পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কয়েকজন সাহাবীর ক্ষুধাকালীন এক সময়ের ঘটনা
শামায়েলে তিরমিযি : ২৮৬
শামায়েলে তিরমিযিহাদিস নম্বর ২৮৬
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا شَيْبَانُ أَبُو مُعَاوِيَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عُمَيْرٍ ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فِي سَاعَةٍ لا يَخْرُجُ فِيهَا , وَلا يَلْقَاهُ فِيهَا أَحَدٌ ، فَأَتَاهُ أَبُو بَكْرٍ ، فَقَالَ : " مَا جَاءَ بِكَ يَا أَبَا بَكْرٍ ؟ " ، قَالَ : خَرَجْتُ أَلْقَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْظُرُ فِي وَجْهِهِ ، وَالتَّسْلِيمَ عَلَيْهِ ، فَلَمْ يَلْبَثْ أَنْ جَاءَ عُمَرُ , فَقَالَ : " مَا جَاءَ بِكَ يَا عُمَرُ ؟ " ، قَالَ : الْجُوعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ، قَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " وَأَنَا قَدْ وَجَدْتُ بَعْضَ ذَلِكَ " ، فَانْطَلَقُوا إِلَى مَنْزِلِ أَبِي الْهَيْثَمِ بْنِ التَّيْهَانِ الأَنْصَارِيِّ , وَكَانَ رَجُلا كَثِيرَ النَّخْلِ وَالشَّاءِ ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ خَدَمٌ ، فَلَمْ يَجِدُوهُ ، فَقَالُوا لامْرَأَتِهِ : أَيْنَ صَاحِبُكِ ؟ فَقَالَتِ : انْطَلَقَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا الْمَاءَ ، فَلَمْ يَلْبَثُوا أَنْ جَاءَ أَبُو الْهَيْثَمِ بِقِرْبَةٍ يَزْعَبُهَا ، فَوَضَعَهَا ثُمَّ جَاءَ يَلْتَزِمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيُفَدِّيهِ بِأَبِيهِ وَأُمِّهِ ، ثُمَّ انْطَلَقَ بِهِمْ إِلَى حَدِيقَتِهِ فَبَسَطَ لَهُمْ بِسَاطًا ، ثُمَّ انْطَلَقَ إِلَى نَخْلَةٍ فَجَاءَ بِقِنْوٍ فَوَضَعَهُ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَفَلا تَنَقَّيْتَ لَنَا مِنْ رُطَبِهِ ؟ " فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنِّي أَرَدْتُ أَنْ تَخْتَارُوا ، أَوْ تَخَيَّرُوا مِنْ رُطَبِهِ وَبُسْرِهِ ، فَأَكَلُوا وَشَرِبُوا مِنْ ذَلِكَ الْمَاءِ . فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " هَذَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مِنِ النَّعِيمِ الَّذِي تُسْأَلُونَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ! ظِلٌّ بَارِدٌ ، وَرُطَبٌ طَيِّبٌ ، وَمَاءٌ بَارِدٌ " . فَانْطَلَقَ أَبُو الْهَيْثَمِ لِيَصْنَعَ لَهُمْ طَعَامًا . فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لا تَذْبَحَنَّ ذَاتَ دَرٍّ " ، فَذَبَحَ لَهُمْ عَنَاقًا أَوْ جَدْيًا ، فَأَتَاهُمْ بِهَا فَأَكَلُوا ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " هَلْ لَكَ خَادِمٌ ؟ " ، قَالَ : لا ، قَالَ : " فَإِذَا أَتَانَا , سَبْيٌ , فَأْتِنَا " . فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَأْسَيْنِ لَيْسَ مَعَهُمَا ثَالِثٌ ، فَأَتَاهُ أَبُو الْهَيْثَمِ ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " اخْتَرْ مِنْهُمَا " فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، اخْتَرْ لِي . فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ الْمُسْتَشَارَ مُؤْتَمَنٌ ، خُذْ هَذَا , فَإِنِّي رَأَيْتُهُ يُصَلِّي ، وَاسْتَوْصِ بِهِ مَعْرُوفًا " . فَانْطَلَقَ أَبُو الْهَيْثَمِ إِلَى امْرَأَتِهِ ، فَأَخْبَرَهَا بِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَتِ امْرَأَتُهُ : مَا أَنْتَ بِبَالِغٍ حَقَّ مَا ، قَالَ فِيهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلا بِأَنْ تَعْتِقَهُ ، قَالَ : فَهُوَ عَتِيقٌ ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا وَلا خَلِيفَةً إِلا وَلَهُ بِطَانَتَانِ : بِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَاهُ عَنِ الْمُنْكَرِ ، وَبِطَانَةٌ لا تَأْلُوهُ خَبَالا ، وَمَنْ يُوقَ بِطَانَةَ السُّوءِ فَقَدْ وُقِيَ " .
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ঘর থেকে বের হলেন, যখন সচরাচর তিনি বের হন না। কেউ সাক্ষাৎ করতেও আসে না। এমন সময় আবু বকর (রাঃ) তাঁর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ হে আবু বকর! বললেন, আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, তাঁর চেহারা দেখতে ও সালাম জানাতে এসেছি। কিছুক্ষণ পর উমার (রাঃ) আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি জন্য এসেছ উমার? বললেন, ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ বললেন, আমিও তা-ই অনুভব করছি।অতঃপর তারা তিনজনই আবুল হায়সাম ইবনে তায়্যিহান আল আনসারীর বাড়ি গেলেন। তাঁর অনেক খেজুর বাগান, ফল বাগান ও ছাগলের পাল। কিন্তু কোন খাদেম ছিল না। তারা তাঁর দেখা পেলেন না। ফলে তারা তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কোথায় গিয়েছেন? বলল, আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই আবুল হায়ছাম পানির পাত্র নিয়ে ফিরে আসলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁর পিতামাতাকে উৎসর্গ করতে থাকেন।তারপর তাদেরকে নিয়ে বাগানে গেলেন এবং তাঁদের জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। খেজুর বাগান হতে এক ছড়া খেজুর এনে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের জন্য তাজা খেজুর বেছে আনলে না কেন? (পূর্ণ একটি ছড়া আনার কি প্রয়োজন ছিল)। আবুল হায়ছাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি চাই আপনি তা হতে কাঁচা ও পাকা খেজুর বেছে নিন। অতঃপর তারা সকলেই খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, এসবও সেসব নিয়ামতের মধ্যে গণ্য, কিয়ামতের দিন যেগুলোর হিসাব নেয়া হবে। তা হলো, শীতল ছায়া, তরতাজা খেজুর ও ঠাণ্ডা পানি।অতঃপর আবুল হায়সাম তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের জন্য যেন দুগ্ধবতী ছাগী যবেহ করা না হয়। অতঃপর তাদের জন্য একটি বাচ্চা ছাগল যবেহ করা হলো এবং যথাশ্ৰীঘ্র খাবার হাযির করা হলো এবং তাঁরা আহার করলেন।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার কোন খাদেম আছে কি? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের যখন কোন গোলাম আসবে, তখন আমাকে মনে করিয়ে দিও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ২ জন গোলাম আসল। তাদের সঙ্গে তৃতীয় কেউ ছিল না। এমন সময় আবুল হায়সাম সেখানে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এ ২ জনের মধ্য হতে একজনকে বেছে নাও। বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিই বেছে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পরামর্শদাতা বিশ্বস্ত হয়। অতএব তুমি একে নাও। কারণ, আমি তাকে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর আমি তোমাকে তাঁর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জন্য অসিয়ত করছি।অতঃপর আবুল হায়সাম স্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসিয়তের কথা শুনালেন। তাঁর স্ত্রী বললেন, আপনার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে। অতএব আপনি গোলামকে আযাদ করে দিন। তাতে আবুল হায়ছম গোলামটিকে আযাদ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রত্যেক নবী ও খলীফার জন্য ২ জন গোপন পরামর্শদাতা সৃষ্টি করে দেন। একজন সৎপরামর্শ দেয় এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখে। অপরজন ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে ইতস্তত করে না। যে ব্যক্তিকে তাঁর মন্দ স্বভাব থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, তাকে সকল অন্যায় হতে নিরাপদ রাখা হয়েছে।[১]
[১] সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৩৪; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭১৭৮ সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৯৬ সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৬৫৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬১২। শু’আবুল ঈমান, হা/৪২৮২।