পরিচ্ছেদঃ
দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্ৰদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
আল্লাহ তাআলা বলেন,(আরবী)অর্থাৎ বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন ক’রে দিই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা ক’রে থাকি। (সূরা ইউনুস ২৪ আয়াত)তিনি আরো বলেন(আরবী)অর্থাৎ, তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট। (সূরা কাহফ ৪৫-৪৬ আয়াত)আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,(আরবী)অর্থাৎ, তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরাটুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সুরা হাদীদ ২০ আয়াত)অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,(আরবী)অর্থাৎ, নারী, সন্তান-সন্ততি জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুপদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। (আলে ইমরান ১৪) তিনি আরো বলেন,(আরবী)অর্থাৎ, হে মানুষ আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা ফাতির ৫ আয়াত) আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেন,(আরবী)অর্থাৎ, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)। (সূরা তাকাসুর ১-৫ আয়াত) তিনি আরো বলেন,(আরবী)অর্থাৎ এপার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন যদি ওরা জানত। (সূরা আনকাবুত ৬৪ আয়াত)এ মর্মে প্রচুর আয়াত রয়েছে এবং হাদীসও অগণিত। তার মধ্যে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করছিঃ
হাদিস সম্ভার : ২৭৮
হাদিস সম্ভারহাদিস নম্বর ২৭৮
وَعَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : مَرَّ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَنَحْنُ نُعَالِجُ خُصّاً لَنَا فَقَالَ مَا هَذَا ؟ فَقُلْنَا : قَدْ وَهَى فَنَحَنُ نُصْلِحُهُ فَقَالَ مَا أرَى الأَمْرَ إِلاَّ أعْجَلَ مِنْ ذَلِكَ رواه أَبو داود والترمذي بإسناد البخاري ومسلم و قَالَ الترمذي حديثٌ حسنٌ صحيحٌ
আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনুল আ'স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এমতাবস্থায় যে, আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, “এটা কী?” আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, “আমি ব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী ভাবছি।” (আবূ দাঊদ ৫২৩৮, তিরমিযী ২৩৩৫নং, বুখারী ও মুসলিমের সূত্রে)