৬৪/৭৯.অধ্যায়ঃ
তাবূক [৮৬]-এর যুদ্ধ-আর তা হল কষ্টকর যুদ্ধ
[৮৬] একটি যাত্রীদল সিরিয়া হতে এসে জানালো যে, রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস মাদীনা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরবের নহম, জুযাম, আমিলাহ, গাসসান প্রভৃতি খৃষ্টান গোত্রগুলি তাদের সাথে মিলিত হয়েছে। মুতা যুদ্ধে হিরাক্লিয়াসের অধীনস্থ শাসনকর্তার পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণই যেন এই অভিযানে উদ্দেশ্য ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যে, এই আক্রমণমুখী শত্রু বাহিনী আরবের নিজস্ব যমীনে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে যাতে দেশে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বাধা সৃষ্টি না হয়। এই মুকাবালা এমন সম্রাটের বিরুদ্ধে ছিল, যে সে সময় অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিল এবং যে বাহিনী তখনই ইরান সাম্রাজ্যকে পদানত করে ফেলেছিল।মুসলিমদের অস্ত্রশস্ত্র যানবাহন ও রসদাদির অত্যন্ত অভাব ছিল। তার উপর রৌদ্র ও গ্রীষ্মের ছিল ভীষণ প্রকোপ। মাদীনায় ফল পেকে গিয়েছিল। সুতরাং তখন ছিল ফল খাওয়া ও ছায়ায় বসে থাকার দিন।রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রসদ সংগ্রহের জন্য যে সাধারণ চাঁদার তহবিল খুললেন, তাতে 'উসমান (রাঃ) ৯০০ উট, ১০০ ঘোড়া, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন, তাকে মুজহেযু জায়শিল উসরাহ অর্থাৎ অভাবগ্রস্ত ও ক্ষুধার্ত সেনাবাহিনীর রসদ প্রস্তুতকারী উপাধী দেয়া হলো। 'আবদুর রহমান বিন 'আওফ দিলেন চল্লিশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা। 'উমার ফারুক (রাঃ) দিলেন সমস্ত গৃহের অর্ধেক যা কয়েক হাজার মুদ্রা ছিল। আবূ বাক্র (রাঃ) যা কিছু আনলেন তা মূল্যের দিক দিয়ে নিতান্ত কম হলেও জানা গেল তিনি বাড়িতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্ব্ত ছাড়া আর কিছুই রেখে আসেননি। আবূ উফায়েল আনসারী (রাঃ) সারা রাত ধরে একটি জমিতে পানি দিয়ে চার সের খেজুর পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন তা থেকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের জন্য দুই সের রেখে বাকী দুই সের দিয়ে দিলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, খেজুরগুলোকে সমস্ত মাল ও রসদের উপর ছিটিয়ে দাও। প্রায় ৮২ জন লোক যারা টালবাহানা করে বাড়িতে রয়ে গিয়েছিল, প্রসিদ্ধ মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনু 'উবাই ইবনু সালূল ঐ লোকগুলোকে এ কথা বলে শান্ত করেছিল যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তার সঙ্গী সাথীরা আর মাদীনাহ্তে ফিরে আসতে পারবে না। রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাদেরকে বন্দী করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিবে।রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ত্রিশ হাজারের একটি বাহিনী নিয়ে তাবূক অভিমুখে যাত্রা করলেন। সেনাবাহিনীতে যানবাহনের স্বল্পতা ছিল, ১৮ জন লোকের জন্য একটি উট নির্ধারিত ছিল। রসদপত্র না থাকার কারণে অধিকাংশ জায়গায় গাছের পাতা খেতে হয়। ফলে ঠোঁটে ক্ষত হয়ে যায়। কোন কোন জায়গায় পানি পাওয়াই যাইনি। এক্ষেত্রে উট যবহ করে তার পকস্থলির পানি পান করা হয়। অসীম সহনশীলতা ও ধৈর্যের সাথে সমস্থ দুঃখ কষ্ট সহ্য করে তাবূক পৌঁছে যান। তথায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস অবস্থান করেন। সিরিয়াবাসীর উপর এটার এমন প্রভাব পড়ে যে, তারা ঐ সমস্ত আরবের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা ত্যাগ করে এবং আক্রমণ করার সুবর্ণ সুযোগ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকালের পরবর্তী সময়ে ঠিক করে। (রহমাতুল লিল 'আলামীন)
সহিহ বুখারী : ৪৪১৭
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৪৪১৭
عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ قَالَ سَمِعْتُ عَطَاءً يُخْبِرُ قَالَ أَخْبَرَنِيْ صَفْوَانُ بْنُ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْعُسْرَةَ قَالَ كَانَ يَعْلَى يَقُوْلُ تِلْكَ الْغَزْوَةُ أَوْثَقُ أَعْمَالِيْ عِنْدِيْ قَالَ عَطَاءٌ فَقَالَ صَفْوَانُ قَالَ يَعْلَى فَكَانَ لِيْ أَجِيْرٌ فَقَاتَلَ إِنْسَانًا فَعَضَّ أَحَدُهُمَا يَدَ الْآخَرِ قَالَ عَطَاءٌ فَلَقَدْ أَخْبَرَنِيْ صَفْوَانُ أَيُّهُمَا عَضَّ الآخَرَ فَنَسِيْتُهُ قَالَ فَانْتَزَعَ الْمَعْضُوْضُ يَدَهُ مِنْ فِي الْعَاضِّ فَانْتَزَعَ إِحْدَى ثَنِيَّتَيْهِ فَأَتَيَا النَّبِيَّ فَأَهْدَرَ ثَنِيَّتَهُ قَالَ عَطَاءٌ وَحَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَفَيَدَعُ يَدَهُ فِيْ فِيْكَ تَقْضَمُهَا كَأَنَّهَا فِيْ فِيْ فَحْلٍ يَقْضَمُهَا.
সফওয়ান এর পিতা ইয়ালা ইবনু 'উমাইয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর- সঙ্গে কষ্টের (তাবূকের) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ইয়া'লা বলতেন যে, উক্ত যুদ্ধ আমার কাছে নির্ভরযোগ্য 'আমালের অন্যতম বলে বিবেচিত হত। 'আত্বা(রহঃ) বলেন যে, সাফওয়ান বলেছেন, ইয়া'লা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমার একজন দিনমজুর চাকর ছিল, সে একবার এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হল এবং এক পর্যায়ে একজন অন্যজনের হাত দাঁত দ্বারা কেটে ফেলল। 'আত্বা (রাঃ) বলেন, আমাকে সাফওয়ান (রহঃ) জানান যে, উভয়ের মধ্যে কে কার হাত দাঁত দ্বারা কেটেছিল তার নাম আমি ভুলে গেছি। রাবী বলেন, আহত ব্যক্তি আহতকারীর মুখ থেকে নিজ হাত বের করার পর দেখা গেল, তার সম্মুখের একটি দাঁত উপড়ে গেছে। তারপর দুজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর- সমীপে আসল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দাঁতের ক্ষতিপূরণের দাবি নাকচ করে দিলেন। 'আত্বা (রাঃ) বলেন যে,আমার ধারণা যে, বর্ণনাকারী এ কথাও বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তবে কি সে তার হাত তোমার মুখে চিবানোর জন্যে ছেড়ে দিবে? যেমন উটের মুখে চিবানোর জন্য ছেড়ে দেয়া হয়? [১৮৪৭] (আ.প্র. ৪০৬৯, ই.ফা. ৪০৭২)