অনুচ্ছেদ-৩৫
শাসক কর্তৃক মুশরিকদের উপঢৌকন গ্রহণ
সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫৫
সুনানে আবু দাউদহাদিস নম্বর ৩০৫৫
حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ الرَّبِيعُ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ، - يَعْنِي ابْنَ سَلاَّمٍ - عَنْ زَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ الْهَوْزَنِيُّ، قَالَ لَقِيتُ بِلاَلاً مُؤَذِّنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِحَلَبَ فَقُلْتُ يَا بِلاَلُ حَدِّثْنِي كَيْفَ كَانَتْ نَفَقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا كَانَ لَهُ شَىْءٌ كُنْتُ أَنَا الَّذِي أَلِي ذَلِكَ مِنْهُ مُنْذُ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَنْ تُوُفِّيَ وَكَانَ إِذَا أَتَاهُ الإِنْسَانُ مُسْلِمًا فَرَآهُ عَارِيًا يَأْمُرُنِي فَأَنْطَلِقُ فَأَسْتَقْرِضُ فَأَشْتَرِي لَهُ الْبُرْدَةَ فَأَكْسُوهُ وَأُطْعِمُهُ حَتَّى اعْتَرَضَنِي رَجُلٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ يَا بِلاَلُ إِنَّ عِنْدِي سَعَةً فَلاَ تَسْتَقْرِضْ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ مِنِّي فَفَعَلْتُ فَلَمَّا أَنْ كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ تَوَضَّأْتُ ثُمَّ قُمْتُ لأُؤَذِّنَ بِالصَّلاَةِ فَإِذَا الْمُشْرِكُ قَدْ أَقْبَلَ فِي عِصَابَةٍ مِنَ التُّجَّارِ فَلَمَّا أَنْ رَآنِي قَالَ يَا حَبَشِيُّ . قُلْتُ يَا لَبَّاهُ . فَتَجَهَّمَنِي وَقَالَ لِي قَوْلاً غَلِيظًا وَقَالَ لِي أَتَدْرِي كَمْ بَيْنَكَ وَبَيْنَ الشَّهْرِ قَالَ قُلْتُ قَرِيبٌ . قَالَ إِنَّمَا بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ أَرْبَعٌ فَآخُذُكَ بِالَّذِي عَلَيْكَ فَأَرُدُّكَ تَرْعَى الْغَنَمَ كَمَا كُنْتَ قَبْلَ ذَلِكَ فَأَخَذَ فِي نَفْسِي مَا يَأْخُذُ فِي أَنْفُسِ النَّاسِ حَتَّى إِذَا صَلَّيْتُ الْعَتَمَةَ رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى أَهْلِهِ فَاسْتَأْذَنْتُ عَلَيْهِ فَأَذِنَ لِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي إِنَّ الْمُشْرِكَ الَّذِي كُنْتُ أَتَدَيَّنُ مِنْهُ قَالَ لِي كَذَا وَكَذَا وَلَيْسَ عِنْدَكَ مَا تَقْضِي عَنِّي وَلاَ عِنْدِي وَهُوَ فَاضِحِي فَأْذَنْ لِي أَنْ آبِقَ إِلَى بَعْضِ هَؤُلاَءِ الأَحْيَاءِ الَّذِينَ قَدْ أَسْلَمُوا حَتَّى يَرْزُقَ اللَّهُ رَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم مَا يَقْضِي عَنِّي فَخَرَجْتُ حَتَّى إِذَا أَتَيْتُ مَنْزِلِي فَجَعَلْتُ سَيْفِي وَجِرَابِي وَنَعْلِي وَمِجَنِّي عِنْدَ رَأْسِي حَتَّى إِذَا انْشَقَّ عَمُودُ الصُّبْحِ الأَوَّلِ أَرَدْتُ أَنْ أَنْطَلِقَ فَإِذَا إِنْسَانٌ يَسْعَى يَدْعُو يَا بِلاَلُ أَجِبْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَانْطَلَقْتُ حَتَّى أَتَيْتُهُ فَإِذَا أَرْبَعُ رَكَائِبَ مُنَاخَاتٍ عَلَيْهِنَّ أَحْمَالُهُنَّ فَاسْتَأْذَنْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَبْشِرْ فَقَدْ جَاءَكَ اللَّهُ بِقَضَائِكَ " . ثُمَّ قَالَ " أَلَمْ تَرَ الرَّكَائِبَ الْمُنَاخَاتِ الأَرْبَعَ " . فَقُلْتُ بَلَى . فَقَالَ " إِنَّ لَكَ رِقَابَهُنَّ وَمَا عَلَيْهِنَّ فَإِنَّ عَلَيْهِنَّ كِسْوَةً وَطَعَامًا أَهْدَاهُنَّ إِلَىَّ عَظِيمُ فَدَكَ فَاقْبِضْهُنَّ وَاقْضِ دَيْنَكَ " . فَفَعَلْتُ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ ثُمَّ انْطَلَقْتُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدٌ فِي الْمَسْجِدِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ " مَا فَعَلَ مَا قِبَلَكَ " . قُلْتُ قَدْ قَضَى اللَّهُ كُلَّ شَىْءٍ كَانَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يَبْقَ شَىْءٌ . قَالَ " أَفَضَلَ شَىْءٌ " . قُلْتُ نَعَمْ قَالَ " انْظُرْ أَنْ تُرِيحَنِي مِنْهُ فَإِنِّي لَسْتُ بِدَاخِلٍ عَلَى أَحَدٍ مِنْ أَهْلِي حَتَّى تُرِيحَنِي مِنْهُ " . فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعَتَمَةَ دَعَانِي فَقَالَ " مَا فَعَلَ الَّذِي قِبَلَكَ " . قَالَ قُلْتُ هُوَ مَعِي لَمْ يَأْتِنَا أَحَدٌ . فَبَاتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ وَقَصَّ الْحَدِيثَ حَتَّى إِذَا صَلَّى الْعَتَمَةَ - يَعْنِي مِنَ الْغَدِ - دَعَانِي قَالَ " مَا فَعَلَ الَّذِي قِبَلَكَ " . قَالَ قُلْتُ قَدْ أَرَاحَكَ اللَّهُ مِنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَكَبَّرَ وَحَمِدَ اللَّهَ شَفَقًا مِنْ أَنْ يُدْرِكَهُ الْمَوْتُ وَعِنْدَهُ ذَلِكَ ثُمَّ اتَّبَعْتُهُ حَتَّى إِذَا جَاءَ أَزْوَاجَهُ فَسَلَّمَ عَلَى امْرَأَةٍ امْرَأَةٍ حَتَّى أَتَى مَبِيتَهُ فَهَذَا الَّذِي سَأَلْتَنِي عَنْهُ .
আবদুল্লাহ আল-হাওযানী (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা হালব শহরে আমার সাথে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়াযযিন বিলালের (রাঃ) সাক্ষাত হলো। আমি বললাম, হে বিলাল! রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিবারে ভরণ-পোষণের খরচ কিভাবে ব্যবস্থা হতো তা আমাকে বলুন। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ্ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (রাসূল করে) পাঠানোর পর থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর পরিবারের যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্বে ছিলাম। তাঁর কাছে কোন বস্ত্রহীন মুসলিম এলে তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতেন এবং আমি ধার করতে বের হতাম। আমি তার জন্য কাপড় কিনে এনে তাকে পরিয়ে দিতাম এবং আহার করাতাম। এমতাবস্থায় মুশরিক সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললো, হে বিলাল! আমার অনেক সম্পদ রয়েছে। তুমি অন্য কারো কাছে ধার না করে আমার কাছ থেকে ধার নাও। সুতরাং আমি তাই করলাম। এ অবস্থায় আমি একদিন উযু করে সলাতের আযান দিতে উঠি। এ সময় মুশরিক লোকটি একদল ব্যবসায়ীর সাথে এসে উপস্থিত হলো। সে আমাকে দেখামাত্র বললো, হে হাবশী। আমি বললাম, উপস্থিত আছি। সে আমাকে কটুক্তি করাতে আমার মনে খুব বাঁধলো। সে আমাকে আরো বললো, তুমি কি জানো, মাসের কত দিন বাকী আছে? আমি বললাম, প্রায় শেষ। সে বললো, তোমার ও তার (ঋণ পরিশোধের সময়ের) মধ্যে চার দিনের ব্যবধান। কাজেই আমি তোমাকে ঋণের পরিবর্তে ধরে নিয়ে যাবো এবং মেষপালের রাখাল বানিয়ে তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিবো।তার এরূপ কথা শুনে আমি মর্মাহত হলাম যেমন অন্যান্য লোকদের হয়ে থাকে। আমি যখন ইশার সলাত আদায় করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে আসলেন। আমি তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলে তিনি তা অনুমতি দিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি যে মুশরিক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম সে আমাকে এ কথা বলেছে। আমার এ ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য আপনারও নেই, আমারও নেই। সে আমাকে অপদস্থ করবে। কাজেই ইতিপূর্বে ইসলাম গ্রহন করেছে এরূপ কোন মুসলিম জনপদে পলায়ন করার অনুমতি আমাকে দিন। আমি ততোদিন আত্মগোপন থাকার অনুমতি চাই যতদিন না মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এমন সম্পদের ব্যবস্থা করে দেন যা দিয়ে আমার ঋণ পরিশোধ হবে। একথা বলে আমি আমার ঘরে চলে এসে আমার তরবারি, মোজা, জুতা ও ঢাল গুছিয়ে আমার মাথার কাছে রাখি। ইচ্ছা ছিল, ভোরের আভা ফুটা মাত্রই বেরিয়ে পড়বো। হঠাৎ এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে আমাকে বললো, হে বিলাল! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে স্মরণ করেছেন। আমি রওয়ানা হয়ে তাঁর কাছে এসে উপস্থিত হয়ে দেখি, চারটি উট পিঠে বোঝাই সম্পদ নিয়ে বসে আছে। আমি অনুমতি চাইলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো! মহান আল্লাহ্ তোমার ঋণ পরিশোধের জন্য এগুলো পাঠিয়েছেন। পুনরায় তিনি বললেনঃ তুমি কি দেখছো না চারটি মাল বোঝাই উট বসে আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ এই উট এবং এদের পিঠে বোঝাই সমস্ত সম্পদ তোমার জন্য। এগুলোর পিঠ বোঝাই বস্ত্র ও খাদ্যদ্রব্য ফাদাকের শাসক আমার জন্য পাঠিয়েছে। এগুলো নিয়ে তোমার ঋণ পরিশোধ করো। আমি তাই করলাম।অতঃপর বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি মাসজিদে গিয়ে দেখি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে বসে আছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলে তিনি বললেনঃ তুমি যে সম্পদ পেয়েছো তা কি করেছো, ঋণ পরিশোধ হয়েছে কি? আমি বললাম, মহান আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত ঋণ পরিশোধের তৌফিক দিয়েছেন। এখন আর অবশিষ্ট নেই। তিনি বললেনঃ কিছু সম্পদ অবশিষ্ট আছে কি? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ অবশিষ্ট সম্পদ তাড়াতাড়ি খরচ করো। তুমি আমাকে এ অবশিষ্ট সম্পদ হতে রেহাই না দেয়া পর্যন্ত আমি আমার পরিবারের কারো নিকট যাবো না।রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায়ের পর আমাকে ডেকে বললেনঃ তোমাকে দেয়া মালের অবস্থা কি? আমি বললাম, সেগুলো আমার কাছেই আছে। আমার কাছে কেউ আসেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে রাত কাটালেন। বর্ণনাকারী হাদীসের বাকী অংশ বর্ণনা করলেন। এমনকি পরবর্তী দিনের ‘ইশার সলাত আদায় করে তিনি আমাকে ডাকলেন। তিনি বললেনঃ তোমার কাছে অবশিষ্ট মালের অবস্থা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ আপনাকে তা থেকে চিন্তামুক্ত করেছেন। তিনি তাকবীর দিলেন এবং আল্লাহ্র প্রশংসা করলেন। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, ঐ সম্পদ তাঁর কাছে থেকে যাওয়া অবস্থায় হয়তো তাঁর মৃত্যু হবে। অতঃপর আমি তাঁকে অনুসরণ করি, তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে এসে এক এক করে তাদের প্রত্যেককে সালাম দিলেন, এভাবে তিনি তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকলেন। এ সেই ঘটনা যা তুমি (‘আবদুল্লাহ আল-হাওযানী) আমাকে জিজ্ঞেস করছো।