পরিচ্ছেদ - ৩৬১
মহামারী-পীড়িত গ্রাম-শহরে প্রবেশ ও সেখান থেকে অন্যত্র পলায়ন করা নিষেধ
রিয়াদুস সলেহিন : ১৮০০
রিয়াদুস সলেহিনহাদিস নম্বর ১৮০০
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ رضي الله عنه خَرَجَ إلَى الشَّامِ حَتَّى إِذَا كَانَ بِسَرْغَ لَقِيَهُ أُمَرَاءُ الأَجْنَادِ ـ أَبُو عُبَيْدَةَ بنُ الجَرَّاحِ وَأَصْحَابُهُ ـ فَأَخْبَرُوهُ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ . قَالَ ابنُ عَبَّاسٍ : فَقَالَ لِي عُمَرُ : ادْعُ لِي المُهَاجِرِينَ الأَوَّلِينَ، فَدَعَوْتُهُمْ فَاسْتَشَارَهُمْ وَأَخْبَرَهُمْ أَنَّ الوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّامِ، فَاخْتَلَفُوا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : خَرَجْتَ لأَمْرٍ، وَلاَ نَرَى أَنْ تَرْجِعَ عَنْهُ . وَقَالَ بَعضُهُم : مَعَكَ بَقِيَّةُ النَّاسِ وَأَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَلاَ نَرَى أَنْ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ . فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ: ادْعُ لِي الأَنْصَارَ، فَدَعَوْتُهُمْ، فَاسْتَشَارَهُمْ، فَسَلَكُوا سَبيلَ المُهَاجِرينَ، وَاخْتَلَفُوا كَاخْتِلاَفِهِمْ، فَقَالَ: ارْتَفِعُوا عَنِّي . ثُمَّ قَالَ: ادْعُ لِي مَنْ كَانَ هَاهُنَا مِنْ مَشْيَخَةِ قُريشٍ مِنْ مُهَاجِرَةِ الفَتْحِ، فَدَعَوْتُهُمْ، فَلَمْ يَخْتَلِفْ عَلَيْهِ مِنْهُمْ رَجُلاَنِ، فَقَالُوا : نَرَى أَنْ تَرْجِعَ بِالنَّاسِ، وَلاَ تُقْدِمَهُمْ عَلَى هَذَا الوَبَاءِ، فَنَادَى عُمَرُ رضي الله عنه فِي النَّاسِ : إِنِّي مُصْبِحٌ عَلَى ظَهْرٍ، فَأَصْبِحُوا عَليْهِ، فَقَالَ أَبُو عُبَيدَةَ بنِ الجَرَّاحِ رضي الله عنه : أَفِرَاراً مِنْ قَدَرِ اللهِ ؟ فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه : لَوْ غَيْرُكَ قَالَهَا يَا أَبَا عُبَيدَةَ ! - وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُ خِلاَفَهُ - نَعَمْ، نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلَى قَدَرِ اللهِ، أَرَأيْتَ لَو كَانَ لَكَ إِبِلٌ، فَهَبَطَتْ وَادِياً لَهُ عُدْوَتَانِ، إِحْدَاهُمَا خَصْبَةٌ، وَالأُخْرَى جَدْبَةٌ، أَلَيسَ إِنْ رَعَيْتَ الخَصْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ، وَإِنْ رَعَيْتَ الجَدْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ ؟ قَالَ: فَجَاءَ عَبدُ الرَّحمانِ بنُ عَوفٍ رضي الله عنه وَكَانَ مُتَغَيِّباً فِي بَعْضِ حَاجَتِهِ، فَقَالَ: إِنَّ عِنْدِي مِنْ هَذَا عِلْماً، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ : «إِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدِمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَاراً مِنْهُ» فَحَمِدَ اللهَ تَعَالَى عُمَرُ رضي الله عنه وَانصَرَفَ . متفق عَلَيْهِ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সিরিয়ার দিকে যাত্রা করলেন। অতঃপর যখন তিনি ‘সার্গ্’ (সউদিয়া ও সিরিয়ার সীমান্ত) এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সাথে সৈন্যবাহিনীর প্রধানগণ - আবূ উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ ও তাঁর সাথীগণ - সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানান যে, সিরিয়া এলাকায় (প্লেগ) মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন উমার আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক পর্যায়ে যারা হিজরত করেছিলেন সেই মুহাজিরদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। উমার (রাঃ) তাঁদেরকে শাম দেশে প্রাদুর্ভূত মহামারীর কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে সুপরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। কেউ বললেন, ‘আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন। তাই তা থেকে ফিরে যাওয়াকে আমরা পছন্দ করি না।’ আবার কেউ কেউ বললেন, ‘আপনার সাথে রয়েছেন অবশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ। কাজেই আমাদের কাছে ভাল মনে হয় না যে, আপনি তাঁদেরকে এই মহামারীর মধ্যে ঠেলে দেবেন।’ উমার (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর তিনি বললেন, ‘আমার নিকট আনসারদেরকে ডেকে আনো।’ সুতরাং আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম এবং তিনি তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই তাঁরাও মতভেদ করলেন। সুতরাং উমার (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে যাও।’ তারপর আমাকে বললেন, ‘এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যারা মক্কা বিজয়ের বছর হিজরত করেছিলেন তাঁদেরকে ডেকে আনো।’ আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তখন তাঁরা পরস্পরে কোন মতবিরোধ করলেন না। তাঁরা বললেন, ‘আমাদের রায় হল, আপনি লোকজনকে নিয়ে ফিরে যান এবং তাদেরকে এই মহামারীর কবলে ঠেলে দেবেন না।’ তখন উমার (রাঃ) লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, ‘আমি ভোরে সওয়ারীর পিঠে (ফিরে যাওয়ার জন্য) আরোহণ করব। অতএব তোমরাও তাই কর।’ আবু উবাইদাহ ইবনুল জার্রাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তকদীর থেকে পলায়ন করার জন্য ফিরে যাচ্ছেন?’ উমার (রাঃ) বললেন, ‘হে আবূ উবাইদাহ! যদি তুমি ছাড়া অন্য কেউ কথাটি বলত।’ আসলে উমার তাঁর বিরোধিতা করতে অপছন্দ করতেন। বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা আল্লাহর তকদীর থেকে আল্লাহর তকদীরের দিকেই ফিরে যাচ্ছি। তুমি বল তো, তুমি কিছু উঁটকে যদি এমন কোন উপত্যকায় দিয়ে এস, যেখানে আছে দু’টি প্রান্ত। তার মধ্যে একটি হল সবুজ-শ্যামল, আর অন্যটি হল বৃক্ষহীন। এবার ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ প্রান্তে চরাও, তাহলে তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে। আর যদি তুমি বৃক্ষহীন প্রান্তে চরাও তাহলেও তা আল্লাহর তকদীর অনুযায়ীই চরাবে?’ বর্ণনাকারী (ইবনে আব্বাস (রাঃ)) বলেন, এমন সময় আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) প্রাদুর্ভাবের কথা শুনবে, তখন সেখানে যেয়ো না। আর যদি এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব নেমে আসে আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে পলায়ন ক’রে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।’’ সুতরাং (এ হাদীস শুনে) উমার (রাঃ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং (মদিনা) ফিরে গেলেন।
(সহীহুল বুখারী ৫৭২৯, ৫৭৩০, ৬৯৭৩, মুসলিম ২২১৯, আবূ দাউদ ৩১০৩, আহমাদ ১৬৬৯, ১৬১৮, ১৬৮৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৫৫, ১৬৫৭)