পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজ : ৮৩
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজহাদিস নম্বর ৮৩
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
তাসবীহ পাঠের যন্ত্র দ্বারা তাসবীহ পাঠক কতইনা ভাল ব্যক্তি। নিশ্চয় সর্বোত্তম বস্তু সেটিই যমীনে যার উপর সাজদাহ করা হয় এবং যমীন যা উৎপাদন করে।হাদীসটি জাল।হাদীসটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে (৪/৯৮) বর্ণনা করেছেন।এছাড়া সুয়ূতী তার “আল-মিনহা ফিস সিবহা” গ্রন্থে (২/১৪১) এবং তার থেকে শাওকানী “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে (২/১৬৬-১৬৭) উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তারা উভয়ে (কোন হুকুম না লাগিয়ে) চুপ থেকেছেন।আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদে রয়েছে একগুচ্ছ অন্ধকার যার একটির চেয়ে অন্যটি বড়। তার অধিকাংশ বর্ণনাকারী মাজহূল, এমনকি তাদের কেউ কেউ মিথ্যার দোষে দোষী।এটির সনদে উম্মুল হাসান বিনতু জা’ফার ইবনুল হাসান রয়েছেন। কে তার জীবনী রচনা করেছেন পাচ্ছিনা।সনদে আরো রয়েছেন, মুহাম্মদ ইবনু হারুন ইবনে ঈসা ইবনে মানসূর আল-হাসেমী, তিনি হাদীস জাল করতেন।ইবনু আসাকির “তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে বলেনঃ (আরবী) ‘তিনি হাদীস জাল করতেন।’ অতঃপর তিনি তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ এটি তার জালকৃত হাদীস।অনুরূপ ভাবে খাতীব বাগদাদীও তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। তিনি (৭/৪০৩) বলেনঃ এ হাশেমীকে ইবনু বোরাই নামে চেনা যায়। তিনি যাহেবুল হাদীস। তাকে হাদীস জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে।সনদে আরো রয়েছেন আব্দুস সামাদ ইবনু মূসা, তিনি হাসেমী। যাহাবী “আল-মিযান” গ্রন্থে খাতীব বাগদাদীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।অতঃপর যাহাবী বলেনঃ (আরবী) ‘তিনি তার দাদা মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহীম আল-ইমাম হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন।’আমার নিকট কতিপয় কারণে এ হাদীসের অর্থও বাতিলঃ১। তসবীহ দ্বানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করা বিদ’আত। কারণ তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ছিল না। এটি আবিস্কার হয়েছে পরবর্তীতে। কীভাবে তিনি তার সাথীদেরকে এমন একটি কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন যেটিকে তারা চিনতেন না।এর দলীল; ইবনু মাস’উদ (রাঃ) এক মহিলাকে তসবীহ দ্বানা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করতে দেখে তা কেটে ও ছুড়ে ফেলেছিলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করতে দেখে তিনি তাকে পা দ্বারা প্রহার করেন। অতঃপর বলেনঃ তোমরা আমাদের চেয়ে অগ্রণী হয়ে গেছ! অত্যাচার করে বিদ’আত-এর উপর আরোহণ করেছ এবং জ্ঞানের দিক দিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথীগণকেও ছাড়িয়ে গেছ!২। এটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দিক নির্দেশনা বিরোধী। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেনঃ (আরবী) ‘আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ডান হাতের মুষ্টি বেধে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি।’ হাদীসটি আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু হিব্বান, হাকিম ও বাইহাক্বী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।৩। এছাড়া রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশেরও বিরোধী। তিনি মহিলাদেরকে অঙ্গুলিগুলো মুষ্টি বেধে তাসবীহ... পাঠ নির্দেশ দেন...। হাদীসটি হাসান। এটি আবূ দাউদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। এটিকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন আর নাবাবী ও আসকালানী হাসান আখ্যা দিয়েছেন।কেউ যদি বলেন যে, কোন কোন হাদীসে পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠের কথা এসেছে এবং রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা সমর্থন করেছেন। আর তাসবীহ দ্বানা ও পাথরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, যেমনভাবে শাওকানী বলেছেন?আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মেনে নেয়া যেত যদি পাথর দিয়ে তাসবীহ পাঠের হাদিসগুলো সহীহ হতো। কিন্তু সেগুলো সহীহ নয়। এ মর্মে দু’টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সুয়ূতী হাদীস দু’টো বর্ণনা করেছেন।একটি সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে আর দ্বিতীয়টি সাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। প্রথমটি আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবন হিব্বান, দাওরাকী, মুখাল্লিস ও হাকীম বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। হাকিম বলেছেনঃ সনদ সহীহ্। যাহাবী তাতে তাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ভুল করেছেন। কেননা এর সনদে খুযাইমা নামক এক বর্ণনাকারী আছেন তিনি মাজহূল। যাহাবী নিজেই বলেছেনঃ তার পরিচয় জানা যায় না এবং তার থেকে সা’ঈদ ইবনু আবী হিলাল এককভাবে বর্ণনা করেছেন। এমনটিই বলেছেনঃ হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে (আরবী) ‘তার পরিচয় জানা যায় না।’ এছাড়া সা’ঈদ ইবনু আবী হিলাল নির্ভরযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। ইয়াহ্ইয়াও তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল এরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া কোন কোন নির্ভরশীল বর্ণনাকারী সনদে খুযাইমাকে উল্লেখ করেননি। ফলে সনদটি মুনকাতি’ (বিচ্ছিন্নতা) ভুক্ত হয়ে যায়।দ্বিতীয় হাদীস, যেটি সাফিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। সেটি ইমাম তিরমিযী, আবূ বাক্র আশ-শাফে’ঈ ও হাকীম বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে তিনি সহীহুল ইসনাদ বলেছেন আর যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। এটি আশ্চর্যজনক ঘটনা। কারণ তিনি হাসিম ইবনু সা’ঈদকে “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, ইবনু মা’ঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইবনু আদী বলেনঃ তিনি যে পরিমাণ হাদীস বর্ণনা করেছেন তার অনুসরণ করা যায় না। এ জন্য ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি দুর্বল আর সাফিয়ার মাওলা কিনানা তিনি মাজহূলুল হাল, তাকে ইবনু হিব্বান ছাড়া কেউ নির্ভরশীল বলেননি।এছাড়া এ দু’টি পাথরের হাদীস দুর্বল হওয়ার আরো কারণ হচ্ছে, উল্লেখিত হাদীস দু’টির ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে সহীহ বর্ণনায় যুওয়াইরিয়াহ হতে বর্ণিত হয়েছে। যাতে পাথরের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এটি ইমাম মুসলিম (৮/৮৩-৮৪), তিরমিযী (৪/২৭৪) (এবং তিনি সহীহ বলেছেন), নাসাঈ “আমালুল ইয়াওয়ম ওয়াল লাইলা” গ্রন্থে (১৬১-১৬৫), ইবনু মাজাহ (১/২৩) ও আহমাদ (৬/৩২৫,৪২৯-৪৩০) বর্ণনা করেছেন।এ হাদীসটি দু’টি বিষয়ের প্রমান বহন করেঃ১। পূর্বে যে ঘটনার সাথে সাফিয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি আসলে সাফিয়া নয় বরং সেটি হচ্ছে যুওয়াইরিয়ার ঘটনা।২। ঘটনায় পাথরের উল্লেখ মুনকার। মুনকার হওয়াকে শক্তিশালী করছে কিছু লোককে পাথর গণনা করতে দেখে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) কতৃক তা ইনকার করা। এছাড়া তার মাদরাসা হতে শিক্ষাগ্রহণকারী ইব্রাহীম আন-নাখ’ঈ তার মেয়েকে মহিলাদেরকে তসবীর সূতা (তা দ্বারা তাসবীহ পাঠ করার জন্য) পাকিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছিলেন। এটি ইবনু আবী শায়বাহ “আল-মুসান্নাফ” গ্রন্থে (২/৮৯/২) ভাল সনদে বর্ণনা করেছেন।