পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজ : ৬৫
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজহাদিস নম্বর ৬৫
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়েয।হাদীসটি দুর্বল।হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫), বাইহক্বী ও ইমাম আহমাদ (৬/৩৩৮) উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহ্ইয়া সূত্রে তার মা হতে, তার মা উম্মু বিলাল বিনতে হিলাল হতে ...বর্ণনা করেছেন।এটির সনদ দুর্বল উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহ্ইয়া মাজহূল হওয়ার কারণে, যেমনভাবে ইবনু হাযম (৭/৩৬৫) বলেছেন। তিনি আরো বলেনঃ উম্মু বিলাল বিনতে হিলালও মাজহূলা। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটি জানা যায়না।সিন্দী বলেন, দামায়রী বলেছেনঃ ইবনু হায্ম প্রথমটিতে ঠিক করেছেন দ্বিতীয়টিতে ঠিক করেননি। কারণ উম্মে বিলালকে ইবনু মান্দা, আবূ নু’য়াইম ও ইবনু আব্দিল বার সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার পরেও যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায়না। অথচ আযালী তাকে নির্ভরশীল বলেছেন।আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সম্পর্কে ইবনু হাযম যা বলেছেন সেটিই সঠিক। কারণ তাকে একমাত্র এ হাদীসেই চেনা যায়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। যেমনটি জানা যায় তার সনদে অজ্ঞতাও রয়েছে।আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, হাদীসটির মধ্যে দুর্বলতা সাব্যস্ত হওয়ার পরেও “নাসবুর রায়া” গ্রন্থে ইমাম যায়লা’ঈ (৪/২১৭, ২১৮) চুপ থেকেছেন।এ অধ্যায়ে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো ইবনু হায্ম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/৩৬৪-৩৬৫) উল্লেখ করেছেন এবং সবগুলোকেই দুর্বল বলেছেন।উকবা ইবনু ‘আমের-এর হাদীস ব্যতীত অন্যান্য হাদীসকে তার দুর্বল বলার সিদ্ধান্তটি সঠিক। উকবার হাদীসে বলা হয়েছেঃ “(আরবী)” ‘আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মেষ শাবক যবেহ করেছি’।হাদীসটি নাসাঈ (২/২০৪) ও বাইহাকী (৯/২৭০) বর্ণনা করেছেন। তাদের সনদটি ভাল।উকবার ক্ষেত্রে মেষ শাবক কুরবানী দেয়ার বিষয়টি তার জন্যই খাস ছিল, এ মর্মে হাদীসে বিবরণ এসেছে বা ওযরের কারণে ছিল। যেমন মুসিন্নার (যে ছাগল দু’বছর পার হয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে) দুষ্প্রাপ্যতা বা মূল্য বেশী হওয়ার কারণে। এটিই সঠিকের নিকটবর্তী। আসিম ইবনু কুলাঈব কর্তৃক তার পিতা হতে বর্ণনাকৃত হাদীসের কারণে। তার পিতা বলেনঃ(আরবি)“আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথীগণ কর্তৃক যুদ্ধের মধ্যে আদেষ্টিত হয়েছিলাম। আমরা ছিলাম অশ্বারোহী। কুরবানীর দিন মুসিন্নাগুলোর দাম বেড়ে গেলে, একটি মুসিন্নাহ দু’টি/তিনটি মেষ শাবক-এর বিপরীতে গ্রহণ করতাম। আমাদের মধ্য হতে মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আজকের দিনের ন্যায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, তখন আমরা একটি মুসিন্নাহ দু’টি/তিনটি মেষ শাবকের পরিবর্তে গ্রহণ করতাম। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসিন্নাহ যাতে যথেষ্ট হয় মেষ শাবকও তাতে যথেষ্ট হবে।হাদীসটি নাসাঈ, হাকিম (৪/২২৬) ও ইমাম আহমাদ বর্ণণা করেছেন। হাকিম বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ্। হাদীসটি তেমনই যেমনটি হাকিম বলেছেন।ইবনু হায্ম বলেন(৭/২৬৭) - হাদীসটি অত্যন্ত সহীহ্।হাদীসটি আবূ দাঊদ (২/৩), ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫) ও বাইহাক্বী (৯/২৭০) সংক্ষিপ্তাকারে মুশাজে’ ইবনু মাস’ঊদ আস-সুলামী সূত্রে বর্ণনা করেছেন।এ হাদীসটি প্রমাণ করেছে যে, মেষ শাবক কুরবানী দেয়া যাবে তখনই যখন মুসিন্নার দাম বেড়ে যাবে এবং তা দুষ্প্রাপ্য হবে।এ ব্যাখ্যাকে জাবির (রাঃ)-এর নিম্নের হাদীসটি সমর্থন করছেঃ (আরবি) “তোমরা মুসিন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু যবেহ কর না, তবে তোমাদের জন্য যদি তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায় তাহলে তোমরা মেষ শাবক যবেহ কর।”হাদীসটি মুসলিম (৬/৭২) ও আবূ দাঊদ (২/৩) (৩/৩১২, ৩২৭) বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর” মধ্যে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ্।জাবির হতে বর্ণিত হাদীসটি আসলে সহীহ নয়। কারণ আবূ যুবায়ের যখন জাবির হতে বা অন্যদের থেকে “(আরবী)” আন আন শব্দ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেন এবং তার হাদীসটি যদি লাইস ইবনু সা’দ কর্তৃক তার থেকে বর্ণিত না হয়, তাহলে আবূ যুবায়ের-এর শ্রবণ জাবির হতে সাব্যস্ত হয় না। এ হাদীসটিতে এদু’টোই বিদ্যমান। এ কারণে হাদীসটি দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত জাবির হতে তার শ্রবণ সাব্যস্ত না হয় অথবা সাক্ষীমূলক হাদীস না মিলে যা তার হাদীসকে শক্তি যোগাবে।আমি (আলবানী) প্রথমে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবেনা এ মতকে সমর্থন করেছি। কিন্তু এখন তা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং উপরে উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় যা বলেছি তাও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। বিশেষ বরে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবে এ মতকে সমর্থন করছি এবং শেষবধি বলছি যে, উম্মে হিলাল সূত্রে বর্ণিত হাদীস যদিও সনদের দিক দিয়ে সহীহ নয় তবুও সেটি অর্থের দিক দিয়ে সহীহ্। যার সাক্ষী দিচ্ছে উকবা এবং মুশাজে’র হাদীস।তবে যদি ছাগল ছানা হয় তাহলে তার দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। কারণ বারা (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে; তিনি বলেনঃ(আরবি)আমার খালু আবূ বুরদা সলাতের (কুরবানীর সলাতের) পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন, ফলে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সেটি গোশতের ছাগল”। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার নিকটে একটি ছাগল ছানা রয়েছে। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “সেটিই কুরবানী কর, তবে তা তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য হবে না।“অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ“তাই যবেহ কর, তবে তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে তা যথেষ্ট হবে না।”অপর এক বর্ণনায় এসেছেঃছাগল ছানা তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে না।হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম (৬/৭৪-৭৬) এবং বুখারী তার ন্যায়।ফায়েদা: “(আরবী)” ‘মুসিন্না’ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে দুই বা তারও বেশী নতুন দাঁতধারী উট, গরু ও ছাগলকে। গরু ও ছাগলের মধ্যে যেটির বয়স দু’ বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে আর উটের ক্ষেত্রে যেটি সবে মাত্র ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে সেটিকে।আর “(আরবী)” মেষ শাবক (ভেড়ার বাচ্চা) বলতে বুঝানো হচ্ছে যেটির বয়স আরবী ভাষাবিদ ও জামহূরে আহলে ইলমের প্রসিদ্ধ মতানুসারে এক বছর পূর্ণ হয়েছে সেটিকে।(মোটকথাঃ ছাগলের এক বছরের বাচ্চা দিয়ে কুরবানী বিশুদ্ধ হবে না, তবে এক বছরের ভেড়া দিয়ে কুরবানী করা যাবে)।