৬৮/২৫. অধ্যায়ঃ
লি'আন [২৯] (অভিসম্পাত সহকারে শপথ)।
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ "আর যারা নিজেদের স্ত্রীদের উপর অপবাদ দেয়, কিন্তু নিজেদের ছাড়া তাদের অন্য কোন সাক্ষী না থাকে ... থেকে- "যদি সে সত্যবাদী হয়" (সূরা আন-নূর ২৪ : ৬-৯) পর্যন্ত !যদি কোন বোবা লোক লিখিতভাবে বা ইশারায় কিংবা কোন পরিচিত ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দেয়, তাহলে তার হুকুম বাকশক্তি সম্পন্ন মানুষের মতই। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয বিষয়াবলীতে ইশারা করার অনুমতি দিয়েছেন। এটা হিজাজ ও অন্যান্য স্থানের কিছু সংখ্যক আলিমেরও মত। আল্লাহ বলেছেনঃ "সে (মারইয়াম) সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলো, লোকেরা বলল, দোলনার শিশুর সঙ্গে আমরা কীভাবে কথা বলব? (সূরা মারইয়ামঃ ২৯) যাহ্হাক বলেনঃ (اِلارَمُزً) অর্থ "ইঙ্গিত এবং ইশারার মাধ্যমে।" (সূরা আলু-'ইমরানঃ ৪১)কিছু লোক বলেছেনঃ ইশারার মাধ্যমে কোন হদ্ (শর'ঈ দণ্ড) বা লি'আন নেই, আবার তাদেরই মত হলো লিখিতভাবে কিংবা কিংবা ইশারা ইঙ্গিতে ত্বলাক্ব দেয়া জায়িয আছে। অথচ ত্বলাক্ব এবং অপবাদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। যদি তারা বলেঃ কথা বলা ব্যতীত তো অপবাদ দেয়া সম্ভব নয়। তাবে তাকে বলা হবে তাহলে তো অনুরূপভাবে কথা বলা ব্যতীত ত্বলাক্ব দেয়াও না জায়িয। অন্যথায় তো ত্বলাক্ব দেয়া, অপবাদ দেয়া এমনিভাবে গোলাম আযাদ করা, কোনটাই ইশারার মাধ্যমে জায়িয হতে পারে না। অনুরূপভাবে বধির ব্যক্তিও লি'আন করতে পারে। শা'বী ও ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ যদি কেউ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে তার স্ত্রীকে বলে, তুমি ত্বলাক্বপ্রাপ্তা, তাহলে ইশারার দ্বারা স্ত্রী স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইবরাহীম বলেনঃ বোবা ব্যক্তি নিজ হাতে ত্বলাক্ব পত্র লিপিবদ্ধ করলে অবশ্যই ত্বলাক্ব হবে। হাম্মাদ বলেনঃ বোবা এবং বধির মাথার ইঙ্গিতে বললেও জায়িয হবে।[২৯] লি'আন অর্থ একে অপরকে অভিশাপ করা। শরীয়াতের পরিভাষায় এর অর্থঃ যে ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, কিন্তু এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারছে না।আল্লাহ তা'য়ালা সূরা নূরের ৬ নং আয়াত হতে ৯ নং আয়াতে উক্ত সমস্যার সমাধান উল্লেখ করেছেন। হাদীসে রসূলেও তার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। সূরা নূরের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে-(আরবি)"আর যারা তাদের স্ত্রীদের উপর (যিনার) অপবাদ আরোপ করে এবং তাদের নিকট নিজ (ব্যতীত) অন্য কোন সাক্ষী না থাকে তবে তাদের সাক্ষী এই যে, চারবার আল্লাহর নামে কসম করে বলবে নিশ্চয় আমি সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে আমার উপর আল্লাহর লানত হোক, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই। আর সেই স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম খেয়ে চারবার এ কথা বলে সাক্ষী দেয় যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলবে যে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয় তাহলে আমার উপর আল্লাহর গযব হোক। (সূরা আন-নূর ২৪ : ৬-৯)বুখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে- সাহল বিন সা'দ সা'ঈদী (রাঃ) বলেন, একদিন উমাইমির আজলানী এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে পায়, তবে কি সে তাকে হত্যা করবে? অতঃপর নিহতদের আত্মীয়রা তাকে হত্যা করবে। অথবা সে কী করবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তোমার ও তোমার স্ত্রীর (ন্যায় ব্যক্তিদের) ব্যাপারেই সূরা নূরের আয়াত নাযিল হয়েছে। যাও! তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আস। সাদ বলেন, তারা মসজিদে এসে লি'আন করল। আমি তখন লোকের সাথে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)'র নিকট ছিলাম। (রাবী বলেন) যখন তারা লি'আন হতে অবসর গ্রহণ করল ওয়াইমির বললঃ এরপর যদি আমি তাকে রাখি তাহলে ধরতে হবে যে, আমি তার উপর মিথ্যা আরোপ করছি। অতঃপর তিনি তার লি'আনকৃতা স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে বিদায় করে দিলেন।উল্লেখ্য এ হাদীসের মধ্যে সহাবী তিন তালাক এ কারণে দিয়েছিলেন যে, তিনি মনে করেছিলেন যে, মনে হয় লি'আনের পরেও তার স্ত্রীর উপর তার অধিকার রয়েছে। কিন্তু লি'আনের পরে স্বামীর স্ত্রীর উপর আর কোন অধিকার থাকে না। অতঃপর তালাক দেয়ার অধিকারও থাকে না। কারণ হাদীসের মধ্যে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমার তার উপরে কোন অধিকার নেই।"লি'আন করার পর ত্বলাক্বের প্রয়োজন হয় না। আর কোন দিন তারা একে অপরকে বিবাহ করতে পারবে না। লি'আন করার পর তাদের দুনিয়াতে কোন শাস্তি নেই। লি'আনের পর যে প্রকৃত মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হবে তার জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। এমনিভাবে তাকে দুনিয়াতে ব্যভিচারিণী ও তার সন্তানকে জারয বলা হতে বিরত থাকতে হবে। বিচারকমণ্ডলী তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিবেন। স্বামীর লি'আনের পর আর কিছু করতে হবে না। তবে উক্ত স্ত্রীলোক যদি ইদ্দত অতিক্রম করার পর অন্যত্র বিবাহ করতে চায় তাহলে বিবাহ করতে পারবে। আল্লাহ আমাদের উক্ত নোংরামি থেকে হিফাযাতে রাখুন !
সহিহ বুখারী : ৫৩০২
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৫৩০২
آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا جَبَلَةُ بْنُ سُحَيْمٍ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ يَقُوْلُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الشَّهْرُ هٰكَذَا وَهٰكَذَا وَهٰكَذَا يَعْنِي ثَلاَثِينَ ثُمَّ قَالَ وَهٰكَذَا وَهٰكَذَا وَهٰكَذَا يَعْنِي تِسْعًا وَعِشْرِينَ يَقُوْلُ مَرَّةً ثَلاَثِينَ وَمَرَّةً تِسْعًا وَعِشْرِينَ.
ইব্নু 'উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাস এত, এত এবং এত দিনে হয়, অর্থাৎ ত্রিশ দিনে। তিনি আবার বললেনঃ মাস এত, এত ও এত দিনেও হয়। অর্থাৎ ঊনত্রিশ দিনে। তিনি বলতেনঃ কখনও ত্রিশ দিনে আবার কখনও ঊনত্রিশ দিনে মাস হয়।[১৯০৮; মুসলিম ১৩/২, হাঃ ১০৮০, আহমাদ ৪৬১১] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৬)