা-মাতাকে পান করতে দিতাম। একদিন পশুগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরে আসতে দেরী হয়ে যায়। ফিরে দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘুম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরা আমাদের দু’পায়ের কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। শেষে ভোর হয়ে গেল। (হে আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই এ কাজ করেছি। তাই আপনি আমাদের জন্য একটু ফাঁক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাদের জন্যে একটু ফাঁক করে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখতে পায়।দ্বিতীয় ব্যক্তি বললোঃ হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে এতখানি ভালবাসতাম যতখানি একজন পুরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে পারে। আমি তাকে একান্তে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ’ দীনার উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ’ স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দু’পায়ের মধ্যে বসলাম, তখন সে বললোঃ হে আল্লাহর বান্দাহ! আল্লাহ্কে ভয় করো, আমার কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্যে এটি ফাঁক করে দিন। তখন তাদের জন্যে আল্লাহ আরও কিছু ফাঁক করে দিলেন।শেষের লোকটি বললোঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে এক ‘ফার্ক’[১৪] চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলল, আমার প্রাপ্য দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম। কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান করলো। তারপর তার প্রাপ্যটা আমি ক্রমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তা দিয়ে অনেকগুলো গরু ও রাখাল জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললোঃ আল্লাহ্কে ভয় কর, আমার উপর যুল্ম করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললাম: ঐ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললোঃ আল্লাহ্কে ভয় করো, আমার সাথে উপহাস কর না। আমি বললাম: তোমার সাথে আমি উপহাস করছি না। তুমি ঐ গরুগুলো ও তার রাখাল নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (হে আল্লাহ!) আপনি জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যেই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৬)
[১] فَرَقِ ‘ফারক’ তৎকালীন সময়ে প্রচলিত একটি পরিমাপের পাত্র যা ১৬ রাতল-এর সমান।