৬৪/৩৯. অধ্যায়ঃ
খাইবার [৪৭]-এর যুদ্ধ
[৪৭] সপ্তম হিজরী, মুহাররম মাস। খাইবার ছিল সিরিয়া প্রান্তরে এক বিশাল শ্যামল ভূখণ্ডের নাম। এটা মাদীনাহ হতে তিন মঞ্জিলের (প্রায় এক শ' মাইল) পথ। ক্ষুদ্র বৃহৎ বহু দুর্গ দ্বারা এই স্থানটি সুরক্ষিত ছিল। মাদীনার বানু কানুইকা ও বানু নাযীর গোত্রের ইয়াহূদীরা এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুদাইবিয়ার সফর হতে ফিরে আসা অল্প দিন মাত্র (এক মাসেরও কম) গত হয়েছে। এমন সময় শোনা গেল যে, খাইবারের ইয়াহূদীরা মাদীনার উপর আক্রমণ চালাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে-(তবকাতে কাবীর, ইবনু সাদ, ৭ পৃষ্ঠা) । তারা আহযাবের যুদ্ধে অকৃতকার্যতার প্রতিশোধ গ্রহণ এবং নিজেদের হারানো সাময়িক মর্যাদা ও শক্তিকে গোটা রাজ্যে পুনর্বহাল করার জন্য এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তারা বানু গাফতান গোত্রের চার হাজার জঙ্গী বীর পুরুষকেও নিজেদের সাথে যুক্ত করে নিয়েছে। তারা এ চুক্তি করেছে যে, যদি মাদীনাহ বিজিত হয় তাহলে খাইবারের উৎপাদিত শস্যের অর্ধাংশ তারা বানু গাফতানকে চিরস্থায়ীভাবে দিতে থাকবে। ইতোপূর্বে আহযাবের যুদ্ধে মুসলিমদেরকে খাইবারের দুর্গ অবরোধ করতে যে কঠিন বেগ পেতে হয়েছিল তা তারা ভুলেনি। সুতরাং সবাই এ ব্যাপারে এক মত হলেন যে, এই আক্রমণেচ্ছুক শত্রুদেরকে সামনে অগ্রসর হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র ঐ সাহাবীদেরকে এই যুদ্ধে গমনের অনুমতি দান করেছিলেন যাদেরকে শুভ সংবাদ দিতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেনঃ (لقد رضى الله عن المؤ منين اذ يبا يعو نك تحت الشجرة فعلم ما فى قلو بهم (سو ر ة الفتح:١٨"আল্লাহ অবশ্যই মু'মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে তোমার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছে, তাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন।" (সূরাহ্হ্ ফাত্হ ৪৮/১৮) আর যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (وعد كم الله مغا نم كثيرة تا خذو نها (سو ر ة الفتح:٢٥"আল্লাহ তোমাদের সাথে বড় বড় বিজয়ের ও গানীমাতের ওয়াদা করেছেন যা তোমরা লাভ করবে। " (সূরাহ্ ফাত্হ ৪৮/২০) তারা সংখ্যায় চৌদ্দ'শ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে দু'শজন ছিলেন আশ্বারোহী। সেনাবাহিনীর সম্মুখ ভাগের নেতা বা সেনাপতি ছিলেন উকাশাহ্ ইবনু মুহসিন আসাদী (রাঃ) [উকাশাহ্ ইবনু মুহসিন (রাঃ) মর্যাদা সম্পন্ন সহাবীদের অন্যতম ছিলেন। তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দান করেছিলেন যে, তিনি বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন। বাদ্র, উহূদ, খন্দক এবং অন্যান্য যুদ্ধে তিনি হাযির হন। সিদ্দীকে আকবার (রাঃ)-এর খেলাফাতকালে ৪৫ বছর বয়সে তিনি শহীদ হন।] ডান দিকের সেনাবাহিনীর সরদার ছিলেন 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-(মাদারিজুন নুবুওয়াহ, ২৯০ পৃষ্ঠা।) বাম দিকের সেনাবাহিনীর নেতা অন্য একজন সাহাবী (রাঃ) ছিলেন। বিশজন মহিলাও (রাযিয়াল্লাহু আনহুম্মা) সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিলেন যারা রুগ্ন ও আহতদের দেখাশুনা ও সেবা শশ্রুষা করার জন্য সাথে এসেছিলেন। ইসলামের সেনাবাহিনী রাত্রিকালে খাইবারের বসতি সংলগ্ন জায়গায় পৌঁছে গেল। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কল্যাণময় অভ্যাস এই ছিল যে, তিনি রাত্রে যুদ্ধ শুরু করতেন না-[বুখারী, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত]। এজন্যে ইসলামের সেনাবাহিনী ময়দানে শিবির স্থাপন করে। যুদ্ধের জন্য এ স্থানটি যুদ্ধ অভিজ্ঞ ব্যক্তি হাব্বাব ইবনুল মুনযির (রাঃ) নির্বাচন করেছিলেন। এ জায়গাটি খাইবারবাসী ও বানু গাফতান গোত্রের মধ্যস্থলে ছিল। এই কৌশল অবলম্বনের উপকার এই ছিল যে, বানু গাফতান গোত্র যখন খাইবারের ইয়াহূদীদের সাহায্যের জন্য বের হয় তখন তারা ইসলামের সেনাবাহিনীকে প্রতিবন্ধকরূপে পায়। এ কারণে তারা চুপচাপ নিজেদের বাড়ীতে ফিরে যায়। রসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দেন যে, সেনাবাহিনী বড় ক্যাম্প এখানেই থাকবে এবং আক্রমণমুখী সৈন্যদের দল এই ক্যাম্প থেকে যেতে থাকবে। সৈন্যদের মাঝে তৎক্ষণাৎ মাসজিদ নির্মাণ করে নেয়া হয়। আর যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে ইসলামের তাবলীগের ধারাও জারী রাখা হয়। 'উসমান (রাঃ) ঐ ক্যাম্পের প্রধান দায়িত্বশীল নির্বাচিত হন। খাইবারের জন বসতির ডানে-বামে যে দূর্গ অবস্থিত ছিল ঐগুলি সংখ্যায় ছিল দশটি। ঐ দূর্গগুলোর মধ্যে দশ হাজার করে বীর যোদ্ধা অবস্থান করতো। খাইবারে জনবসতি ডানে-বামে দু'টি ভাগে বিভক্ত ছিল। একভাগে ছিল নিতাত দূর্গ নামে পরিচিত চারটি দূর্গ-(১) নায়িম (২) নিতাত (৩) সা'আব ইবনু মু'আয (৪) কিল'আতুয যুবায়র এবং শান্না দূর্গ নামে পরিচিত তিনটি দূর্গ-(১) শান্না (২) বার (৩) উবাই। অপর পাশে ছিল আরও তিনটি দূর্গ যা কুতাইবাহ দূর্গ নামে পরিচিত ছিল। তা হচ্ছে-(১) কামূস তাবারী (২) অতীহ (৩) সালিম বা নাবউইন হাকীক। মাহমুদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) পাঁচ দিন পর্যন্ত ক্রমাগত আক্রমণ চালাতে থাকেন। কিন্তু দূর্গ বিজিত হলো না। পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনের বর্ণনা এই যে, মাহমুদ (রাঃ) যুদ্ধ ক্ষেত্রের প্রখরতায় ক্লান্ত হয়ে দূর্গ প্রাচীরের ছায়ায় কিছু সময় বিশ্রাম গ্রহণের জন্য শুয়ে পড়েন। ইত্যবসরে কিনানাহ্ ইবনু হাকীক নামক এক ইয়াহূদী তাকে গাফেল দেখে তার মাথায় এক পাথর মেরে দেয়। এতেই তিনি শহীদ হয়ে যান। সেনাবাহিনীর পতাকা মাহমুদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)-এর ভাই মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) ধারণ করেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করতে থাকেন। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) এই মত প্রদান করেন যে, ইয়াহূদীদের খেজুর বাগানের খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হোক। কেননা, তাদের নিকট এক একটি খেজুর গাছ এক একটি ছেলের মতই প্রিয়। এই কৌশল অবলম্বন করলে দূর্গবাসীর উপর প্রভাব ফেলা যাবে। এই কৌশলের উপর কাজ শুরু হয়েই গিয়েছিল। এমন সময় আবু বাক্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে হাযির হয়ে আরয করলেনঃ "এ এলাকা নিশ্চিতরূপে মুসলিমদের হাতে বিজিত হতে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা এটাকে নিজেদের হাতে নষ্ট করবো কেন? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাক্রের (রাঃ) এই মতকে পছন্দ করলেন এবং ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)-এর নিকট খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাঠিয়ে দিলেন। সন্ধ্যার সময় মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) স্বীয় ভ্রাতার নিষ্ঠুরভাবে শহীদ হওয়ার ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে এসে বর্ণনা করেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেনঃ [আরবী]"আগামী দিন পতাকা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করা হবে (অথবা ঐ ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে) আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালবাসেন এবং তার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। "এটা এমন এক প্রশংসা ছিল, যা শুনে বড় বড় বীর পুরুষ আগামী দিনের পতাকা লাভের আশায় আশান্বিত হয়ে থাকলেন। ঐ রাত্রে সেনাবাহিনীর পাহারা দেয়ার দায়িত্ব 'উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) উপর অর্পিত হয়েছিল। তিনি চক্কর দিতে দিতে একজন ইয়াহূদীকে গ্রেফতার করেন। তৎক্ষণাৎ তিনি তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে আনয়ন করেন। ঐ সময় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাতে ছিলেন। সলাত শেষে তিনি ইয়াহূদীর সাথে কথোপকথন করেন। ইয়াহূদী বললঃ "যদি আমাকে এবং দূর্গে অবস্থানরত আমার স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিরাপত্তা দান করা হয় তাহলে আমি সামরিক গোপন বিষয়ের বহু কিছু প্রকাশ করে দিতে পারি। " ঐ ইয়াহূদীর সাথে নিরাপত্তা ওয়াদা করা হলে সে বলতে শুরু করেঃ "নিতাত দূর্গের ইয়াহূদীরা আজ রাত্রে তাদের স্ত্রী ও শিশু সন্তানদেরকে শান দূর্গে পাঠাচ্ছে এবং তাদের মালধন ও টাকা পয়সা নিতাত দূর্গের মধ্যে প্রোথিত করছে। ঐ জায়গা আমার জানা আছে। যখন মুসলিমরা নিতাত দূর্গদখল করে নিবেন তখন আমি ঐ জায়গাটি দেখিয়ে দিবো। শান্না দূর্গের নীচে ভূগর্ভে নির্মিত কুঠরিতে বহু মূল্যবান অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। যখন মুসলমানরা শান্না দূর্গ জয় করে নিবেন তখন আমি তাদের কে ভূগর্ভে নির্মিত ঐ কুঠরিটিও দেখিয়ে দিবো। "'আলী (রাঃ) নায়েম দূর্গের উপর আক্রমণের সূত্রপাত করলেন। মুকাবালার জন্যে দূর্গের বিখ্যাত সরদার মুরাহ্হাব ময়দানে বেরিয়ে এলো। সে নিজেকে হাজার বীরের সমান মনে করতো। মুরাহ্হাব তাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করে। আ'মির (রাঃ) ওটাকে ঢাল দ্বারা প্রতিহত করেন এবং মুরাহ্হাবের দেহের নিম্নভাগে আঘাত করেন। কিন্তু তার তরবারিটি যা দৈর্ঘ্যে ছোট ছিল, তার নিজেরই হাঁটুতে লেগে যায়, যার ফলে অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে যান। অতঃপর 'আলী (রাঃ) বেরিয়ে আসেন। আলী মুরতযা (রাঃ) এক হাতেই এমন জোরে তরবারীর আঘাত করেন যে, মুরাহ্হাবের শিরস্ত্রাণ কেটে পাগড়ী কর্তন করতঃ মাথাকে দু টুকরো করে গর্দান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। মুরাহ্হাবের ভাই বেরিয়ে আসলে যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাঃ) তাকে মাটিতে শুইয়ে দেন। এরপর 'আলী (রাঃ)-এর সাধারণ আক্রমণের মাধ্যমে নায়েম দূর্গটি বিজিত হয়। ঐ দিনই সাআব দূর্গটি হাব্বাব মুনযির (রাঃ) অবরোধ করে তৃতীয় দিনে জয় করে নেন। সাআব দূর্গটি জয় করার ফলে মুসলিমরা প্রচুর পরিমাণে যব, খেজুর, মাখন, রওগণ, যায়তুন এবং চর্বি লাভ করেন। এর ফলে মুসলিমদের ঐ কষ্ট দূরীভূত হয় যে কষ্ট তারা রসদের স্বল্পতার কারণে ভোগ করছিলেন। এই দূর্গ হতেই তারা বড় বড় গুপ্ত অস্ত্র লাভ করেন যার খবর ইয়াহূদী গুপ্তচর তাদের কে প্রদান করেছিল। এর পূর্বদিন নিতাত দূর্গ বিজিত হয়েছিল। এখন যুবায়ের দূর্গ, যা একটি পাহাড়ী টিলার উপর অবস্থিত ছিল এবং যুবায়েরের নামে যার নামকরণ করা হয়েছিল, ওর উপর আক্রমণ করা হয়। দু'দিন পর একজন ইয়াহূদী ইসলামের সৈন্যদের মধ্যে আসে। সে বলেঃ "এ দূর্গটি তো এক মাস পর্যন্ত চেষ্টা চালালেও জয় করতে পারবেন না। আমি একটি গোপন কথা বলে দিচ্ছি। "এ দূর্গের মাটির নিচের নালা পথে পানি এসে থাকে। যদি পানির পথ বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে বিজয় সম্ভব। " তার এ কথা শুনে মুসলিমরা পানির উপর অধিকার লাভ করে নেন। তখন দূর্গবাসী দূর্গ হতে বের হয়ে খোলা ময়দানে এসে যুদ্ধ করে এবং মুসলিমরা তাদেরকে পরাজিত করেন। তারপর উবাই দূর্গের উপর আক্রমণ করা শুরু হয়। এই দূর্গবাসীরা কঠিন ভাবে প্রতিরোধ করে। তাদের মধ্যে গাযওয়ান নামক একটি লোক ছিল। সে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে আসে। হাব্বাব (রাঃ) তার সাথে মুকাবালার জন্য এগিয়ে যান। গায্ওয়ানের বাহু কেটে যায়। সে দূর্গের দিকে পালাতে থাকে। হাব্বাব (রাঃ) তার পশ্চাদ্ধাবন করেন। সে পড়ে যায় এবং তাকে হত্যা করা হয়। দূর্গ হতে আর একজন যোদ্ধা বেরিয়ে আসে। একজন মুসলিম তার মুকাবালা করেন। কিন্তু মুসলিমটি তার হাতে শহীদ হয়ে যান। অতঃপর আবূ দাজনা (রাঃ) বেরিয়ে আসেন। তিনি এসেই তার পা কেটে দেন এবং পরে তাকে হত্যা করে ফেলেন। ইয়াহূদীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকে। আবূ দাজনা (রাঃ) সামনে অগ্রসর হন। মুসলিমরা তার সঙ্গী হন। তারা তাকবীর পাঠ করতে করতে দূর্গের প্রাচীরের উপর চড়ে যান এবং দূর্গ জয় করে নেন। দূর্গবাসীরা পালিয়ে যায়। এই দূর্গ হতে প্রচুর বকরী, কাপড় এবং আসবাবপত্র পাওয়া যায়। এবার মুসলিমরা বার দূর্গ আক্রমণ করেন। এখানে দূর্গরক্ষীরা মুসলিমদের উপর এত তীর ও পাথর বর্ষণ করেন যে, তাদের মুকাবালা করার জন্য মুসলিমদেরকেও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করতে হয় যে অস্ত্র তারা সাআব দূর্গ হতে গানীমাত স্বরূপ লাভ করেছিলেন। এই ভারী অস্ত্র দ্বারা এ দূর্গের প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে তা জয় করা হয়। (রহমাতুল লিল 'আলামীন-আল্লামা কাযী মুহাম্মাদ সুলাইমনা মানসূর পূরী)
সহিহ বুখারী : ৪২৩০
সহিহ বুখারীহাদিস নম্বর ৪২৩০
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ حَدَّثَنَا بُرَيْدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَلَغَنَا مَخْرَجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ بِالْيَمَنِ فَخَرَجْنَا مُهَاجِرِيْنَ إِلَيْهِ أَنَا وَأَخَوَانِ لِيْ أَنَا أَصْغَرُهُمْ أَحَدُهُمَا أَبُوْ بُرْدَةَ وَالْآخَرُ أَبُوْ رُهْمٍ إِمَّا قَالَ بِضْعٌ وَإِمَّا قَالَ فِيْ ثَلَاثَةٍ وَخَمْسِيْنَ أَوْ اثْنَيْنِ وَخَمْسِيْنَ رَجُلًا مِنْ قَوْمِيْ فَرَكِبْنَا سَفِيْنَةً فَأَلْقَتْنَا سَفِيْنَتُنَا إِلَى النَّجَاشِيِّ بِالْحَبَشَةِ فَوَافَقْنَا جَعْفَرَ بْنَ أَبِيْ طَالِبٍ فَأَقَمْنَا مَعَهُ حَتَّى قَدِمْنَا جَمِيْعًا فَوَافَقْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ افْتَتَحَ خَيْبَرَ وَكَانَ أُنَاسٌ مِنْ النَّاسِ يَقُوْلُوْنَ لَنَا يَعْنِيْ لِأَهْلِ السَّفِيْنَةِ سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَةِ وَدَخَلَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ وَهِيَ مِمَّنْ قَدِمَ مَعَنَا عَلَى حَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم زَائِرَةً وَقَدْ كَانَتْ هَاجَرَتْ إِلَى النَّجَاشِيِّ فِيْمَنْ هَاجَرَ فَدَخَلَ عُمَرُ عَلَى حَفْصَةَ وَأَسْمَاءُ عِنْدَهَا فَقَالَ عُمَرُ حِيْنَ رَأَى أَسْمَاءَ مَنْ هَذِهِ قَالَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ قَالَ عُمَرُ الْحَبَشِيَّةُ هَذِهِ الْبَحْرِيَّةُ هَذِهِ قَالَتْ أَسْمَاءُ نَعَمْ قَالَ سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَةِ فَنَحْنُ أَحَقُّ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْكُمْ فَغَضِبَتْ وَقَالَتْ كَلَّا وَاللهِ كُنْتُمْ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُطْعِمُ جَائِعَكُمْ وَيَعِظُ جَاهِلَكُمْ وَكُنَّا فِيْ دَارِ أَوْ فِيْ أَرْضِ الْبُعَدَاءِ الْبُغَضَاءِ بِالْحَبَشَةِ وَذَلِكَ فِي اللهِ وَفِيْ رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم وَايْمُ اللهِ لَا أَطْعَمُ طَعَامًا وَلَا أَشْرَبُ شَرَابًا حَتَّى أَذْكُرَ مَا قُلْتَ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ كُنَّا نُؤْذَى وَنُخَافُ وَسَأَذْكُرُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَسْأَلُهُ وَاللهِ لَا أَكْذِبُ وَلَا أَزِيْغُ وَلَا أَزِيْدُ عَلَيْهِ
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিজরতের খবর পৌঁছল। তাই আমি ও আমার দু'ভাই আবূ বুরদা ও আবূ রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আনেরা কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের উদ্দেশে বের হলাম। আমি ছিলাম আমার অপর দু'ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ্) নাজ্জাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে আমরা জা'ফর ইবনু আবূ তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাঁর সঙ্গেই আমরা থেকে গেলাম। অবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাইবার বিজয়ের সময় সকলে এক যোগে (মদিনায়) এসে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। এ সময়ে মুসলিমদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজে আগমনকারীদেরকে বলল, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী। আমাদের সঙ্গে আগমনকারী আসমা বিন্ত উমাইস একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী হাফসাহ্র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনিও (তাঁর স্বামী জা'ফরসহ) নাজ্জাশীর দেশে হিজরাতকারীদের সঙ্গে হিজরাত করেছিলেন। আসমা (রাঃ) হাফসাহ্র কাছেই ছিলেন। এ সময়ে 'উমার (রাঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। 'উমার (রাঃ) আসমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? হাফসাহ্ (রাঃ) বললেন, তিনি আসমা বিন্ত উমাইস (রাঃ)। 'উমার (রাঃ) বললেন, ইনি হাবশায় হিজরাতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্রগামিনী? আসমা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ! তখন 'উমার (রাঃ) বললেন, হিজরাতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আমাদের হক অধিক। এতে আসমা (রাঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, কখনো হতে পারে ন। আল্লাহ্র কসম! আপনারা তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের অবুঝ লোকদেরকে নাসীহাত করতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকার অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহুদূরে এবং সর্বদা শত্রু বেষ্টিত হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশেই ছিল আমাদের এ হিজরাত আল্লাহ্র কসম! আমি কোন খাবার খাবো না, পানিও পান করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হত, ভয় দেখানো হত। শীঘ্রই আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এসব কথা বলল এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করব। তবে আল্লাহ্র কসম! আমি মিথ্যা বলব না, পেঁচিয়ে বলব না, বাড়িয়েও কিছু বলব না। [৩১৩৬] (আ.প্র. ৩৯০৬, ই.ফা. ৩৯১০)