পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজ : ২২
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজহাদিস নম্বর ২২
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
তোমরা আমার সত্তা দ্বারা অসীলা ধর, কারণ আমার সত্তা আল্লাহর কাছে মহান।এটির কোন ভিত্তি নেই।এ ব্যাপারে ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) “আল-কা‘য়েদাতুল জালীলাহ” গ্রন্থে আলোকপাত করেছেন।কোন সন্দেহ নেই যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সত্তা আল্লাহর নিকট মহা সম্মানিত। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলেনঃ {আরবী} অর্থঃ “তিনি আল্লাহর নিকট বড়ই সম্মানিত ছিলেন।” (সূরা আহযাবঃ ৬৯)। আমরা সকলে জ্ঞাত আছি যে, আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (আঃ)-এর চাইতেও উত্তম। কিন্তু এটি এক বিষয় আর তাঁর সত্তার অসীলায় কিছু চাওয়া অন্য বিষয়। দু’টি বিষয়কে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ তাঁর সত্তার অসীলায় যে ব্যক্তি কিছু পাবার ইচ্ছা পোষণ করে, সে এটা কামনা করে যে তাঁর দো‘আ কবূল হয়। এ বিশ্বাস (যে তিনি মৃত্যুর পরে কারো জন্য দো‘আ করতে সক্ষম) সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজন সহীহ দলীলের। কারণ এটি সম্পূর্ণ গায়েবী ব্যাপার। তার পরেও এটি এমন এক বিষয় যে তা ব্যক্তির বুদ্ধি দ্বারা জানা এবং তা সাব্যস্ত করাও সম্ভব নয়।আমরা দলীল দেখতে গেলে পাচ্ছি যে, অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দু’ভাগে বিভক্ত, সহীহ ও য‘ঈফ। যদি সহীহ হাদীসগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব যে, সেগুলোতে তাঁর সত্তা দ্বারা অসীলা গ্রহণকারীর কোন দলীল মিলছে না। ইসতিস্কার সলাতে তাঁর মাধ্যমে অসীলা করা, অন্ধ ব্যক্তির তাঁর মাধ্যমে অসীলা করা, এসব অসীলা ছিল তাঁর জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর দো‘আর দ্বারা, তাঁর সত্তার দ্বারা নয়। অতএব যখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দো‘আর দ্বারা অসীলা করা সম্ভব নয়, তখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সত্তার দ্বারা অসীলা করাও সম্ভব নয় এবং তা জায়েযও নয়।যদি তা জায়েয থাকত তাহলে সাহাবীগণ উমার (রাঃ)-এর যুগে ইসতিস্কার সলাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতেন না। বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসীলায় পানি প্রার্থনা করতেন। কারণ তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁরা (সাহাবীগণ) উমার (রাঃ)-র যুগে আব্বাস (রাঃ)-এর দো‘আকে মাধ্যম হিসাবে ধরে তার দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন। এ কারণে যে, তাঁরা জানতেন কোন অসীলাটি বৈধ আর কোনটি বৈধ নয়। অর্থাৎ জীবিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির দো‘আ বা তার সত্তার অসীলা ধরা বৈধ নয়। সে যে কেউ হোক না কেন।যে অন্ধ ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অসীলা ধরেছিলেন, তার দো‘আর ভাষা ছিল এরূপ ‘(আরবী)’ হে আল্লাহ তুমি তাঁর শাফা‘আতকে (দো‘আকে) আমার ব্যাপারে কবূল কর। অন্ধ ব্যক্তির হাদীসের বিষয় দো‘আকে ঘিরেই। বিদ‘আতী অসীলার সাথে তার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। এ কারণে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এ ধরনের অসীলাকে অস্বীকার করে বলেছেনঃ (আরবী) ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো মাধ্যমে চাওয়াকে আমি ঘৃণা করি।’ এমনটিই এসেছে “দুররুল মুখতার” সহ হানাফী মাযহাবের অন্যান্য গ্রন্থে।কাওসারী যে বলেছেন ‘ইমাম শাফে‘ঈ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর অসীলায় তাঁর কবরের নিকট বরকত গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে চেয়েছেন।’ এ মর্মে বর্ণিত কথাটি বাতিল। কারণ তার সূত্রে উমার বিন ইসহাক নামে এক ব্যক্তি আছেন, যার সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তিনি মাজহূল [অপরিচিত]। এ জন্য ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন যে, এটি ইমাম শাফে‘ঈর উপর মিথ্যারোপ।ইবনু তাইমিয়্যাহ “ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম” গ্রন্থে (১৬৫) বলেনঃ এটি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ... কারণ ইমাম শাফে‘ঈ হিজাজ, ইয়ামান, শাম, ইরাক, মিসর ভ্রমনকালে বহু নাবী, সাহাবী ও তাবে‘ঈগণের কবর দেখেছেন যাঁরা ইমাম আবূ হানীফা ও তার ন্যায় আলেমগণের চেয়ে বহুগুনে উত্তম, তা সত্ত্বেও তিনি তাদের কারো নিকট দু‘আ না করে শুধু আবূ হানীফার নিকট দু‘আ করলেন? এ ছাড়াও ইমাম আবূ হানীফার কোন শিষ্য থেকেও এরূপ প্রমাণিত হয়নি...।আর দ্বিতীয় প্রকার অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দুর্বল, যেগুলো বিদ‘আতী অসীলার প্রমাণ বহন করে, সেগুলো সম্পর্কেও কিছু সতর্কতামূলক আলোচনা হওয়া দরকার।