রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রাত্রে গল্প বলা
পরিচ্ছদঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রাত্রে গল্প বলা
শামায়েলে তিরমিযি : ১৮৮
শামায়েলে তিরমিযিহাদিস নম্বর ১৮৮
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنِ أَخِيهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ عُرْوَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : جَلَسَتْ إِحْدَى عَشْرَةَ امْرَأَةً فَتَعَاهَدْنَ وَتَعَاقَدْنَ أَنْ لا يَكْتُمْنَ مِنْ أَخْبَارِ أَزْوَاجِهِنَّ شَيْئًا : فَقَالَتِ الأُولَى : زَوْجِي لَحْمُ جَمَلٍ غَثٍّ عَلَى رَأْسِ جَبَلٍ وَعْرٍ ، لا سَهْلٌ فَيُرْتَقَى ، وَلا سَمِينٌ فَيُنْتَقَلُ . قَالَتِ الثَّانِيَةُ : زَوْجِي لا أَبُثُّ خَبَرَهُ ، إِنِّي أَخَافُ أَنْ لا أَذَرَهُ ، إِنْ أَذْكُرْهُ أَذْكُرْ عُجَرَهُ , وَبُجَرَهُ . قَالَتِ الثَّالِثَةُ : زَوْجِي الْعَشَنَّقُ ، إِنْ أَنْطِقْ أُطَلَّقْ ، وَإِنْ أَسْكُتْ أُعَلَّقْ . قَالَتِ الرَّابِعَةُ : زَوْجِي كَلَيْلِ تِهَامَةَ ، لا حَرٌّ , وَلا قُرٌّ ، وَلا مَخَافَةَ , وَلا سَآمَةَ . قَالَتِ الْخَامِسَةُ : زَوْجِي إِنْ دَخَلَ فَهِدَ ، وَإِنْ خَرَجَ أَسِدَ ، وَلا يَسْأَلُ عَمَّا عَهِدَ . قَالَتِ السَّادِسَةُ : زَوْجِي إِنْ أَكَلَ لَفَّ ، وَإِنْ شَرِبَ اشْتَفَّ ، وَإِنِ اضْطَجَعَ الْتَفَّ ، وَلا يُولِجُ الْكَفَّ , لِيَعْلَمَ الْبَثَّ . قَالَتِ السَّابِعَةُ : زَوْجِي عَيَايَاءُ , أَوْ غَيَايَاءُ طَبَاقَاءُ , كُلُّ دَاءٍ لَهُ دَاءٌ ، شَجَّكِ , أَوْ فَلَّكِ , أَوْ جَمَعَ كُلا لَكِ . قَالَتِ الثَّامِنَةُ : زَوْجِي الْمَسُّ , مَسُّ أَرْنَبٍ وَالرِّيحُ , رِيحُ زَرْنَبٍ . قَالَتِ التَّاسِعَةُ : زَوْجِي رَفِيعُ الْعِمَادِ , طَوِيلُ النِّجَادِ عَظِيمُ الرَّمَادِ , قَرِيبُ الْبَيْتِ مِنَ النَّادِ . قَالَتِ الْعَاشِرَةُ : زَوْجِي مَالِكٌ , وَمَا مَالِكٌ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكَ ، لَهُ إِبِلٌ كَثِيرَاتُ الْمَبَارِكِ ، قَلِيلاتُ الْمَسَارِحِ ، إِذَا سَمِعْنَ صَوْتَ الْمِزْهَرِ , أَيْقَنَّ أَنَّهُنَّ هَوَالِكُ . قَالَتِ الْحَادِيَةَ عَشْرَةَ : زَوْجِي أَبُو زَرْعٍ وَمَا أَبُو زَرْعٍ ؟ أَنَاسَ مِنْ حُلِيٍّ أُذُنَيَّ ، وَمَلأَ مِنْ شَحْمٍ عَضُدَيَّ ، وَبَجَّحَنِي , فَبَجَحَتْ إِلَيَّ نَفْسِي ، وَجَدَنِي فِي أَهْلِ غُنَيْمَةٍ بِشَقٍّ فَجَعَلَنِي فِي أَهْلِ صَهِيلٍ , وَأَطِيطٍ وَدَائِسٍ وَمُنَقٍّ ، فَعِنْدَهُ أَقُولُ , فَلا أُقَبَّحُ ، وَأَرْقُدُ , فَأَتَصَبَّحُ , وَأَشْرَبُ , فَأَتَقَمَّحُ ، أُمُّ أَبِي زَرْعٍ فَمَا أُمُّ أَبِي زَرْعٍ ، عُكُومُهَا رَدَاحٌ ، وَبَيْتُهَا فَسَاحٌ ، ابْنُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا ابْنُ أَبِي زَرْعٍ ، مَضْجَعُهُ كَمَسَلِّ شَطْبَةٍ ، وَتُشْبِعُهُ ذِرَاعُ الْجَفْرَةِ ، بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ ، طَوْعُ أَبِيهَا وَطَوْعُ أُمِّهَا ، مِلْءُ كِسَائِهَا ، وَغَيْظُ جَارَتِهَا ، جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ ، لا تَبُثُّ حَدِيثَنَا تَبْثِيثًا ، وَلا تُنَقِّثُ مِيرَتَنَا تَنْقِيثًا ، وَلا تَمْلأُ بَيْتَنَا تَعْشِيشًا ، قَالَتْ : خَرَجَ أَبُو زَرْعٍ , وَالأَوْطَابُ تُمْخَضُ ، فَلَقِيَ امْرَأَةً مَعَهَا وَلَدَانِ لَهَا , كَالْفَهْدَيْنِ ، يَلْعَبَانِ مِنْ تَحْتِ خَصْرِهَا بِرُمَّانَتَيْنِ ، فَطَلَّقَنِي وَنَكَحَهَا ، فَنَكَحْتُ بَعْدَهُ رَجُلا سَرِيًّا ، رَكِبَ شَرِيًّا ، وَأَخَذَ خَطِّيًّا ، وَأَرَاحَ عَلَيَّ نَعَمًا ثَرِيًّا ، وَأَعْطَانِي مِنْ كُلِّ رَائِحَةٍ زَوْجًا ، وَقَالَ : كُلِي أُمَّ زَرْعٍ ، وَمِيرِي أَهْلَكِ ، فَلَوْ جَمَعْتُ كُلَّ شَيْءٍ أَعْطَانِيهِ ، مَا بَلَغَ أَصْغَرَ آنِيَةِ أَبِي زَرْعٍ . قَالَتْ عَائِشَةُ : فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " كُنْتُ لَكِ كَأَبِي زَرْعٍ لأُمِّ زَرْعٍ " .
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার ১১ জন মহিলা এ মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো যে, তারা তাদের নিজ নিজ স্বামী সম্পর্কে সব খুলে বলবে এবং কোন কিছুই গোপন করবে না।প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অলস, অকৰ্মণ্য, দুর্বল উটের গোশততুল্য, তা আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তাঁর আচরণ রুক্ষ। ফলে তাঁর কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করতে পারছি না।দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি, তাঁর দোষক্ৰটি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা করে দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট, দেখতে কদাকার। আমি কথা বললে (উত্তরে আসে) তালাক। আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত রশি (অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের সম্মুখীন হতে হয় এবং নীরব থাকলে হতে হয় বঞ্চিত)।চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী তিহামার রাত্রির ন্যায়- না (প্রচণ্ড) গরম, আর না (প্রচণ্ড) ঠাণ্ডা। তাঁর থেকে কোন ভয়-ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।পঞ্চম মহিলা বলল, আমার স্বামী ঘরে এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে বের হলে সে হয় সাহসী সিংহ। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে সব সাবাড় করে দেয় এবং কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমাতে চায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কি না তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী অক্ষম, কথা বলতে পারে না, সব ধরনের রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করতে পারে অথবা মারধোর করে হাড়গোড় সব ভেঙ্গে দিতে পারে বা উভয়টিও করতে পারে।অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। (তাঁর ব্যবহৃত সুগন্ধি) জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ত্ব। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট, তাঁর বৈঠকখানা ঘরের নিকটবর্তী।দশম মহিলা বলল, আমার স্বামী হলো আমার মালিক। মালিকের প্রশংসা কী আর করব (উপরে বর্ণিত সকলের প্রশংসা একত্র করলেও তাঁর গুণ গেয়ে শেষ করা যাবে না)। তার রয়েছে অসংখ্য উট, অধিকাংশ সময় সেগুলো বাধাই থাকে। খুব কমই মাঠে চরানো হয়। এসব উট যখন বাদ্যের ঝংকার শোনে, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, তাদেরকে যবেহ করা হবে।একাদশ মহিলা উম্মে যার’আ বলল, আমার স্বামী আবু যার’আ। আবু যার’আর কী আর প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দু’কান ভর্তি করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দু’বাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের কন্যা, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও আমাকে মন্দ বলত না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছুই বলত না। পর্যাপ্ত খাওয়ার পরও খাবার অবশিষ্ট থাকত।উম্মে আবু যার’আর (একাদশ মহিলার শাশুড়ির) প্রশংসাই বা কি করব! তাঁর বড় বড় পাত্রগুলো সর্বদা খানায় পরিপূর্ণ থাকতো। আর তার বাড়ির সীমানা সুবিশাল। ইবনে আবু যার’আ তরবারির ন্যায় সূক্ষ্ম, বকরীর একটি উরুর গোশত তাঁর জন্য যথেষ্ট। আবু যার’আর কন্যা সম্পর্কেই কী বলব! পিতামাতার অনুগত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, স্বাস্থ্যবান সতীনদের অন্তর্জ্বালার কারণ। আবু যার’আর পরিচারিকার কথাই বা কি বলব! সে ঘরের গোপন তথ্য ফাঁস করে না। আমাদের খাবার বিনা অনুমতিতে হাত দেয় না। বাড়িতে কখনো আবর্জনা জমা করে রাখে না।সে (একাদশ মহিলা) বলল, আমি এমনই সুখ শান্তি, আদর সোহাগ সমৃদ্ধির মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছিলাম। এমন সময় একবার আবু যার’আ বাইরে যান এবং দেখতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দুটি শিশু তাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর আবু যার’আ আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলেন।এরপর আমি একজন বিত্তশালী উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিয়ে করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছিল। সে স্বামী বলল, উম্মে যার’আ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমতো তোমার বাপের বাড়িতে পাঠাও। সে মহিলা বলল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তু একত্র করলে আবু যার’আর সামান্যও হবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু যার’আ যেমন উম্মে যার’আর জন্য, আমিও ঠিক তদ্রুপ তোমার জন্য। (কিন্তু কখনো আবু যার'আর মতো তোমাকে তালাক দেব না)[১]
[১] সহীহ বুখারী, হা/৫১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৫৮; ইবনে হিব্বান, হা/৭১০৪; জামেউস সগীর, হা/১৪১ ৷