পরিচ্ছদঃ ৫.
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
মিশকাতুল মাসাবিহ : ১৮৭৮
মিশকাতুল মাসাবিহহাদিস নম্বর ১৮৭৮
وَعَن أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ: «إِنَّ ثَلَاثَةً فِىْ بَنِىْ إِسْرَائِيلَ أَبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمى فَأَرَادَ اللّهُ أَنْ يَبْتَلِيَهُمْ فَبَعَثَ إِلَيْهِمْ مَلَكًا فَأَتَى الْأَبْرَصَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ لَوْنٌ حَسَنٌ وَجِلْدٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّي الَّذِىْ قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ» قَالَ: «فَمَسَحَه فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُه وَأُعْطِيَ لَوْنًا حَسَنًا وَجِلْدًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْإِبِلُ - أَوْ قَالَ الْبَقَرُ شَكَّ إِسْحَقُ - إِلَّا أَنَّ الْأَبْرَصَ أَوِ الْأَقْرَعَ قَالَ أَحَدُهُمَا الْإِبِلُ وَقَالَ الْاخَرُ الْبَقَرُ قَالَ فَأُعْطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ بَارَكَ اللّهُ لَكَ فِيهَا» قَالَ: «فَأتَى الْأَقْرَعَ فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ شَعَرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَنِّىْ هذَا الَّذِىْ قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ» . قَالَ: فَمَسَحَه فَذَهَبَ عَنْهُ وَأُعْطِيَ شَعَرًا حَسَنًا قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ الْبَقَرُ فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلًا قَالَ: «بَارَكَ اللّهُ لَكَ فِيهَا» قَالَ: «فَأَتَى الْأَعْمى فَقَالَ أَيُّ شَيْءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ أَنْ يَرُدَّ اللّهُ إِلَيَّ بَصَرِىْ فَأُبْصِرَ بِهِ النَّاسَ» . قَالَ: «فَمَسَحَه فَرَدَّ اللّهُ إِلَيْهِ بَصَرَه قَالَ فَأَيُّ الْمَالِ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ الْغَنَمُ فَأُعْطِيَ شَاةً وَالِدًا فأنتج هذَانِ وَوَلَدَ هذَا قَالَ فَكَانَ لِهَذَا وَادٍ مِنِ الْإِبِلِ وَلِهذَا وَادٍ مِنَ الْبَقَرِ وَلِهذَا وَادٍ مِنَ الْغَنَمِ» . قَالَ: «ثُمَّ إِنَّه أَتَى الْأَبْرَصَ فِي صُورَتِه وَهَيْئَتِه فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ قَدِ انْقَطَعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِىْ سَفَرِىْ فَلَا بَلَاغَ لِيَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِىْ أَعْطَاكَ اللَّوْنَ الْحَسَنَ وَالْجَلْدَ الْحَسَنَ وَالْمَالَ بَعِيْرًا أَتَبَلَّغُ عَلَيْهِ فِىْ سَفَرِىْ فَقَالَ الْحُقُوْقُ كَثِيْرَةٌ فَقَالَ لَه كَأَنِّي أَعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيرًا فَأَعْطَاكَ اللّهُ مَالًا فَقَالَ إِنَّمَا وَرِثْتُ هذَا الْمَالَ كَابِرًا عَنْ كَابِرٍ فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللّهُ إِلى مَا كُنْتَ» . قَالَ: «وَأَتَى الْأَقْرَعَ فِي صُورَتِه فَقَالَ لَه مِثْلَ مَا قَالَ لِهذَا وَرَدَّ عَلَيْهِ مِثْلَ مَا رَدَّ عَلى هذَا فَقَالَ إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا فَصَيَّرَكَ اللّهُ إِلى مَا كُنْتَ» . قَالَ: «وَأَتَى الْأَعْمى فِىْ صُورَتِه وَهَيْئَتِه فَقَالَ رَجُلٌ مِسْكِينٌ وَابْنُ سَبِيلٍ انْقَطَعَتْ بِيَ الْحِبَالُ فِىْ سَفَرِىْ فَلَا بَلَاغَ لِيَ الْيَوْمَ إِلَّا بِاللّهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذِىْ رَدَّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا فِىْ سَفَرِىْ فَقَالَ قَدْ كُنْتُ أَعْمى فَرَدَّ اللّهُ إِلَيَّ بَصَرِىْ فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللّهِ لَا أَجْهَدُكَ الْيَوْمَ شَيْئًا أَخَذْتَه لِلّهِ فَقَالَ أَمْسِكْ مَالَكَ فَإِنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فَقَدْ رَضِيَ عَنْكَ وَسَخَطَ عَلى صَاحِبَيْكَ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। বানী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির একজন কুষ্ঠরোগী, একজন টাকমাথা ও তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ তিন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তিনি তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। মালাক (প্রথমে) কুষ্ঠ রোগীর কাছে এলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমার কাছে বেশি প্রিয়? সে বলল, সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর এ কুষ্ঠ রোগ থেকে আরোগ্য যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, ফেরেশতা কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত বুলালেন। তার রোগ ভালো হয়ে গেলো। তাকে উত্তম রং ও উত্তম ত্বক দান করা হলো। তারপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোন সম্পদ তোমার কাছে বেশি প্রিয়? সে ব্যক্তি জবাবে উট অথবা গরুর কথা বলল। (হাদীস বর্ণনাকারী এক ব্যক্তি) ইসহাক্বের সন্দেহ করেছেন ‘গরুর’ কথা কুষ্ঠ রোগী বলেছিল অথবা টাকমাথাওয়ালা। (মোটকথা) এদের একজন উট চেয়েছিল। আর দ্বিতীয়জন চেয়েছিল গরু। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ লোকটিকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উট দান করা হলো। তারপর মালাক দু‘আ করলেন, ‘আল্লাহ্ তোমার ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি দিন’। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর মালাক গেলেন টাকওয়ালার কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, কোন জিনিস তোমার কাছে প্রিয়তর? সে বলল, সুন্দর চুল। সেই সাথে এই টাক থেকে মুক্তি, যার জন্য লোকেরা আমায় ঘৃণা করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মালাক তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক ভালো হয়ে গেলো । তাকে সুন্দর চুল দান করা হলো। তারপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন তোমার কাছে কোন ধনসম্পদ অধিক প্রিয়? সে বলল, ‘গরু’। তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। মালাক বললেন, আল্লাহ্ তোমার ধন-সম্পদে বারাকাত দিন।রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, এরপর মালাক অন্ধের কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কোন জিনিস খুব প্রিয়? আল্লাহ্ তা‘আলা আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলে আমি তা দিয়ে লোকজনকে দেখতে পাব। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (তখন) মালাক তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ্ তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর মালাক জানতে চাইলেন, এখন তার কাছে কোন্ ধন-সম্পদ অত্যন্ত প্রিয়? সে বলল, ভেড়া-ছাগল। তাকে গর্ভবতী বকরী দান করা হল।রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন কিছুদিন পর কুষ্ঠ রোগী ও টাক ওয়ালা অনেক উট ও গাভী আর অন্ধ লোকটি অনেক ছাগলের মালিক হয়ে গেলো ।এমনকি উটে একটি ময়দান,গরুতে একটি ময়দান ও ছাগলে একটি ময়দান ভরে গেলো ।রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (এরপর ওই) মালাক আবার ওই কুষ্ঠ রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য আগের রূপ ধরে এলেন। বললেন, আমি একজন মিসকীন লোক। সফরে আমার সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে। তাই আজ (আমার গন্তব্যে) পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। আলাহর রহমাতে আমি তোমার কাছে সে আল্লাহর কসম দিয়ে একটি উট চাইছি, যিনি তোমার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর করে দিয়েছেন। তুমি আমাকে একটি উট দিলে আমি সফর শেষে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি । কুষ্ঠ রোগীটি বলল, আমার অনেক দায়-দায়িত্ব মিসকীনরূপী, অর্থাৎ সে বাহানা করে মিসকিনকে (ফেরেশতাকে) এড়িয়ে যেতে চাইল। বলল, তুমি কোন উট পাবে না। মালাক বললেন, আমি তোমাকে যেন চিনেছি, তুমি কি সেই কুষ্ঠ রোগী নও, যাকে মানুষ ঘৃণা করত? তুমি মুখাপেক্ষী ও গরীব ছিলে। আল্লাহ তোমাকে (উত্তম রং ও রূপ দিয়ে) সুস্থতা দান করেছেন, মাল দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলল, তোমার কথা ঠিক নয়। এসব অর্থ-সম্পদ আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। মালাক বলেলন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক তাহলে আল্লাহ তোমাকে তোমার সে অবস্থায় ফিরিয়ে দিন যে অবস্থায় তুমি প্রথমে ছিলে।রাসূলল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারপর মালাক টাকওয়ালার কাছে স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। আগের লোকটিকে যা বলেছিলেন তাকে তেমনটি বললেন। টাকওয়ালাও ওই জবাবই দিল যে জবাব কুষ্ঠ রোগীটি দিয়েছিল। তারপর মালাক বললেন, তুমি মিথ্যা বলে থাকলে আল্লাহ তোমাকে যেন পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (এরপর) মালাক অন্ধ লোকটির কাছে আবির্ভূত হলেন। তাকে বললেন, আমি একজন মিসকিন ও পথিক। আমার সফরের সব মালসামান শেষ। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে ওই আল্লাহর দোহাই দিয়ে একটি বকরী চাই যিনি তোমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক বকরীর মালিক করেছেন। তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। মালাকের কথা শুনেই লোকটি বলল, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তুমি যত চাও নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহ্র কসম!(তুমি যা নিবে) তা ফেরত দেয়ার মত কষ্ট আমি তোমাকে দেব না। (অন্ধের এ জবাব শুনে) মালাক বললেন, তোমার মাল তোমার কাছে থাকুক। তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। তোমাকে শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছিল (তুমি কামিয়াব হয়েছ)। আল্লাহ্ তোমার উপর সন্তুষ্ট। আর তোমার অপর দু‘ সাথীর উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।(বুখারি)[১]
[১] সহীহ : বুখারী ৩৪৬৪, মুসলিম ২৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৫২৩।