পরিচ্ছদঃ
প্রথম অনুচ্ছেদ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ ﷺ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: «إِنَّكَ تَأتِىْ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ. فَادْعُهُمْ إِلى شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللّهِ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لذَلِكَ. فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوْا لذلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَن الله قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنَ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ فِىْ فُقَرَائِهِمْ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ. فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّه لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ الله حِجَابٌ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার সময় বললেন,মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ তাদেরকে এ লক্ষ্যে দ্বীনের প্রতি আহবান করবে,এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই,আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে এই ঘোষণা দেবে যে,নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফার্য করেছেন। তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে,নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফার্য করেছেন। তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে,মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (বুখারী,মুসলিম) [১]
[১] সহীহ : বুখারী ২১৪৯৬, মুসলিম ১৯, আবূ দাঊদ ১৫৮৪, আত্ তিরমিযী ৬২৫, নাসায়ী ২৫২২, ইবনু মাজাহ্ ১৭৮৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫৭, ইরওয়া ৭৮২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২৯৮।
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّىْ مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَه صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوى بِهَا جَنْبُه وَجَبِيْنُه وَظَهْرُه كُلَمَّا بَرَدَتْ أُعِيْدَتْ لَه فِىْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُه خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتّى يُقْضى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرى سَبِيلُه إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللّهِ فَالْإِبِلُ؟ قَالَ: «وَلَاصَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّىْ مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلْبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَت لَا يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيْلًا وَاحِدًا تَطَؤُه بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّه بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُوَلَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِىْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُه خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتّى يُقْضى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرى سَبِيلُه إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّار» قيل: يَا رَسُوْلَ الله فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ بَقْرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّىْ مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطِحُه بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُه بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِىْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُه خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتّى يُقْضى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرى سَبِيلُه إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» . قِيلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ فَالْخَيْلُ؟ قَالَ: «الْخَيْلُ ثَلَاثَةٌ: هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ. فَأَمَّا الَّتِىْ هِيَ لَه وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى اهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَه وِزْرٌ. وَأَمَّا الَّتِىْ لَه سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِىْ سَبِيلِ اللّهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللّهِ فِي ظُهُورِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَه سِتْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَه أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِىْ سَبِيلِ الله لِأَهْلِ الْإِسْلَامِ فِي مَرَجٍ أَو رَوْضَةٍ فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَه عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَه عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللّهُ لَه عَدَدَ اثَارِهَا وَأَوْرَاثِهَا حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيْدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللّهُ لَه عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللّهِ فَالْحُمُرُ؟ قَالَ: مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ فِي الْحُمُرِ شَيْءٌ إِلَّا هذِهِ الْايَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ ﴿فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَهٗ - وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَهٗ﴾ [الزلزلة 99 : 7-8]. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সোনা রূপার (নিসাব পরিমাণ) মালিক হবে অথচ তার হাক্ব (যাকাত) আদায় করবে না তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন (তা দিয়ে) আগুনের পাত বানানো হবে। এগুলোকে জাহান্নামের আগুনে এমন ভাবে গরম করা হবে যেন তা আগুনেরই পাত। সে পাত দিয়ে তার পাঁজর,কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। তারপর এ পাত পৃথক করা হবে। আবার আগুনে উত্তপ্ত করে তার শরীরে লাগানো হবে। আর লাগানোর সময়ের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। (এ অবস্থা চলবে) বান্দার (জান্নাত জাহান্নামের) ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত। তারপর তাকে নেয়া হবে জান্নাত অথবা জাহান্নামে। সহাবীগণ আরয করলেন,হে আল্লাহর রসূল! উটের বিষয়টি (যাকাত না দেবার পরিণাম) কি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উটের মালিক যদি এর হাক্ব (যাকাত) আদায় না করে- যেদিন উটকে পানি খাওয়ানো হবে সেদিন তাকে দুহানোও তার একটা হাক্ব - ক্বিয়ামাতের দিন ওই ব্যক্তিকে সমতল ভূমিতে উটের সামনে মুখের উপর উপুড় করে ফেলা হবে। তার সবগুলো উট গুণে গুণে (আনা হবে) মোটা তাজা একটি বাচ্চাও কম হবে না। এসব উট মালিককে পায়ের নিচে ফেলে পিষতে থাকবে, দাঁত দিয়ে কামড়াবে। এ উটগুলো চলে গেলে,আবার আর একদল উট আসবে। যে দিন এমন ঘটবে,সে দিনের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এমনকি বান্দার হিসাব-নিকাশ শেষ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে। সহাবীগণ আরয করলেন,হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের যাকাত আদায় না করলে (মালিকদের) কি অবস্থা হবে? তিনি বললেন,যে ব্যক্তি গরু-ছাগলের মালিক হয়ে এর হাক্ব (যাকাত) আদায় করে না ক্বিয়ামাতের দিন তাকে সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলা হবে। তার সব গরু ও ছাগলকে (ওখানে আনা হবে) একটুও কম-বেশি হবে না। গরু-ছাগলের শিং বাঁকা কিংবা ভঙ্গ হবে না। শিং ছাড়াও কোনটা হবে না। এসব গরু ছাগল শিং দিয়ে মালিককে গুতো মারতে থাকবে,খুর দিয়ে পিষবে। এভাবে একদলের পর আর একদল আসবে। এ সময়ের মেয়াদও হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এর মধ্যে বান্দার হিসাব-নিকাশ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামে তার গন্তব্য দেখতে পাবে।সহাবীগণ আরয করলেন,হে আল্লাহর রসূল! ঘোড়ার অবস্থা কি হবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঘোড়া তিন প্রকারের। প্রথমতঃ যা মানুষের জন্য গুনাহের কারণ হয়। দ্বিতীয়তঃ যা মানুষের জন্য পর্দা। আর তৃতীয়তঃ মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ।গুনাহের কারণ ঘোড়া হলো ঐ মালিকের,যেগুলোকে সে মুসলিমদের ওপর গৌরব,অহংকার ও শৌর্যবীর্য দেখাবার জন্য পালন করে। আর যেগুলো মালিক-এর জন্য পর্দা হবে,সেগুলো ঐ ঘোড়া,যে সবের ঘোড়ার মালিক আল্লাহর পথে লালন পালন করে। সেগুলোর পিঠ ও গর্দানের ব্যাপারে আল্লাহর হাক্ব ভুলে যায় না। মানুষের জন্য সাওয়াবের কারণ ঘোড়া ব্যক্তির যে মালিক আল্লাহর পথের মুসলিমদের জন্য তা’ পালে। এদেরকে সবুজ মাঠে রাখে। এসব ঘোড়া যখন আসে ও চারণ ভুমিতে ঘাস খায়,তখন ওই (ঘাসের সংখ্যার সমান) সাওয়াব তার মালিক-এর জন্য লিখা হয়। এমনকি এদের গোবর ও পেশাবের পরিমাণও তার জন্য সাওয়াব হিসেবে লিখা হয়। সেই ঘোড়া রশি ছিঁড়ে যদি এক বা দু’টি ময়দান দৌড়ে ফিরে,তখন আল্লাহ তা’য়ালা এদের কদমের চিহ্ন ও গোবরের (যা দৌড়াবার সময় করে) সমান সাওয়াব তার জন্য লিখে দেন। এসব ঘোড়াকে পানি পান করাবার জন্য নদীর কাছে নেয়া হয়,আর নদী হতে পানি পান করে,তাহলে আল্লাহ তা’আলা ঘোড়াগুলোর পান করা পানির পরিমাণ সাওয়াব ওই ব্যক্তির জন্য লিখে দেন। যদি মালিক-এর পানি পান করাবার ইচ্ছা নাও থাকে। সহাবীগণ আরয করলেন,হে আল্লাহর রসূল! গাধার ব্যাপারে কি হুকুম? তিনি বললেন গাধার ব্যাপারে আমার ওপর কোন হুকুম নাযিল হয়নি। সকল নেক কাজের ব্যাপারে এ আয়াতটিই যথেষ্ট “যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ নেক ‘আমাল করবে তা সে দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ বদ ‘আমাল করবে তাও সে দেখতে পাবে”- (সূরাহ্ আয্ যিলযাল ৯৯ : ৭-৮)।[১]
[১] সহীহ : মুসলিম ৯৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৪১৮, সহীহ আত্ তারগীব ৭৫৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭২৯।