৯৬/২৮. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ তারা নিজেদের মাঝে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। (সূরাহ আশ-শূরা ৪২/৩৮)
এবং পরামর্শ করো তাঁদের সঙ্গে (দীনী) কাজের ব্যাপারে। পরামর্শ হলো স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও লক্ষ্য নির্ধারণের পূর্বে। যেমন, আল্লাহ্র বাণীঃ “অতঃপর যখন তুমি দৃঢ়সংকল্প হও, তখন আল্লাহ্র উপর ভরসা কর”-(সূরাহ আল্ ‘ইমরান ৩/১৫৯)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প হন, তখন আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের মতের বিপক্ষে যাওয়ার কারো কোন অধিকার থাকে না। উহূদের যুদ্ধের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে এ পরামর্শ করেন যে, যুদ্ধ কি মদীনায় থেকে চালাবেন, না বাইরে গিয়ে? সহাবাগণ মদীনা হতে বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করার রায় দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের পোশাক পরলেন এবং যখন যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হলেন, তখন সাহাবীগণ আবেদন জানালেন, মদীনা হতেই অবস্থান করুন। কিন্তু তিনি দৃঢ়সংকল্প হবার পর তাঁদের এ মতামতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তিনি মন্তব্য করলেনঃ কোন নবীর সামরিক পোশাক পরার পর আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুকুম না পাওয়া পর্যন্ত তা খুলে ফেলা উচিত নয়।তিনি ‘আলী (রাঃ) ও উসামা (রাঃ) - এর সঙ্গে ‘আয়িশার উপর যিনার মিথ্যা অপবাদ লাগানো সম্পর্কে পরামর্শ করেন। তাঁদের কথা তিনি শোনেন। অতঃপর কুরআনের আয়াত নাযিল হয়। মিথ্যা অপবাদকারীদেরকে তিনি বেত্রাঘাত করেন। তাঁদের পারস্পরিক মতপার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য না করে আল্লাহ্র নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেন।নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর পরে ইমামগণ মুবাহ্ বিষয়ে বিশ্বস্ত আলেমদের কাছে পরামর্শ চান, যেন তুলনামূলক সহজ পথ তারা গ্রহণ করতে পারেন। হাঁ, যদি কিতাব কিংবা সুন্নাহ্তে আলোচ্য ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যেত, তখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কথারই অনুসরণ করতেন, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করতেন না।(নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর অনুসরণেই) যাকাত যারা বন্ধ করেছিল, আবূ বক্র (রাঃ) তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘উমর (রাঃ) তখন বললেন, আপনি কিভাবে লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’। তারা যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে তখন তারা আমার নিকট হতে তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ইসলামের হকের ব্যাপার আলাদা। আর সে ব্যাপারে তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহ্র উপর। আবূ বক্র (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই করব, যারা এমন বিষয় বিচ্ছিন্ন করে যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুসংহত করেছেন। অবশেষে ‘উমর (রাঃ) তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন। আবূ বক্র (রাঃ) এ ব্যাপারে (কারো সঙ্গে) পরামর্শ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কেননা, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করে এবং ইসলাম-এর নির্দেশাবলী পরিবর্তন ও বিকৃত করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সিদ্ধান্ত তাঁর সামনে বিদ্যমান ছিল। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর।‘উমর (রাঃ) - এর পরামর্শ সভার সদস্যগণ কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তারা অধিক বয়স্কই হোন কিংবা যুবক। আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে ‘উমর (রাঃ) ছিলেন খুব ওয়াকেফহাল।
সহিহ বুখারী : ৭৩৭০
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৭৩৭০
وَقَالَ أَبُو أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ. مُحَمَّدُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي زَكَرِيَّاءَ الْغَسَّانِيُّ عَنْ هِشَامٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَطَبَ النَّاسَ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ مَا تُشِيرُونَ عَلَيَّ فِي قَوْمٍ يَسُبُّونَ أَهْلِي مَا عَلِمْتُ عَلَيْهِمْ مِنْ سُوءٍ قَطُّ وَعَنْ عُرْوَةَ قَالَ لَمَّا أُخْبِرَتْ عَائِشَةُ بِالأَمْرِ قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أَنْطَلِقَ إِلَى أَهْلِي فَأَذِنَ لَهَا وَأَرْسَلَ مَعَهَا الْغُلاَمَ وَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الأَنْصَارِ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَذَا سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের (সামনে) খুত্বাহ দিলেন। আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণগান করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ যারা আমার স্ত্রীর অপবাদ রটিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের সম্পর্কে তোমরা আমাকে কী পরামর্শ দাও। আমি আমার পরিবারের কারো মধ্যে কক্ষনো খারাপ কিছু দেখি নি।‘উরওয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আয়িশাকে সেই অপবাদ সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে আমার পরিজনের (বাবা-মার) কাছে যাবার অনুমতি দিবেন কি? তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দিলেন এবং তাঁর সঙ্গে একজন গোলামও পাঠালেন। এক আনসারী বললেন, তুমিই পবিত্র, হে আল্লাহ্! এ ধরনের কথা বলা আমাদের উচিত নয়। এটা তো এক বিরাট অপবাদ, তোমারই পবিত্রতা হে আল্লাহ! (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬৭)