পরিচ্ছেদঃ
উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তাআলা বলেন,অর্থাৎ, তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীগণ, তার নামায নষ্ট করল ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হল; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। (সূরা মরিয়াম ৫৯-৬০ আয়াত)তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ, কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না। (সূরা কাসাস ৭৯-৮০ আয়াত)আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,অর্থাৎ, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ-সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা তাকাসুর ৮ আয়াত)অন্যত্র আল্লাহ্ তাআলা বলেন,অর্থাৎ, কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়। (সূরা বানী ইস্রাঈল ১৮ আয়াত)
হাদিস সম্ভার : ৩৫৮
হাদিস সম্ভারহাদিস নম্বর ৩৫৮
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ : قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ضَعِيفاً أعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ فَهَلْ عَندَكِ مِنْ شَيْءٍ ؟ فَقَالَتْ : نَعَمْ فَأخْرَجَتْ أقْرَاصاً مِنْ شَعِيرٍ ثُمَّ أخَذَتْ خِمَاراً لَهَا فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي بِبَعْضِهِ ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَذَهَبتُ بِهِ فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم جَالِساً في المَسْجِدِ وَمَعَهُ النَّاسُ فَقُمْتُ عَلَيْهمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ ؟ فَقُلتُ : نَعَمْ فَقَالَ ألِطَعَامٍ ؟ فَقُلتُ : نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قُومُوا فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ : يَا أُمَّ سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بالنَّاسِ وَلَيْسَ عَندَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ ؟ فَقَالَتْ : الله وَرَسُولُهُ أعْلَمُ فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَأقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم هَلُمِّي مَا عَندَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ فَأتَتْ بِذَلِكَ الخُبْزِ فَأمَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَفُتَّ وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ ثُمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقُولَ ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ فأَذِنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ فأذِنَ لَهُم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلاً أَو ثَمَانُونَ متفقٌ عَلَيْهِ وفي رواية : فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَةٌ وَيخرجُ عَشرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ فَأكَلَ حَتَّى شَبِعَ ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا وفي رواية : فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلاً ثُمَّ أكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ وَتَرَكُوا سُؤْراً -وفي رواية : ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ وفي رواية عَن أنس قَالَ : جِئتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يوماً فَوَجَدْتُهُ جَالِساً مَعَ أصْحَابِه وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَقُلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ : لِمَ عَصَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بَطْنَهُ ؟ فَقَالُوْا : مِنَ الجُوعِ فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَقُلتُ : يَا أبتَاهُ قَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ فَقَالُوْا : من الجُوعِ فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي فَقَالَ : هَلْ مِنْ شَيءٍ ؟ قَالَت : نَعَمْ عَندِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ فَإنْ جَاءنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَحْدَهُ أشْبَعَناهُ وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنهُمْ وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
(একদা আমার সৎবাপ) আবু তালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তার সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, “তোমাকে আবু তালহা পাঠিয়েছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “কোন খাবারের জন্য নাকি?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার (সাখীদেরকে) বললেন, “ওঠ।” সুতরাং তারা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবু তালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবু তালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্ৰী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবু তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো”। সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কী কী বলে (ফুঁক) দিলেন। তারপর বললেন, “দশজনকে আসতে বল।” তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, “আরো দশজনকে আসতে বল।” তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, “আরো দশজনকে আসতে বল।” এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া করলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন ক’রে প্রবেশ করতে এবং বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা ক’রে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন ক’রে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তারাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তারা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌছে দিলেন। আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তার সাখীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তার পেটে পটি বেঁধেছিলেন। আমি তার কিছু সখীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন তার পেটে পটি বেঁধে আছেন। তারা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবু তালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেটে পটি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তার কিছু সাখীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, ‘ক্ষুধা’। অতঃপর আবু তালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বললেন, ‘হ্যাঁ , আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে’। অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ। (বুখারী ৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৬৬৮৮, মুসলিম ৫৪৩৭-৫৪৪০)