১৬. অধ্যায়ঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানী- আমরা (নাবীগন) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই সদাকাহ (বাইতুল মাল)
সহিহ মুসলিম : ৪৪৭২
সহিহ মুসলিমহাদিস নম্বর ৪৪৭২
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، أَخْبَرَنَا حُجَيْنٌ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَرْسَلَتْ إِلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ بِالْمَدِينَةِ وَفَدَكٍ وَمَا بَقِيَ مِنْ خُمْسِ خَيْبَرَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ - صلى الله عليه وسلم - فِي هَذَا الْمَالِ " . وَإِنِّي وَاللَّهِ لاَ أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْ صَدَقَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ حَالِهَا الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهَا فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَعْمَلَنَّ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَبَى أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَدْفَعَ إِلَى فَاطِمَةَ شَيْئًا فَوَجَدَتْ فَاطِمَةُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ فِي ذَلِكَ - قَالَ - فَهَجَرَتْهُ فَلَمْ تُكَلِّمْهُ حَتَّى تُوُفِّيَتْ وَعَاشَتْ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سِتَّةَ أَشْهُرٍ فَلَمَّا تُوُفِّيَتْ دَفَنَهَا زَوْجُهَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ لَيْلاً وَلَمْ يُؤْذِنْ بِهَا أَبَا بَكْرٍ وَصَلَّى عَلَيْهَا عَلِيٌّ وَكَانَ لِعَلِيٍّ مِنَ النَّاسِ وِجْهَةٌ حَيَاةَ فَاطِمَةَ فَلَمَّا تُوُفِّيَتِ اسْتَنْكَرَ عَلِيٌّ وُجُوهَ النَّاسِ فَالْتَمَسَ مُصَالَحَةَ أَبِي بَكْرٍ وَمُبَايَعَتَهُ وَلَمْ يَكُنْ بَايَعَ تِلْكَ الأَشْهُرَ فَأَرْسَلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ أَنِ ائْتِنَا وَلاَ يَأْتِنَا مَعَكَ أَحَدٌ - كَرَاهِيَةَ مَحْضَرِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ - فَقَالَ عُمَرُ لأَبِي بَكْرٍ وَاللَّهِ لاَ تَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَحْدَكَ . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَمَا عَسَاهُمْ أَنْ يَفْعَلُوا بِي إِنِّي وَاللَّهِ لآتِيَنَّهُمْ . فَدَخَلَ عَلَيْهِمْ أَبُو بَكْرٍ . فَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ثُمَّ قَالَ إِنَّا قَدْ عَرَفْنَا يَا أَبَا بَكْرٍ فَضِيلَتَكَ وَمَا أَعْطَاكَ اللَّهُ وَلَمْ نَنْفَسْ عَلَيْكَ خَيْرًا سَاقَهُ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَكِنَّكَ اسْتَبْدَدْتَ عَلَيْنَا بِالأَمْرِ وَكُنَّا نَحْنُ نَرَى لَنَا حَقًّا لِقَرَابَتِنَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَلَمْ يَزَلْ يُكَلِّمُ أَبَا بَكْرٍ حَتَّى فَاضَتْ عَيْنَا أَبِي بَكْرٍ فَلَمَّا تَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَرَابَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَحَبُّ إِلَىَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي وَأَمَّا الَّذِي شَجَرَ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ مِنْ هَذِهِ الأَمْوَالِ فَإِنِّي لَمْ آلُ فِيهِ عَنِ الْحَقِّ وَلَمْ أَتْرُكْ أَمْرًا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُهُ فِيهَا إِلاَّ صَنَعْتُهُ . فَقَالَ عَلِيٌّ لأَبِي بَكْرٍ مَوْعِدُكَ الْعَشِيَّةُ لِلْبَيْعَةِ . فَلَمَّا صَلَّى أَبُو بَكْرٍ صَلاَةَ الظُّهْرِ رَقِيَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَتَشَهَّدَ وَذَكَرَ شَأْنَ عَلِيٍّ وَتَخَلُّفَهُ عَنِ الْبَيْعَةِ وَعُذْرَهُ بِالَّذِي اعْتَذَرَ إِلَيْهِ ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَعَظَّمَ حَقَّ أَبِي بَكْرٍ وَأَنَّهُ لَمْ يَحْمِلْهُ عَلَى الَّذِي صَنَعَ نَفَاسَةً عَلَى أَبِي بَكْرٍ وَلاَ إِنْكَارًا لِلَّذِي فَضَّلَهُ اللَّهُ بِهِ وَلَكِنَّا كُنَّا نَرَى لَنَا فِي الأَمْرِ نَصِيبًا فَاسْتُبِدَّ عَلَيْنَا بِهِ فَوَجَدْنَا فِي أَنْفُسِنَا فَسُرَّ بِذَلِكَ الْمُسْلِمُونَ وَقَالُوا أَصَبْتَ . فَكَانَ الْمُسْلِمُونَ إِلَى عَلِيٍّ قَرِيبًا حِينَ رَاجَعَ الأَمْرَ الْمَعْرُوفَ .
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
ফাতিমাহ বিনতু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর-এর নিকট লোক পাঠালেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্পদে তাঁর মীরাস এর দাবী করে, যা আল্লাহ তা’আলা তাকে মাদীনাহ ও ফিদাক-এর ফাই এবং খাইবারের অবশিষ্ট এক পঞ্চমাংশ থেকে প্রদান করেছেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গিয়েছেন- আমরা আমাদের (নাবীগনের) পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে কাউকে ওয়ারিস রেখে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হয় সদাকাহ (বাইতুল মাল)। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গ তা থেকে জীবিকা গ্রহন করবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়কালে সদাকাহর যে অবস্থা চালু ছিল, তা আমি পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করে গিয়েছেন। অতএব, আবূ বাকর (রাঃ) ফাতিমাহ (রাঃ)-কে তা থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। সুতরাং ফাতিমাহ (রাঃ) এতে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে পরিত্যাগ করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কোন কথা বলেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর যখন তিনি ইন্তিকাল করলেন, তখন তার স্বামী ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাকে রাতে দাফন করলেন এবং ফাতিমাহ-এর মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত আবূ বাকর (রাঃ)-কে দেননি। ‘আলী (রাঃ) তাঁর জানাযার সলাত আদায় করলেন। ফাতিমাহ (রাঃ)-এর জীবিতকাল পর্যন্ত ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি জনগণের বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল। এরপর যখন তাঁর ইন্তিকাল হলো তখন তিনি লোকের চেহারায় অপছন্দনীয় ভাব দেখতে পেলেন। অতএব তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর সঙ্গে ফায়সালা করে তাঁর বাই’আতের প্রার্থনা করলেন। কেননা তিনি ঐ মাসগুলোতে তার বাই’আত গ্রহন করেননি। তারপর ‘আলী (রাঃ) আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঁঠিয়ে সংবাদ দিলেন যে, আপনি একাকী আমার সাথে সাক্ষাৎ করুন। আপনার সাথে অন্য কাউকে আনবেন না। কেননা, তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর আগমন কে অপছন্দ করছিলেন। ‘উমার (রাঃ) আবূ বাকরকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমি আশংকা করিনি যে, তাঁরা আমার সাথে কিছু করবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। পরিশেষে আবূ বাকর (রাঃ) তাঁদের কাছে গেলেন। এরপর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাশাহহুদ [তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য বাণী] পাঠ করলেন, তারপর বললেন, হে আবূ বাকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে নি’আমাত প্রদান করেছেন, তাতে আমাদের কোন হিংসা নেই। কিন্তু আপনি আমাদের উপেক্ষা করে খিলাফাতের দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আত্মীয়ের কারণে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও অধিকার আছে। আবূ বাকরের সঙ্গে তিনি এভাবে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে আবূ বাকর (রাঃ)-এর দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হলো। এরপর যখন আবূ বাকর (রাঃ) কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আত্মীয়ের প্রতি উত্তম আচরণ করা আমার কাছে অধিক প্রিয় আমার নিজ আত্মীয়ের প্রতি ভাল আচরণের চেয়েও। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এ সম্পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাতে আমি সত্য পরিহার করব না। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এতে যা করতে দেখেছি তা আমি পরিত্যাগ করব না। এরপর ‘আলী (রাঃ) আবূ বাকর (রাঃ)-কে বললেন যে, আমি বাই’আতের জন্য আপনাকে আজ বিকাল বেলায় কথা দিলাম। যখন আবূ বাকর (রাঃ) যুহরের সলাত শেষ করলেন তখন তিনি মিম্বারে আরোহণ করলেন এবং তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর তিনি ‘আলী (রাঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তাঁর বাই’আত গ্রহণে বিলম্ব ও এ বিষয়ে তাঁর ওযর বর্ণনা করেন, যা তার কাছে বর্ণনা করা হয়েছিল। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাশাহহুদ পাঠ করলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন। আর তিনি ব্যক্ত করলেন যে, তিনি যা করেছেন, তা আবূ বাকর (রাঃ)-এর প্রতি হিংসা পোষণ করে নয়। আর না আছে আমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কোন সম্মান ও নি’আমাতের অস্বীকৃতি। বরং আমরা মনে করতাম যে, খিলাফাতের মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) আমাদের উপেক্ষা করে এ কাজের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এতে আমরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি। এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনি তা ঠিক বলেছেন। তখন তিনি কল্যাণের প্রতি ফিরে এলেন অর্থাৎ- তখন মনোমালিন্যের অবসান হলো এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর বাই’আত গ্রহন করা হলো, তখন থেকে মুসলিমগণ ‘আলী (রাঃ)-এর সংস্পর্শে আসতে লাগলেন। (ই.ফা. ৪৪২৮, ই.সে. ৪৪৩০)