পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
الدين هو العقل، ومن لا دين له لا عقل له
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
দ্বীন [ধর্ম] হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন [ধর্ম] নেই তার কোন বিবেক নেই।হাদীসটি বাতিল।হাদীসটি নাসাঈ “আল-কুনা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার থেকে দুলাবী “আল-কুনা ওয়াল আসমা” গ্রন্থে (২/১০৪) আবূ মালেক বিশ্র ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে... প্রথম বাক্যটি ছাড়া মারফু’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।ইমাম নাসাঈ হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ (আরবী) এ হাদীসটি বাতিল, মুনকার।আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ বিশর নামক বর্ণনাকারী। কারণ আযদী বলেন : তিনি মাজহূল [অপরিচিত] বর্ণনাকারী। ইমাম যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” এবং ইবনু হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তার কথাকে সমর্থন করেছেন।হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ ১০০/১-১০৪/১) দাউদ ইবনু্ল মুহাব্বার সূত্রে বিবেকের ফযীলত সম্পর্কে ত্রিশের অধিক হাদীস উল্লেখ করেছেন।হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ সে সবগুলোই জাল (বানোয়াট)।সেগুলোর একটি হচ্ছে এ হাদীসটি যেমনটি সুয়ূতী তার “যায়লুল-লাআলিল মাসনূ’য়াতি ফিল আহাদীছিল মাওযূ’আত” গ্রন্থে (পৃ : ৪-১০) উল্লেখ করেছেন : তার থেকে হাদীসটি আল্লামা মুহাম্মাদ তাহির আল-হিন্দী মাওযূ’ গ্রন্থ “তাযকিরাতুল মাওযূ’আত”-এর মধ্যে (পৃ: ২৯-৩০) উল্লেখ করেছেন।দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সম্পর্কে যাহাবী বলেন :ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল বলেন : হাদীস কী তিনি তাই জানতেন না। আবূ হাতিম বলেন : তিনি যাহেবুল হাদীস [হাদীসকে বিতাড়নকারী], নির্ভরযোগ্য নন। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি]। আব্দুল গনী ইবনু সা’ঈদ দারাকুতনী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ মায়সারা ইবনু আব্দি রাব্বিহি “আল-আকল” নামক গ্রন্থ রচনা করেন আর তার নিকট হতে দাউদ ইবনুল মুহাব্বার তা চুরি করেন। অতঃপর তিনি তার (মায়সারার) সনদের পরিবর্তে নিজের বানোয়াট সনদ জড়িয়ে দেন। এরপর তা চুরি করেন আব্দুল আযীয ইবনু আবূ রাজা এবং সুলায়মান ইবনু ঈসা সাজযী।মোটকথা বিবেকের ফযীলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস নেই। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস হয় দুর্বল, না হয় জাল (বানোয়াট)।আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম “আল-মানার” গ্রন্থে বলেনঃ (পৃ: ২৫) (আরবী) ‘বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা।’
(من لم تنهه صلاته عن الفحشاء والمنكر لم يزدد من الله إلا بعدا) .باطل.
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তির সলাত তাকে তার নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত করে না, আল্লাহর নিকট হতে তার শুধু দূরত্বই বৃদ্ধি পায়।হাদীসটি বাতিল।যদিও হাদীসটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তবুও সেটি সনদ এবং ভাষা উভয় দিক দিয়েই সহীহ নয়।সনদ সহীহ না হওয়ার কারণঃ হাদীসটি তাবারানী “আল মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৬/২), কাযা’ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/৪৩) এবং ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা করেছেন, যেমনটি “তাফসীর ইবনু কাসীর” গ্রন্থে (২/৪১৪) এবং “আল কাওয়াকাবুদ দুরারী” গ্রন্থে (৮৩/২/১) লাইস সূত্রে তাউস-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।এ লাইসের কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বল –তিনি হচ্ছেন লাইস ইবনু আবী সুলাইম- কারণ তিনি দুর্বল বর্ণনাকারী।হাফিয ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে তার জীবনী লিখতে গিয়ে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, কিন্তু শেষ জীবনে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। তার হাদীস পৃথক করা যেত না, ফলে তার হাদীস মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]।হায়সামী “মাজমা’উয যাওয়াইদ” গ্রন্থে তার (১/১৩৪) একই কারণ উল্লেখ করেছেন। তার শাইখ হাফিয আল-ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/১৪৩) বলেছেন : হাদীসটির সনদ লাইয়েনুন (দুর্বল)।আমি (আলবানী) বলছি : হাদীসটি ইবনু জারীর তার “তাফসীর” গ্রন্থে (২০/৯২) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত এটিই সহীহ্ অর্থাৎ সাহাবীর কথা। যদিও তার সনদে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যার নাম উল্লেখ করা হয়নি।ইমাম আহমাদ “কিতাবুল যুহুদ” গ্রন্থে (পৃ: ১৫৯) আর তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে হাদীসটি ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে মওকূফ হিসাবে ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন।হাফিয ইরাকী বলেন : তার সনদটি সহীহ্। অতএব হাদীসটি মওকূফ।ইবনুল আ’রাবী তার “আল-মু’জাম” গ্রন্থে (১/১৯৩) হাদীসটি হাসান বাসরী হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাসান হচ্ছেন মুদাল্লিস।হাফিয যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে বলেনঃতিনি বেশী বেশী তাদলীস করতেন। তিনি (আরবী) আন শব্দে বর্ণনা করলে তার হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করাটা দুর্বল হয়ে যায়। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে তার শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি। এ কারণে মুহাদ্দিসগণ আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে তার হাদীসকে মুনকাতি’ হিসাবে গণ্য করেছেন।তবে হাসান বাসরীর নিজের কথা হিসাবে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন এমন কথা বলেননি। ইমাম আহমাদ “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (পৃ:২৬৪) এভাবেই বর্ণনা করেছেন আর তার সনদটি সহীহ। অনুরূপ ভাবে ইবনু জারীরও বিভিন্ন সূত্রে তার থেকেই (২০/৯২) বর্ণনা করেছেন এবং এটিই সঠিক।“মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/৪৩) মিকদাম ইবনু দাঊদ সূত্রে হাসান বাসরী হতে মারফূ’ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু এই মিকদাম সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।মোটকথা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত এটির সনদ সহীহ নয়। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এবং হাসান বাসরী হতে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও বর্ণনা করা হয়েছে।এ কারণেই ইবনু তাইমিয়্যা “কিতাবুল ঈমান” গ্রন্থে (পৃঃ ১২) মওকূফ হিসাবেই উল্লেখ করেছেন।ইবনু উরওয়াহ্ “আল-কাওয়াকিব” গ্রন্থে বলেছেন : এটিই বেশী সঠিক।ভাষার দিক দিয়ে সহীহ না হওয়ার কারণঃহাদীসটি যে ব্যক্তি সলাতের শর্ত এবং আরকান সমূহের দিকে যত্নবান হয়ে যথাযথভাবে আদায় করে সে ব্যক্তিকেও সম্পৃক্ত করে। অথচ শারী’য়াত তার সলাতকে বিশুদ্ধ বলে রায় প্রদান করেছে। যদিও এ মুসল্লী কোন গুনাহের সাথে জড়িত থাকে। অতএব কীভাবে এ সলাতের কারণে তার সাথে আল্লাহর দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে? এটি বিবেক বর্জিত কথা। শারী’য়াত এ কথার সাক্ষ্য দেয় না। হাদীসটি মওকূফ হওয়ার ক্ষেত্রেও সলাত দ্বারা এমন সলাতকে বুঝানো হয়েছে যে সলাতে এমন কোন অংশ ছেড়ে দেয়া হয়েছে যা ছেড়ে দিলে সলাত শুদ্ধ হয় না।আল্লাহ (আরবী) বলেনঃ (আরবী) অর্থঃ ‘নিশ্চয় সলাত নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত রাখে।’ (আনকাবুতঃ ৪৫)।রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অমুক ব্যক্তি সারা রাত ধরে ইবাদাত করে অতঃপর যখন সকাল হয় তখন সে চুরি করে। উত্তরে তিনি উক্ত আয়াতের গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন :‘তুমি যা বলছ তা থেকে অচিরেই তাকে তার সলাত বিরত করবে অথবা বলেন : তাকে তার সলাত বাধা প্রদান করবে।’হাদীসটি ইমাম আহমাদ, বায্যার, তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (২/৪৩০), বাগাবী “হাদীসু আলী ইবনুল যা’আদ” গ্রন্থে (৯/৯৭/১) এবং আবূ বাক্র কালাবাযী “মিফতাহু মা’য়ানীল আসার” গ্রন্থে (৩১/১/৬৯/১) সহীহ্ সনদে আবূ হুরাইরাহ্ (আরবী) হতে বর্ণনা করেছেন।লক্ষ্য করুন! রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ দিয়েছেন যে, এ ব্যক্তি তার সলাতের কারণে চুরি করা থেকে বিরত থাকবে (যদি তার সলাতটি যথাযথ ভাবে হয়)। তিনি বলেননি যে, তার দূরত্ব বৃদ্ধি করবে, যদিও সে তার চুরি হতে বিরত হয়নি। এ কারণেই আব্দুল হক ইশবীলী “আত-তাহাজ্জুদ” গ্রন্থে (কাফ- ১/২৪) বলেন :সত্যিকার অর্থে যে ব্যক্তি সলাত আদায় করবে এবং সলাতকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তার সলাত তাকে হারামে জড়িত হওয়া এবং হারামে পতিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে।অতএব প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাদীসটি সনদ এবং ভাষা উভয় দিক দিয়েই দুর্বল।এছাড়া আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইয্যুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালাম ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আসারটি উল্লেখ করে বলেছেন : এ ধরনের হাদীসকে ভীতি প্রদর্শনমূলক হাদীস হিসাবে গণ্য করা বাঞ্ছনীয়।এ হাদীসকে তার বাহ্যিক অর্থে নেয়া সঠিক হবে না। কারণ তার বাহ্যিক অর্থ সহীহ্ হাদীসে যা সাব্যস্ত হয়েছে তার বিপরীত অর্থ বহন করছে। সহীহ্ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সলাত গুনাহ্ সমূহকে মোচন করে, অতএব আল্লাহ্ সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি করলে সলাত কীভাবে গুনাহ্ মোচনকারী হতে পারে?আমি (আলবানী) বলছিঃ এরূপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে তবে মওকূফ হিসাবে গণ্য করে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসাবে নয়।উপরের আলোচনার সাক্ষ্য দেয় বুখারীতে বর্ণিত হাদীস। এক ব্যক্তি কোন মহিলাকে চুমু দিয়ে দেয়। অতঃপর সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ঘটনাটি উল্লেখ করলে আল্লাহ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেন : (আরবী) “নিঃসন্দেহে সৎ কর্মগুলো অসৎ কর্মগুলোকে মুছে ফেলে” (হুদ:১১৪)হাফিয যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে (৩/২৯৩) ইবনুয যুনায়েদ হতে বর্ণনা করে (আলোচ্য) হাদীসটি সম্পর্কে বলেন : এটি মিথ্যা।