পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজ : ৫৫
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজহাদিস নম্বর ৫৫
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
দ্রুত চলা মু’মিনের উজ্জলতাকে বিতাড়িত করে দেয়।হাদীসটি নিতান্তই মুনকার।হাদীসটি আবূ হুরাইরা, ইবনু উমার, আনাস ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।প্রথমতঃ আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর হাদীস; এটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃপ্রথম সূত্রঃ হাদীসটি আবূ সা’ঈদ আল-মালীনী “আল-আরবা’উন ফি শুয়ূখিস সূফিয়া” গ্রন্থে (৫/১), আবূ নু’য়াইম “হিলইয়াহ্” গ্রন্থে ( ১০/২৯০), আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১/৪১৭) এবং তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১১৭৮) উল্লেখ করেছেন। যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনুল আসমা’ঈর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃহাদীসটি নিতান্তই মুনকার। অতঃপর তিনি হাদীসটির সনদ উল্লেখ করে বলেনঃ এটি সহীহ্ নয়। হাফিয ইবনু হাজারও “আল-লিসান” গ্রন্থে তার (যাহাবীর) কথাকে সমর্থন করেছেন। [ মুনকার অর্থ জানার জন্য দেখুন (৫৬) পৃষ্ঠা]।আমি (আলবানী) বলছিঃ এ প্রথম সূত্রটি দুর্বল হওয়ার কারণ তিনটিঃ১। এতে মুহাম্মাদ ইবনু আসমা’ঈ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তিনি মাজহূল [অপরিচিত]।২। ইবনু আসমা’ঈ হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব আল- ফারাজীর জীবনী পাচ্ছিনা।৩। আবূ মাশার যার নাম নাজীহ ইবনু আব্দির রহমান সিন্দী, সবার ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপভাবে ইমাম বুখারীও বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।দ্বিতীয় সূত্রঃ ইবনুআদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২) তার থেকে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (২/২১৯) আব্দুল্লাহ ইবনু সালেম সূত্রে আম্মার ইবনু মাতার রাহাবী হতে বর্ণনা করে জাওযী বলেছেনঃহাদীসটি সহীহ নয়। এ সূত্রের বর্ণনাকারী আম্মার ইবনু মাতার রাহাবী সম্পর্কে আবূ হাতিম আর–রাযী বলেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইবনু আদী বলেনঃ তার হাদীস গুলো বাতিল। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল।তৃতীয় সূত্রঃ ইবনুআদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২) এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী আবূ শিহাব আব্দুল কুদ্দূস সূত্রে… বর্ণনাকরেছেন।তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ (আরবী) তার বহু মিথ্যা [হাদীস] রয়েছে যেগুলো তিনি জাল করেছেন।হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে এটিকে মুনকার হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।এ তিনটি সূত্রের প্রথমটি উত্তম তা সত্ত্বেও সেটি দুর্বল বহুবিধ কারণে।দ্বিতীয়তঃ ইবনু উমার (রাঃ)-এরহাদীস;এটি আব্বাস দাওরী “তারীখু ইবনু মা’ঈন” গ্রন্থে (কাফ ২/৪১), ইবনু আদী (৫/১৩, ৭/৭৭), আলখাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (৫/৯১/২), ওয়াহেদী “ওয়াসীত” গ্রন্থে (৩/১৯৪/১০), সা’লাবী “তাফসীর” গ্রন্থে (৩/৭৮/২) ও ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১১৭৭) বর্ণনা করেছেন।এর সনদে ওয়ালীদ ইবনু সালামা (জর্দানের কাজী) এবং উমার ইবনু সহবান নামক দু’জন বর্ণনাকারী রয়েছেন।এ উমার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ এ উমারের হাদীসগুলোর অনুসরণ করেননি। তার অধিকাংশ হাদীস মুনকার।আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি খুবই দুর্বল। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।তার থেকে বর্ণনাকারী ওয়ালীদ ইবনু সালামা তার চাইতেও মন্দ। তার সম্পর্কে একাধিক ব্যক্তি বলেছেনঃ তিনি বড়ই মিথ্যুক।ইবনু হিব্বান বলেনঃ (আরবী) তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন।তৃতীয়তঃ আনাস (রা)-এর হাদীস; হাদীসটি ইবনু বিশরান “ আল-‘আমালী” গ্রন্থে (২৩/৬৯/২) ও আল-খাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (২/২২/১) মুহাম্মদ ইবনু ইউনুস ইবনু কামেল হতে, তিনি আব্দুস সালাম ইবনু সুলায়মান আযদী হতে, তিনি আবান হতে … বর্ণনা করেছেন।এ সনদটি বাতিল। এ সনদে উল্লেখিত কোন ব্যক্তিই নির্ভরযোগ্য নয়।আবান সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।শু’বা বলেনঃ (আরবী) আবানের নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করার চেয়ে কোন ব্যক্তির যেনা করাটা বেশি উত্তম (অর্থাৎ জাল হাদীস বর্ণনা করা যেনার চেয়েও জঘন্য)। এ কথাটিই প্রমাণ করে যে তিনি মিথ্যুক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন।আব্দুস সালাম ইবনু সুলায়মান আল-আযদী মাজহূলুল হাল (তার অবস্থা অজ্ঞাত)।তিনি একজন শামী বর্ণনাকারী। অথচ এ সনদটি শামী নয়। অতএব তিনি এ হাদীসের বর্ণনাকারী নন এটিই সুস্পষ্ট।ইউসুফ ইবনু কামিল আল-আত্তার; তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলা হয়নি। অর্থাৎ তিনি মাজহূল [অপরিচিত]।মুহাম্মদ ইবনু ইউনুস; তিনি হচ্ছেন কুদাইমী।তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ (আরবী) তাকে (হাদীস) জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে।ইবনু হিব্বান বলেনঃ সম্ভবত তিনি হাজারাধিক হাদীস জাল করেছেন।আবূ দাঊদ, মূসা ইবনু হারুণ এবং কাসিম ইবনু মুতাররীয তাকে মিথ্যুক বলেছেন।দারাকুতনী বলেনঃ তাকে হাদীস জাল করার ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে।চতুর্থতঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ)- এরহাদীস;সুয়ূতী তার “জামে’উস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি ইবনু নাজ্জারের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার সনদ পাইনি। আমার বেশীর ভাগ ধারণা এটিও অন্যান্যটির ন্যায় দুর্বল।এক কথায় এ হাদীসটি সম্পর্কে বর্ণিত সকল সনদ নিতান্তই দুর্বল। এজন্য একটি সনদ অপরটিকে শক্তিশালী করে না।শাইখ ‘আলী আল-কারী “শারহুশ শামায়েল” গ্রন্থে (১/৫২) এটিকে যুহ্রীর বাণী বলে উল্লেখ করেছেন।এটি যে হাদীস নয় তার জন্য এ কথাই যথেষ্ট যে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলার সময় দ্রুতচ লতেন। (দেখুন তিরমিযীর “মুখতাসারুশ শামায়েল” (পৃঃ৭১ ও ২০), ইমাম বুখারীর “আদাবুল মুফরাদ” (১১৯), তাবাকাতু ইবনু সা’দ (১/৩৭৯-৩৮০) এবং মাজমা’উয যাওয়াইদ” (৮/২৭৩,২৮১)। এটি সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে। উমারও (রাঃ) দ্রুত চলতেন। দেখুন “তাবাকাতু ইবনে সা’দ” (১/৩৭৯-৩৮০)।