পরিচ্ছেদ - ২৫৩

আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য

রিয়াদুস সলেহিনহাদিস নম্বর ১৫১৭

وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَشْرَةَ رَهْطٍ عَيْناً سَرِيَّة، وَأَمَّرَ عَلَيْهَا عَاصِمَ بنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالهَدْأَةِ ؛ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ ؛ ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْل يُقالُ لَهُمْ: بَنُو لِحيَانَ، فَنَفَرُوا لَهُمْ بِقَرِيبٍ مِنْ مِئَةِ رَجُلٍ رَامٍ، فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ، فَلَمَّا أَحَسَّ بِهِمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ، لَجَأُوْا إِلَى مَوْضِعٍ، فَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ، فَقَالُوا: انْزِلُوا فَأَعْطُوا بِأَيْدِيكُمْ وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ أَنْ لاَ نَقْتُلَ مِنْكُمْ أَحَداً . فَقَالَ عَاصِمُ بنُ ثَابِتٍ رضي الله عنه: أَيُّهَا القَوْمُ، أَمَّا أَنَا، فَلاَ أَنْزِلُ عَلَى ذِمَّةِ كَافِرٍ: اَللهم أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ، فَرَمَوهُمْ بِالنّبْلِ فَقَتلُوا عَاصِماً، وَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ عَلَى العَهْدِ وَالمِيثاقِ، مِنْهُمْ خُبَيْبٌ، وَزَيدُ بنُ الدَّثِنَةِ وَرَجُلٌ آخَرُ. فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ، فَرَبطُوهُمْ بِهَا . قَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ: هَذَا أَوَّلُ الغَدْرِ وَاللهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ إنَّ لِي بِهَؤُلاَءِ أُسْوَةً، يُرِيدُ القَتْلَى، فَجَرُّوهُ وعَالَجُوهُ، فَأَبَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ، فَقَتَلُوهُ، وَانْطَلَقُوا بِخُبَيبٍ، وَزَيْدِ بنِ الدَّثِنَةِ، حَتَّى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ ؛ فَابْتَاعَ بَنُو الحارِثِ بنِ عامِرِ بنِ نَوْفَلِ بنِ عبدِ مَنَافٍ خُبيباً، وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ يَوْمَ بَدْرٍ . فَلِبثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيراً حَتَّى أَجْمَعُوا عَلَى قَتْلِهِ، فاسْتَعَارَ مِنْ بَعْضِ بَنَاتِ الحَارثِ مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا فَأَعَارَتْهُ، فَدَرَجَ بُنَيٌّ لَهَا وَهِيَ غَافِلَةٌ حَتَّى أَتَاهُ، فَوَجَدَتهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخْذِهِ وَالمُوسَى بِيَدِهِ، فَفَزِعَتْ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ . فَقَالَ: أَتَخَشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ مَا كُنْتُ لأَفْعَلَ ذَلِكَ ! قَالَتْ: وَاللهِ مَا رَأيْتُ أَسِيراً خَيراً مِنْ خُبَيْبٍ، فَوَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْماً يَأكُلُ قِطْفاً مِنْ عِنَبٍ فِي يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ بِالحَدِيدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرَةٍ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ رَزَقَهُ اللهُ خُبَيْباً . فَلَمَّا خَرَجُوا بِهِ مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ: دَعُونِي أُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَتَرَكُوهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ: وَاللهِ لَوْلاَ أَنْ تَحْسَبُوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَزِدْتُ: اَللهم أَحْصِهِمْ عَدَداً، وَاقْتُلهُمْ بِدَدَاً، وَلاَ تُبْقِ مِنْهُمْ أَحَداً . وَقَالَ:فَلَسْتُ أُبَالِي حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِماً * عَلَى أيِّ جَنْبٍ كَانَ للهِ مَصْرَعِيوَذَلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ * يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِوَكَانَ خُبَيبٌ هُوَ سَنَّ لِكُلِّ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْراً الصَّلاَةَ . وَأَخْبَرَ - يَعنِي: النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم - أَصْحَابَهُ يَوْمَ أُصِيبُوا خَبَرَهُمْ، وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمِ بنِ ثَابِتٍ رضي الله عنه حِيْنَ حُدِّثُوا أَنَّهُ قُتِلَ أَنْ يُؤْتَوا بِشَيءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ، وكَانَ قَتَلَ رَجُلاً مِنْ عُظَمَائِهِمْ، فَبَعَثَ اللهُ لِعَاصِمٍ مِثْلَ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ فَحَمَتْهُ مِنْ رُسُلِهِمْ، فَلَمْ يَقْدِرُوا أَنْ يَقْطَعُوا مِنْهُ شَيْئاً . رواه البخاري

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসেম ইবনে সাবেত আনসারীর নেতৃত্বে একটি গুপ্তচরের দল কোথাও পাঠালেন। যেতে যেতে তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদ্আহ নামক স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বানী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর তারা প্রায় একশজন তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাঁদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগল। আসেম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে একটি (উঁচু) জায়গায় (পাহাড়ে) আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, ‘নেমে এসে আত্মসমর্পণ কর, তোমাদের জন্য (নিরাপত্তার) প্রতিশ্রুতি রইল; তোমাদের কাউকে আমরা হত্যা করব না।’ আস্বেম ইবন সাবেত বললেন, ‘আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছিয়ে দাও।’ অতঃপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা-দলের প্রতি তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। তারা আস্বেমকে শহীদ ক‘রে দিল। আর তাঁদের মধ্যে তিনজন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেমে এলেন। তাঁরা হলেন, খুবাইব, যায়দ ইবন দাসিনাহ ও অন্য একজন (আব্দুল্লাহ ইবন ত্বারিক) । অতঃপর তারা তাঁদেরকে কাবু ক‘রে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে তার দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথে তৃতীয় সাহাবী (আব্দুল্লাহ) বললেন, ‘এটা প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাব না। ঐ শহীদগণই আমার আদর্শ।’ কিন্তু তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন। অবশেষে কাফেরগণ তাঁকে শহীদ ক‘রে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ ইবন দাসিনাকে বদর যুদ্ধের পরে মক্কার বাজারে গিয়ে বিক্রি করে দিল। বনী হারেস বিন আমের বিন নাওফাল বিন আব্দে মানাফ গোত্রের লোকেরা খুবাইবকে ক্রয় ক‘রে নিলো। আর খুবাইব বদর যুদ্ধের দিন হারেসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছুদিন বন্দী অবস্থায় কাটালেন। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে একমত হল। একদা তিনি নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য হারেসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। সে অন্যমনস্ক থাকলে তার একটি শিশু বাচ্চা (খেলতে খেলতে) তাঁর নিকট চলে গেল। অতঃপর সে খুবাইবকে দেখল যে, তিনি বাচ্চাটাকে নিজের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছেন এবং ক্ষুরটি তাঁর হাতে রয়েছে। এতে সে ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেল। খুবাইব তা বুঝতে পেরে বললেন, ‘একে হত্যা করে ফেলব ভেবে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? আমি তা করব না।’(পরবর্তী কালে মুসলিম হওয়ার পর) হারেসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর কসম! আমি খুবাইব অপেক্ষা উত্তম বন্দী আর কখনও দেখিনি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে একদিন আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তাঁর জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিয্ক ছাড়া আর কিছুই নয়।’অতঃপর তাঁকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের বাইরে নিয়ে গেল, তখন তিনি তাদেরকে বললেন, ‘আমাকে দু’ রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও।’ সুতরাং তারা তাঁকে ছেড়ে দিল এবং তিনি দু’ রাকআত নামায আদায় করলেন। (নামায শেষে তিনি তাদেরকে) বললেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে, তাহলে আমি (নামাযকে) আরও দীর্ঘায়িত করতাম।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংস কর এবং তাদের মধ্যে কাউকেও বাকী রেখো না।তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন,‘যেহেতু আমি মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোন পরোল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন পার্শ্বে আমি লুটিয়ে পড়ি।আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি,আর তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন।’খুবাইবই প্রথম ছিলেন, যিনি প্রত্যেক সেই মুসলিমের জন্য (হত হওয়ার পূর্বে দুই রাকআত) নামায সুন্নত ক‘রে যান, যাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়।এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাবর্গকে সেই দিনই তাঁদের খবর জানালেন, যেদিন তাঁদেরকে হত্যা করা হয়।অপর দিকে কুরাইশের কিছু লোক আস্বেম ইবন সাবেতের খুন হওয়া শুনে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে পরিচিত কোন অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়ে দিল। আর তিনি বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন; যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আস্বেমের লাশকে রক্ষা করল। সুতরাং তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ কেটে নিতে সক্ষম হল না।

(সহীহুল বুখারী ৩০৪৫, ৩৯৮৯, ৩৮০৮৬, ৭৪০২, আবূ দাউদ ২৬৬০, আহমাদ ৭৮৬৯, ৮০৩৫)

সেটিংস

ফন্ট সেটিংস

আরবি ফন্ট ফেস

আরবি ফন্ট সাইজ

২৪

অনুবাদ ফন্ট সাইজ

১৮

আল হাদিস অ্যাপ ডাউনলোড করুন

App Banner

ইসলামের জ্ঞান প্রচারে সহায়ক হোন

আপনার নিয়মিত সহায়তা আমাদের দ্বীনি ভাই-বোনের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে সাহয্য করবে। আমাদের মিশনে আপনিও অংশ নিন এবং বড় পরিবর্তনের অংশীদার হোন।

সাপোর্ট করুন