পরিচ্ছদঃ

প্রথম অনুচ্ছেদ

إِيْمَانِ (ঈমা-ন)-এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা, সত্যায়ন করা ইত্যাদি। এর শার‘ঈ অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীদের মতে : নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় বিস্তারিত এবং সংক্ষিপ্ত যে বিধানাবলী নিয়ে এসেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন দলীল না থাকলেও চূড়ান্তভাবে তাকে সত্যায়ন করা। ঈমানটি তাদের নিকট যৌগিক কোন বিষয় নয় বরং এটি (بَسِيْطٌ) বাসীত্ব (একক) যা পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে কম-বেশি গ্রহণ করে না। (অর্থাৎ- ঈমান কোন সৎকাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় না এবং পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায় না)। মুরজিয়াহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করা। জিহবার স্বীকৃতি ঈমানের কোন রুকনও না, শর্তও না। ফলে হানাফীদের মতো তারাও ‘আমালকে ঈমানের প্রকৃত অর্থের বহির্ভূত গণ্য করেছে এবং ঈমানের আংশিকতাকে অস্বীকার করেছে। তবে হানাফীরা এর (‘আমালের) প্রতি গুরুত্বারোপ, এর প্রতি উদ্বুদ্ধ এবং ঈমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটিকে একটি কারণ হিসেবে গণ্য করলেও মুরজিয়ারা এটিকে সমূলে ধ্বংস করে বলেছে ‘আমালের কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করলেই পরিত্রাণ মিলবে তাতে যে যত অপরাধই করুক না কেন। কার্রামিয়্যাহ্ সম্প্রদায়ের মতে : ঈমান হলো শুধুমাত্র উচ্চারণ করা। ফলে তাদের নিকট নাজাতের জন্য মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট, চাই সত্যায়ন পাওয়া যাক বা না যাক।ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদসহ জমহূর ‘উলামাগণের মতে : ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস করা, জিহবায় উচ্চারণ করা এবং রুকনসমূহের প্রতি ‘আমাল করা। তাদের নিকট ঈমান একটি যৌগিক বিষয় যা কমে এবং বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। এটিই হলো সর্বাধিক সঠিক অভিমত। মু‘তাযিলাহ্ এবং খারিজীগণের নিকট ঈমানের সংজ্ঞা জমহূরের মতই তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য হলো ঈমানের সকল অংশকে জমহূর সমান হিসেবে গণ্য করেননি। ফলে তাদের নিকট ‘আমালসমূহ যেমন সলাতের ওয়াজিব বিষয়গুলো তার রুকনের মতো নয়।অতএব ‘আমাল না থাকলে কোন ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডী থেকে বের না হয়ে তার মধ্যেই থাকবে এবং ‘আমাল পরিত্যাগকারী অনুরূপ কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে জড়িত ব্যক্তি ফাসিক্ব-মু’মিন থাকবে সে কাফির হয়ে যাবে না। পক্ষান্তরে কারো মাঝে যদি শুধু তাসদীক না পাওয়া যায় তাহলে সে মুনাফিক্ব আর ইক্বরার বা স্বীকৃতি না পাওয়া গেলে কাফির। কিন্তু যদি শুধুমাত্র ‘আমালগত ত্রুটি থাকে তাহলে সে ফাসিক্ব যে জাহান্নামে চিরদিন অবস্থান করা থেকে পরিত্রাণ পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর খারিজী এবং মু‘তাজিলীরা যৌগিক ঈমানের সকল অংশকে সমান হিসেবে গণ্য করে এভাবে যে, ঈমানের কিছু অংশ বাদ পড়লে সমস্তটাই বাদ বলে পরিগণিত হবে। আর ‘আমালটি তাদের নিকট ঈমানের একটি রুকন যেমনটি সলাতের বিভিন্ন রুকন রয়েছে। তাই ‘আমাল পরিত্যাগকারী তাদের নিকট ঈমান বহির্ভূত লোক। খারিজীদের মতে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি অনুরূপ ‘আমাল পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির যে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে। আর মু‘তাজিলাদের মতে সে মু’মিনও নয় কাফিরও নয় বরং তাকে ফাসিক্ব বলা হবে যে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।

মিশকাতুল মাসাবিহহাদিস নম্বর ১৭

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : إِنَّ وَفْدَ عَبْدِ الْقَيْسِ لَمَّا أَتَوْا النَّبِيَّ ﷺ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «مَنِ الْقَوْمُ؟­ أَوْ مَنِ الْوَفْدُ؟­» قَالُوا: رَبِيعَةُ قَالَ : مَرْحَبًا بِالْقَوْمِ ­ أَوْ : بِالْوَفْدِ ­ غَيْرَ خَزَايَا وَلَا نَدَامى قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ! إِنَّا لَا نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ اِلَّا فِي الشَّهْرِ الْحَرَامِ وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هذَا الْحَيُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ نُخْبِرْ بِه مَنْ وَرَاءَنَا وَنَدْخُلْ بِهِ الْجَنَّةَ وَسَأَلُوهُ عَنِ الْأَشْرِبَةِ فَأَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ وَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ :أَمَرَهُمْ بِالْإِيمَانِ بِاللهِ وَحْدَه قَالَ : أَتَدْرُونَ مَا الْإِيمَانُ بِاللهِ وَحْدَه؟ قَالُوا اللّهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ قَالَ : شَهَادَةُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامُ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ وَصِيَامُ رَمَضَانَ وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَوَنَهَاهُمْ عَنْ أَرْبَعٍ عَنْ الْحَنْتَمِ وَالدُّبَّاءِ وَالنَّقِيرِ وَالْمُزَفَّتِ وَرُبَّمَا قَالَ الْمُقَيَّرِ وَقَالَ : احْفَظُوهُنَّ وَأَخْبِرُوا بِهِنَّ مَنْ وَرَاءَكُمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَلَفظه للْبُخَارِيُّ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আবদুল ক্বায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে পৌঁছলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কোন গোত্রের লোক (বা কোন প্রতিনিধি দল? লোকেরা জবাব দিল, এরা রবী‘আহ্ গোত্রের লোক। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, গোত্র বা প্রতিনিধি দলকে মুবারকবাদ! অপমান ও অনুতাপবিহীন অবস্থায় আগত প্রতিনিধি দলকে মুবারাকবাদ! প্রতিনিধি দল আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার ও আমাদের মধ্যে কাফির যুদ্ধবাজ মুযার বংশ অন্তরায়স্বরূপ থাকায় হারাম মাস ব্যতীত অন্য মাসে আপনার নিকট আসতে পারি না। তাই আপনি হাক্ব ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী এমন কিছু পরিষ্কার নির্দেশ দিন যা আমরা মেনে চলব এবং যাদেরকে দেশে রেখে এসেছি তাদেরকে গিয়ে বলতে পারব। যা দ্বারা আমরা (সহজে) জান্নাতে যেতে পারি। এর সাথে তারা (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে) পানীয় বস্তু (পান পাত্র) সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ দিলেন আর চারটি কাজ হতে নিষেধ করলেন। (প্রথমে) তিনি তাদেরকে এক আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনার আদেশ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি, তা কি তোমরা জান? তারা জবাবে বলল, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলই অধিক ভাল জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রসূল- এ সাক্ষ্য দেয়া। (২) সলাত ক্বায়িম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। এবং (৪) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করা। এরপর (চারটি কাজ ছাড়াও) গনীমতের (জিহাদলব্ধ মালের) ‘খুমুস’ এক-পঞ্চমাংশ দেয়ার হুকুম দিলেন। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি (মদের) পানপাত্র ব্যবহার নিষেধ করলেন। এগুলো হলঃ হানতাম (নিকেল করা সবুজ পাত্র), দুব্বা (কদুর খোল দ্বারা প্রস্ততকৃত পাত্রবিশেষ) নাকীর (গাছের বা কাঠের পাত্রবিশেষ), মুয়াফফাত (তৈলাক্ত পাত্রবিশেষ)। (এ জাতীয় পাত্রে তৎকালীন সময়ে মদ ব্যবহার করা হত) তিনি আরো বললেন, এ সকল কথা ভালভাবে স্মরণ রাখবে। যাদের দেশ ছেড়ে এসেছো তাদেরকেও বলবে। [১]

[১] সহীহ : বুখারী ৫৩, মুসলিম ১৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২, আহমাদ ২০২০, সহীহ আল জামি‘ ১০; শব্দ বুখারীর।نَدَامى (নাদা-মা-) শব্দটি نَدْمَانُ (নাদ্মা-ন) শব্দের বহুবচন যা نَادِمٌ (না-দিম) ইস্মে ফায়িলের অর্থে তথা অনুতপ্ত, অনুশোচিত, লজ্জিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ- তারা আমাদের নিকট আসায় ক্ষতিগ্রস্থ, লজ্জিত হয়নি।এ হাদীসে দৃশ্যত কিছু জটিলতা বা সমস্যা রয়েছে। (যদিও মূলত কোন সমস্যা নেই) তা হলো : গণনায় পাঁচটি বিষয় আদেশের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে অথচ শুরুতে চারটির কথা বলা হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান হলো বাগ্মীদের একটি রীতি যে, যখন কোন বাক্যকে কোন বিশেষ উদ্দেশে স্থাপন করা বা নিয়ে আসা হয় তখন তারা তার বর্ণনা প্রসঙ্গকে এমন করে দেন যেন তা পেশকৃত বিষয়। অতএব, এখানে শাহাদাতায়নের উল্লেখটা উদ্দেশিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়, কেননা রসূলের নিকট আগমনকারী কওমটি শাহাদাত স্বীকৃতিদানকারী মু’মিন ছিল যা তাদের উক্তি (اَللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ) থেকে প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও বুখারীর একটি বর্ণনা তথা (اَمَرَهُمْ بِأَرْبَعٍ وَنَهَاهُمْ بِأَرْبِعٍ أَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ، وَأَتُوْا الذَّكَاةَ وَصُوْمُوْا رَمَضَانَ وَأَعْطُوْا خُمُسَ مَا غَنِمْتُمْ.....) -টিও তা প্রমাণ করে। আর বুখারীর এ বর্ণনার মাধ্যমে উল্লেখিত সন্দেহটির বা সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়। (মিরকাত)حَنْتَمٌ (হান্তাম) অর্থ সবুজ কলম যা মাটি এবং চামড়া দ্বারা তৈরি করা হয়।اَلدُّبَّاءُ (আদ্ দুব্বা-উ) অর্থ লাউ দ্বারা তৈরিকৃত পাত্র।اَلنَّقِيْرُ (আন্ নাক্বীর) অর্থ গাছের দ-মূল কুঁড়ে প্রস্ত্ততকৃত পাত্র যাতে নাবীয প্রস্ত্তত করা হয়।اَلْمُزَفَّتُ (আল্ মুযাফ্ফাত) অর্থ আলকাতরার প্রলেপ দ্বারা প্রস্ত্ততকৃত পাত্র।

সেটিংস

ফন্ট সেটিংস

আরবি ফন্ট ফেস

আরবি ফন্ট সাইজ

২৪

অনুবাদ ফন্ট সাইজ

১৮

আল হাদিস অ্যাপ ডাউনলোড করুন

App Banner

ইসলামের জ্ঞান প্রচারে সহায়ক হোন

আপনার নিয়মিত সহায়তা আমাদের দ্বীনি ভাই-বোনের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে সাহয্য করবে। আমাদের মিশনে আপনিও অংশ নিন এবং বড় পরিবর্তনের অংশীদার হোন।

সাপোর্ট করুন