পরিচ্ছেদ - ২৫৩
আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য
রিয়াদুস সলেহিন : ১৫১১
রিয়াদুস সলেহিনহাদিস নম্বর ১৫১১
وَعَنْ أَبي مُحَمَّدٍ عَبدِ الرَّحْمَانِ بنِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفّةِ كَانُوا أُنَاساً فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَرَّةً: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ، فَلْيَذْهَبْ بثَالِثٍ، وَمنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ، فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ بِسَادِسٍ» أَوْ كَمَا قَالَ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ رضي الله عنه، جَاءَ بِثَلاَثَةٍ، وَانْطَلَقَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بعَشَرَةٍ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيّ، ثُمَّ لَبِثَ حَتَّى صَلَّى العِشَاءَ، ثُمَّ رَجَعَ، فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ . قَالَتِ امْرَأتُهُ: مَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ ؟ قَالَ: أَوَمَا عَشَّيْتِهمْ ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ وَقَدْ عَرَضُوا عَلَيْهِمْ، قَالَ: فَذَهَبتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ، فَقالَ: يَا غُنْثَرُ، فَجَدَّعَ وَسَبَّ، وَقَالَ: كُلُوا لاَ هَنِيئاً وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَداً، قَالَ: وَايْمُ اللهِ مَا كُنَّا نَأخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلاَّ رَبَا مِنْ أَسفَلِهَا أَكْثَرَ مِنهَا حَتَّى شَبِعُوا، وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبلَ ذَلِكَ، فَنَظَرَ إِلَيهَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لاِمرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا ؟ قَالَتْ: لاَ وَقُرَّةِ عَينِيْ لَهِيَ الآنَ أَكثَرُ مِنهَا قَبلَ ذَلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ ! فَأَكَلَ مِنهَا أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ: إنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشَّيطَانِ، يَعنِيْ: يَمِينَهُ . ثُمَّ أَكَلَ مِنهَا لُقْمَةً، ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ. وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ، فَمَضَى الأَجَلُ، فَتَفَرَّقْنَا اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلاً، مَعَ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أُنَاسٌ، اللهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ فَأَكَلُوا مِنْهَا أَجْمَعُونَ .وَفِي رِوَايةٍ: فَحَلَفَ أَبُو بَكْرٍ لاَ يَطْعَمُهُ، فَحَلَفَتِ المَرْأَةُ لاَ تَطْعَمُهُ، فَحَلَفَ الضَّيْفُ . - أَو الأَضْيَافُ - أَنْ لاَ يَطْعَمُهُ أَوْ يَطْعَمُوهُ حَتَّى يَطْعَمَهُ . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: هَذِهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ! فَدَعَا بِالطَّعَامِ فَأكَلَ وَأَكَلُوا، فَجَعَلُوا لاَ يَرْفَعُونَ لُقْمَةً إِلاَّ رَبَتْ مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرُ مِنْهَا، فَقَالَ: يَا أُخْتَ بَني فِرَاسٍ، مَا هَذَا ؟ فَقَالَتْ: وَقُرَّةِ عَيْنِي إنَّهَا الآنَ لأَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ أنْ نَأكُلَ، فَأكَلُوا، وَبَعَثَ بِهَا إِلَى النَّبيِّ، فَذَكَرَ أنَّهُ أكَلَ مِنْهَا .وَفِي رِوايَةٍ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَالَ لِعَبْدِ الرَّحْمَانِ: دُونَكَ أَضْيَافَكَ، فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ إِلَى النَّبيِّ، فَافْرُغْ مِنْ قِرَاهُم قَبْلَ أَنْ أَجِيءَ، فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمانِ، فَأَتَاهُمْ بِمَا عِنْدَهُ، فَقَالَ: اِطْعَمُوا ؛ فَقَالُوا: أَينَ رَبُّ مَنْزِلِنا ؟ قَالَ: اِطْعَمُوا، قَالُوا: مَا نحنُ بِآكِلِينَ حَتَّى يَجِيءَ رَبُّ مَنْزِلِنَا، قَالَ: اقْبَلُوا عَنَّا قِرَاكُمْ، فَإِنَّهُ إِنْ جَاءَ وَلَمْ تَطْعَمُوا، لَنَلْقَيَنَّ مِنْهُ فَأبَوْا، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ يَجِدُ عَلَيَّ، فَلَمَّا جَاءَ تَنَحَّيْتُ عَنْهُ، فَقَالَ: مَا صَنَعْتُمْ ؟ فَأَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحمانِ، فَسَكَتُّ: ثُمَّ قَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحْمانِ، فَسَكَتُّ، فَقَالَ: يَا غُنْثَرُ أَقْسَمْتُ عَلَيْكَ إِنْ كُنْتَ تَسْمَعُ صَوتِي لَمَا جِئْتَ ! فَخَرَجْتُ، فَقُلْتُ: سَلْ أَضْيَافَكَ، فَقَالُوا: صَدَقَ، أَتَانَا بِهِ، فَقَالَ: إِنَّمَا انْتَظَرْتُمُونِي وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ اللَّيْلَةَ . فَقَالَ الآخَرُونَ: وَاللهِ لاَ نَطْعَمُهُ حَتَّى تَطْعَمَهُ فَقَالَ: وَيْلَكُمْ مَا لَكُمْ لاَ تَقْبَلُونَ عَنَّا قِرَاكُمْ ؟ هَاتِ طَعَامَكَ، فَجَاءَ بِهِ، فَوَضَعَ يَدَهُ فَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، الأُولَى مِنَ الشَّيْطَانِ، فَأَكَلَ وَأَكَلُوا. متفق عَلَيْهِ
আবূ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
আসহাবে সুফ্ফাহ’ (তৎকালীন মসজিদে নববীতে একটি ছাউনিবিশিষ্ট ঘর ছিল। সেখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে কিছু সাহাবা আশ্রয় গ্রহণ করতেন ও বসবাস করতেন। তাঁরা গরীব মানুষ ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাদের মধ্য থেকে) তৃতীয় জনকে সাথে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের অবস্থা আছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ জনকে সাথে নিয়ে যায়।” আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দশজনকে সাথে নিয়ে গেলেন। আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলুল্লাহর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং এশার নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এশার নামাযের পর তিনি পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ঘরে ফিরে আসেন এবং আল্লাহর ইচ্ছামত রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘বাইরে কিসে আপনাকে আটকে রেখেছিল?’ তিনি বললেন, ‘তুমি এখনো তাঁদেরকে খাবার দাওনি?’ স্ত্রী বললেন, ‘আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাজি হলেন না। তাঁদের সামনে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তা খাননি।’ আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি লুকিয়ে গেলাম। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বলে উঠলেন, ‘ওরে মূর্খ!’ অতঃপর নাক কাটা ইত্যাদি বলে গালাগালি করলেন এবং (মেহমানদের উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘আপনারা স্বচ্ছন্দে খান, আল্লাহর কসম! আমি মোটেই খাব না।’আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে বেশি খাবার রয়ে গেল।’ আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু খাবারের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এ তো পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি!’ সুতরাং আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, ‘আমার (খাব না বলে) সে কসম শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’ তারপর তিনি আরও খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাবার তাঁর নিকটেই ছিল।এদিকে আমাদের এবং অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে চুক্তি ছিল তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। (এবং তারা মদিনায় আসে।) অতঃপর আমরা তাদেরকে তাদের বারো জনের নেতৃত্বে ভাগ ক‘রে দিই। প্রত্যেকের সাথেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যেকের সাথে কতজন ছিল তা আল্লাহই বেশি জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য আহার করে।অন্য বর্ণনায় আছে, আবূ বাক্র ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন, তা দেখে তাঁর স্ত্রীও ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন। আর তা দেখে মেহমানরাও তিনি সঙ্গে না খেলে ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন! আবূ বাক্র বললেন, ‘এ সব (কসম) শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খাবার আনতে বলে নিজে খেলেন এবং মেহমানরাও খেলেন। তাঁরা যখনই লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে খাচ্ছিলেন, তখনই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু (স্ত্রীকে) বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’ স্ত্রী বললেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এখন এ তো খেতে শুরু করার আগের চেয়ে অধিক বেশি!’ সুতরাং সকলেই খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান বলেন, ‘তিনি তা হতে খেলেন।’অন্য এক বর্ণনায় আছে, আবূ বাক্র আব্দুর রহমানকে বললেন, ‘তোমার মেহমান নাও। (তুমি তাদের খাতির কর) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যাচ্ছি। আমার ফিরে আসার আগে আগেই তুমি (খাইয়ে) তাঁদের খাতির সম্পন্ন করো।’ সুতরাং আব্দুর রহমান তাঁর নিকট যে খাবার ছিল, তা নিয়ে তাঁদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আপনারা খান।’ কিন্তু মেহমানরা বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ওয়ালা কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘আপনারা খান।’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ওয়ালা না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না।’ আব্দুর রহমান বললেন, ‘আপনারা আমাদের তরফ থেকে মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করুন। কারণ তিনি এসে যদি দেখেন যে, আপনারা খাননি, তাহলে অবশ্যই আমরা তাঁর নিকট থেকে (বড় ভৎর্সনা) পাব।’ কিন্তু তাঁরা (খেতে) অস্বীকার করলেন।(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি বুঝে নিলাম যে, তিনি আমার উপর খাপ্পা হবেন। অতঃপর তিনি এলে আমি তাঁর নিকট থেকে সরে গেলাম। তিনি বললেন, ‘ কি করেছ তোমরা?’ তাঁরা তাঁকে ব্যাপারটা খুলে বললেন। অতঃপর তিনি ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান!’ আব্দুর রহমান নিরুত্তর থাকলেন। তিনি আবার ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান?’ কিন্তু তখনও তিনি নীরব থাকলেন। তারপর আবার বললেন, ‘এ বেওকুফ! আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, যদি তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছ, তাহলে এসে যাও।’(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি (বাধ্য হয়ে) বের হয়ে এলাম। বললাম, ‘আপনি আপনার মেহমানদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, (আমি তাঁদেরকে খেতে দিয়েছিলাম কি না?)’ তাঁরা বললেন, ‘ও সত্যই বলেছে। ও আমাদের কাছে খাবার নিয়ে এসেছিল। (আমরাই আপনার অপেক্ষায় খাইনি।)’ আবূ বাক্র রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, ‘তোমরা আমার অপেক্ষা করে বসে আছ। কিন্তু আল্লাহর কসম! আজ রাতে আমি আহার করব না।’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমরাও খাব না।’ তিনি বললেন, ‘ধিক্কার তোমাদের প্রতি! তোমাদের কি হয়েছে যে, আমাদের পক্ষ থেকে মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করবে না?’ (অতঃপর আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্য বললেন,) ‘নিয়ে এস তোমার খাবার।’ তিনি খাবার নিয়ে এলে আবূ বাক্র তাতে হাত রেখে বললেন, ‘ বিস্মিল্লাহ। প্রথম (রাগের অবস্থায় কসম) ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খেলেন এবং মেহমানরাও আহার করলেন।
(সহীহুল বুখারী ৬০২, ৩৫৮১, ৬১৪০, ৬১৪১, মুসলিম ২০৫৭, আবূ দাউদ ৩২৭০, আহমাদ ১৭০৪)