পরিচ্ছেদঃ
১ থেকে ১০০ নং হাদিস
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজ : ৪৭
জাল জয়িফ হাদিস সিরিজহাদিস নম্বর ৪৭
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
যে ব্যক্তি হজ্জ করবে, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে, সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে।হাদীসটি জাল।হাদীসটি তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/২০৩/২) এবং “আওসাত” গ্রন্থে (১/১২৬/২), ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে, দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃঃ ২৭৯), বাইহাকী (৫/২৪৬) ও সিলাফী “আস-সানী আশার মিনাল মাশীখাতিল বাগদাদীইয়াহ্” গ্রন্থে (২/৫৪) বর্ণনা করেছেন। তারা প্রত্যেকেই হাফসা ইবনু সুলায়মান আবী সুলাইম হতে......বর্ণনা করেছেন।আমি (আলবানী) বলছিঃ দু’টি কারণে হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বলঃ১। লাইসা ইবনু সুলাইম-এর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল, যেমনটি বলা হয়েছে ২ নং হাদীসের আলোচনায়।২। হাফস ইবনু সুলায়মান হচ্ছেন আল-কারী, তাকে আল-গাযেরী বলা হয়।তিনি নিতান্তই দুর্বল, যেমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন হাফিয ইবনু হাজার “আল-তাকবীর” গ্রন্থে নিম্নোক্ত কথার দ্বারাঃ(আরবি) তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে মাতরূক [অগ্রণযোগ্য]।কারণ তার সম্পর্কে ইবনু মা’ঈন বলেনঃ (আরবি) তিনি ছিলেন মিথ্যুক; যেমনটি ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে এসেছে।ইবনু খাররাশ বলেনঃ (আরবি) তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন।এ হাদীসের সনদের সমর্থন সূচক আরো কিছু সনদ দ্বারা হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।২ যেগুলো এটিকে আরো শক্তিশালী করে না। কারণ দুর্বলের দিক থেকে সেগুলোর অবস্থা এটির সনদ চেয়ে কম নয়। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে আরো হাদীস এসেছে, যেগুলো সুবকী “আল-শেফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর সবই দুর্বলের অন্তর্ভুক্ত, যার একটি অপরটির চেয়ে বেশী দুর্বল।ইবনু তাইমিয়্যা “আল-কা’য়েদাতুল জালীলা” গ্রন্থে (পৃঃ৫৭) বলেনঃ রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে যে সব হাদীস এসেছে সবই দুর্বল। দ্বীনি বিষয়ে সেগুলোর কোনটির উপরে নির্ভর করা যায় না। সে কারণেই সহীহ গ্রন্থ এবং “সুনান” গ্রন্থের লেখকগণ এ সংক্রান্ত কোন হাদীস তাদের গ্রন্থগুলোতে বর্ণনা করেননি। সেগুলো বর্ণনা করেছেন তারাই যারা দুর্বল হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। যেমন দারাকুতনী, বায্যার, ও আরো অনেকে।অতঃপর তিনি এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন যে, এ হাদীসের মিথ্যাবাদিতা সুস্পষ্ট, এটি মুসলমানদের ধর্ম বিরোধী। কারণ যে ব্যক্তি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবিত থাকাকালীন মু’মিন অবস্থায় তাঁকে যিয়ারত করেছে, সে সাহাবীগণের দলভুক্ত, যাদের ফযীলত বর্ণনা করে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।কোন ব্যক্তি সাহাবীগণের পরে যে কোন আমলের দ্বারা, যদিও সেটি ওয়াজিব-এর পর্যায়ভুক্ত হয় যেমন হজ্জ, জিহাদ, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ও তাঁর উপর দরূদ পাঠ করা তবুও সাহাবগণের সমকক্ষ হতে পারবে না। অতএব কীভাবে তাদের সমকক্ষ হবে এমন একটি আমলের দ্বারা যেটি (তাঁর কবর যিয়ারত ) সকল মুসলিমের ঐক্যমতে ওয়াজিব নয়। বরং তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাই শারী’য়াত সম্মত নয়।বরং সেটি নিষিদ্ধ। তবে কেউ যদি তাঁর মসজিদে সলাত কায়েমের উদ্দেশ্যে সফর করে তাহলে মুস্তাহাব এবং সে সাথে কবর যিয়ারত ও করতে পারবে।সতর্কবানীঃ বহু লোক মনে করেন যে, ইবনু তাইমিয়্যা এবং সালাফীদের মধ্য থেকে যারা তাঁর নীতি অনুসরণ করেছেন শুধুমাত্র তারাই বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারত করা নিষেধ। এটি মিথ্যা ও অপবাদ মাত্র। যাদের ইবনু তাইমিয়্যার (কিতাবের) গ্রন্থরাজী সম্পর্কে জ্ঞান আছে, তারা জানেন যে, ইবনু তাইমিয়্যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবর যিয়ারতকে শারী’য়াহ সম্মত এবং মুস্তাহাব বলেছেন। যদি তাঁর সাথে কোন প্রকার শারী’য়াত বিরোধী কর্মকান্ড এবং বিদ’আত জড়িত না হয় তাহলেই। যেমন যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাহন প্রস্তুত করা বা শুধু তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা।রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপক ভিত্তিক নিম্নোক্ত হাদীসের কারণেঃ (আরবি) তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন প্রস্তুত কর না।তিনটি মসজিদ ছাড়া শুধুমাত্র অন্য মসজিদগুলোতে যাওয়াকেই বাতিল করা হয়নি, যেমনটি বহুলোক ধারণা করে থাকেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন স্থানে যাওয়াকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাই সেটি মসজিদ বা কবর বা অন্য কোন স্থান হোক না কেন। এর দলীল আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসঃবুসরা ইবনু আবূ বুসরা বলেনঃ আমি তূর পাহাড় হতে ফিরে এসে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সাথে মিলিত হলাম। আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথা হতে আসলে? আমি বললাম তূর হতে। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি যদি তোমাকে তূরের দিকে বের হওয়ার পূর্বে পেতাম তাহলে তুমি বের হতে না। কারণ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আরোহী প্রস্তুত কর না তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন তৈরী করো না। (আল-হাদীস)। হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। দেখুন “আহকামুল জানায়েয” (পৃঃ ২২৬)।২ {যেমনঃ তাবারানী তাঁর “আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/১২৬/২) আহমাদ ইবনু রাশদীন সূত্রে “আলী ইবনুল হাসান ইবনে হারুন আনসারী হতে হাফস ইবনু সুলায়মানের মুতাবা’য়াত হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ আহমাদ ইবনু রাশদীন সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ মিথ্যুক বলেছেন এবং তাঁর উপর বহুকিছু ইনকার করা হয়েছে। যাহাবী তার কতিপয় বাতিল হাদীস উল্লেখ করেছেন। এছারাও একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারীর সমাবেশ ঘটেছে।}