পরিচ্ছেদঃ
ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণঃ
(صحيح) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُماَ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ الْمَبِيتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ فَقَالُوْا إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمُ: اللَّهُمَّ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ وَكُنْتُ لَا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا وَلَا مَالًا فَنَأَى بِيْ فِيْ طَلَبِ شَجرٍ يَوْمًا فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِبَا غَبُوقَهُمَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لاَ يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :قَالَ الْآخَرُ: اللَّهُمَّ كَانَتْ لِيْ بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ فَأَرَدْتُهَا عَنْ نَفْسِهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءَتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّيَ بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفَعَلَتْ حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا قَالَتْ لاَ أُحِلُّ لَكَ أَنْ تَفُضَّ الْخَاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ فَتَحَرَّجْتُ مِنَ الْوُقُوعِ عَلَيْهَا فَانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِيَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أَعْطَيْتُهَا اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ غَيْرَ أَنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :قَالَ الثَّالِثُ: اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ فَأَعْطَيْتُهُمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهَبَ فَثَمَّرْتُ أَجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنْهُ الْأَمْوَالُ فَجَاءَنِي بَعْدَ حِينٍ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي فَقُلْتُ لَهُ كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أَجْرِكَ مِنَ الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَمِ وَالرَّقِيقِ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ لَا تَسْتَهْزِئُ بِي فَقُلْتُ إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فَاسْتَاقَهُ فَلَمْ يَتْرُكْ مِنْهُ شَيْئًا اللَّهُمَّ فَإِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ.وفي رواية: أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: بَيْنَمَا ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يَمْشُونَ إِذْ أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فَأَوَوْا إِلَى غَارٍ فَانْطَبَقَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ إِنَّهُ وَاللَّهِ يَا هَؤُلَاءِ لَا يُنْجِيكُمْ إِلَّا الصِّدْقُ فَليَدْعُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْكُمْ بِمَا يَعْلَمُ أَنَّهُ قَدْ صَدَقَ فِيهِ فَقَالَ وَاحِدٌ مِنْهُمْ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّهُ كَانَ لِي أَجِيرٌ عَمِلَ لِي عَلَى فَرَقٍ مِنْ أَرُزٍّ فَذَهَبَ وَتَرَكَهُ وَأَنِّي عَمَدْتُ إِلَى ذَلِكَ الْفَرَقِ فَزَرَعْتُهُ فَصَارَ مِنْ أَمْرِهِ أَنِّي اشْتَرَيْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَأَنَّهُ أَتَانِي يَطْلُبُ أَجْرَهُ فَقُلْتُ لَهُ اعْمِدْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ فَسُقْهَا فَقَالَ لِي إِنَّمَا لِي عِنْدَكَ فَرَقٌ مِنْ أَرُزٍّ فَقُلْتُ لَهُ اعْمِدْ إِلَى تِلْكَ الْبَقَرِ فَإِنَّهَا مِنْ ذَلِكَ الْفَرَقِ فَسَاقَهَا فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ مِنْ خَشْيَتِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا فَانْسَاحَتْ عَنْهُمْ الصَّخْرَةُ. فذكر الحديث قريبا من الأول
ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ“তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি বনী ইসরাঈলের মধ্যে থেকে তিন ব্যক্তি একদা কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে গমন করল। রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে তারা একটি গুহায় প্রবেশ করল। হঠাৎ পাহাড়ের উপর থেকে প্রকান্ড একটি পাথর আছড়ে পড়ে গুহার দারদেশ বন্ধ করে দিল। এসময় তারা একে অপরকে বললঃ এই প্রকান্ড পাথর থেকে তোমাদেরকে কেউ মুক্তি দিতে পারবে না। তাই প্রত্যেকে স্বীয় সৎআমলের অসীলায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। এক ব্যক্তি দু’আ করতে লাগলঃ আয় আল্লাহ! আমার পিতামাতা উভয়ই অতিবৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনই তাদের আগে কাউকে দুধ পান করাতাম না, না পরিবারের কোন ব্যক্তিকে না কোন দাস-দাসীকে। একদা গবাদি পশুর জন্য ঘাষ-পাতার অনুসন্ধানে দূরে চলে গিয়েছিলাম। রাতে যখন ফিরে আসি তখন তারা ঘুমিয়ে পড়েন। তাদের জন্য দুধ দহন করে দেখলাম তারা ঘুমন্ত। কিন্তু তাদেরকে দুধ পান করানোর আগে পরিবারের অন্য কাউকে দুধ পান করানো আমি অপছন্দ করলাম। তাই তাদের শিয়রে অবস্থান নিলাম। দুধের পেয়ালা আমার হাতেই থাকল। অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন তারা জাগ্রত হয়। শেষ পর্যন্ত ফজরের আলো উদ্ভাসিত হয়ে গেল। (কোন কোন বর্ণনায় এসেছেঃ সে সময় ছোট ছোট শিশুরা আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করছিল)। তারা জাগ্রত হল। তারপর দুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তষ্টির উদ্দেশ্য করে থাকি, তবে আমাদেরকে এ পাথরের বিপদ থেকে উদ্ধার কর। পাথরটি তখন সামান্য একটু সরে গেল। কিন্তু তারা বের হতে সক্ষম হল না।নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। তাই তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। কিন্তু সে রাজি হল না। একবার সে দুর্ভিক্ষের সম্মুখিন হয়ে আমার কাছে আসল। আমি তাকে একশত বিশটি স্বর্ণ মুদ্রা দিলাম। এই শর্তে যে, সে আমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিবে। সে রাজি হল। আমি যখন আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে পুরাপুরি প্রস্তুত হলাম, তখন সে বললঃ অধিকার ছাড়া সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া আমি তোমার জন্য হালাল মনে করি না। একথায় আমি ভীত হলাম এবং তাকে ছেড়ে দিলাম। অথচ সে আমার কাছে সর্বাধিক ভালবাসার পাত্র ছিল। যে স্বর্ণমুদ্রা তাকে দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। আয় আল্লাহ! উক্ত কাজ যদি তোমার সম্ভাষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে আমাদের এই বিপদ দূর করে দাও। ফলে পাথরটি আরও একটু সরে গেল। কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হল না।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কতিপয় শ্রমিক নিয়োগ করি। প্রত্যেককে তাদের পারিশ্রমিকও দিয়ে দেই। কিন্তু এক ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক না নিয়েই চলে যায়। আমি সে পারিশ্রমিকের অর্থ দিয়ে চাষাবাদ করি। ফলে তা থেকে অনেক সম্পদ বৃদ্ধি হয়। বহু দিন পর সে লোক আমার কাছে ফিরে এসে বলেঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার পারিশ্রমিক দাও। আমি বললামঃ এই উট, গরু, ছাগল ও ক্রীতদাস যা দেখছো তা সবই তোমার পারিশ্রমিক। সে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমার সাথে ঠাট্টা কর না। আমি বললামঃ আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। তখন সে সবগুলোই নিয়ে নিল। কোন কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! এ কাজ যদি তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করে দাও। তখন পাথরটি সরে গেল এবং তারাও সেখান থেকে বের হতে সক্ষম হল।অন্য বর্ণনায় আছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ“তোমাদের পূর্ব জাতির তিন ব্যক্তি রাস্তা চলছিল। তারা বৃষ্টির সম্মুখিন হলে আশ্রয়ের জন্য একটি গুহায় প্রবেশকরল। এমন সময় গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বললঃ আল্লাহর শপথ এ বিপদ থেকে সত্যবাদিতা ছাড়া তোমাদেরকে কোন কিছুই মুক্ত করতে পারবে না। সুতরাং তোমাদর প্রত্যেকের আল্লাহর কাছে এমন আমলের মাধ্যমে দু’আ করা উচিত যাতে সে সততার পরিচয় দিয়েছে। একজন বললঃ হে আল্লাহ! তুমি ভাল ভাবেই জান, আমার একজন শ্রমিক ছিল। ধানের একটি নির্দিষ্ট মাপের বিনিময়ে সে আমার নিকট কাজ করেছিল। কিন্তু সে তার প্রাপ্য না নিয়েই চলে যায়। আমি সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান কৃষি কাজে ব্যবহার করি ফলে উৎপাদন এমন হয় যা থেকে আমি কতগুলো গরু খরিদ করি। একদিন সে আমার নিকট এসে তার পারিশ্রমিক চায়। আমি বললামঃ ঐ গরুগুলোর কাছে যাও। এগুলো তোমার সেই প্রাপ্য ধান থেকে হয়েছে। তখন সে গরুগুলো নিয়ে চলে গেল। হে আল্লাহ! উক্ত কাজ যদি আমি আপনার ভয়ে করে থাকি তবে আমাদেরকে উদ্ধার কর। তখন পাথর গুহার মুখ থেকে (কিছুটা) সরে গোল........ |* অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ প্রায় প্রথমটির মতই উল্লেখ করেছেন। (হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বুখারী ও মুসলিম)