পরিচ্ছেদঃ
মুরাক্বাবাহ (আল্লাহর ধ্যান)
আল্লাহ তাআলা বলেন,(আরবী)অর্থাৎ, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দন্ডায়মান হও (নামাযে) এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে। (সূরা শুআরা ২১৮-২১৯ আয়াত)তিনি অনত্র বলেন(আরবী)অর্থাৎ, তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা হাদীদ ৪ আয়াত)তিনি আরো বলেন,(আরবী)অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দুলোক-ভূলোকের কোন কিছুই গোপন নেই। (সূরা আলে ইমরান ৫ আয়াত)তিনি আরো বলেন(আরবী)অর্থাৎ, নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। (সূরা ফাজর ১৪ আয়াত)তাঁর অমোঘ বাণী,(আরবী)অর্থাৎ চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত। (সূরা মু’মিন ১৯ আয়াত) এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। উক্ত মৰ্মবোধক হাদীসসমূহঃ
হাদিস সম্ভার : ২৩৪
হাদিস সম্ভারহাদিস নম্বর ২৩৪
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ أنَّه سَمِعَ النَّبيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يقُولُ إنَّ ثَلاثَةً مِنْ بَني إِسْرَائِيلَ : أبْرَصَ وَأَقْرَعَ وَأَعْمَى أَرَادَ اللهُ أنْ يَبْتَليَهُمْ فَبَعَثَ إِليْهمْ مَلَكاً فَأَتَى الأَبْرَصَ فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ : لَوْنٌ حَسنٌ وَجِلدٌ حَسَنٌ وَيَذْهبُ عَني الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوناً حَسنَاً فَقَالَ : فَأيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليكَ؟ قَالَ : الإِبلُ - أَوْ قالَ : البَقَرُ شكَّ الرَّاوي - فَأُعطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ فَقَالَ : بَاركَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَقْرَعَ فَقَالَ: أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ وَيَذْهَبُ عَني هَذَا الَّذِي قَذِرَني النَّاسُ فَمَسَحَهُ فَذَهبَ عَنهُ وأُعْطِيَ شَعراً حَسَناً قالَ : فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : البَقَرُ فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلاً وَقالَ : بَارَكَ الله لَكَ فِيهَا فَأَتَى الأَعْمَى فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ : أَنْ يَرُدَّ الله إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرُ النَّاسَ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرهُ قَالَ: فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : الغَنَمُ فَأُعْطِيَ شَاةً وَالداً فَأَنْتَجَ هذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا فَكانَ لِهذَا وَادٍ مِنَ الإِبلِ وَلِهذَا وَادٍ مِنَ البَقَرِ وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الغَنَمِ ثُمَّ إنَّهُ أَتَى الأَبْرَصَ في صُورَتِهِ وَهَيئَتِهِ فَقَالَ : رَجلٌ مِسْكينٌ قَدِ انقَطَعَتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَري فَلا بَلاغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ باللهِ ثُمَّ بِكَ أَسْأَلُكَ بِالَّذي أعْطَاكَ اللَّونَ الحَسَنَ والجِلْدَ الحَسَنَ وَالمَالَ بَعِيراً أَتَبَلَّغُ بِهِ في سَفَري فَقَالَ : الحُقُوقُ كثِيرةٌ فَقَالَ : كأنِّي اعْرِفُكَ أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيراً فأعْطَاكَ اللهُ؟ فَقَالَ : إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا المالَ كَابِراً عَن كَابِرٍ فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ الله إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَقْرَعَ في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذا وَرَدَّ عَلَيهِ مِثْلَ مَا رَدَّ هَذَا فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ وَأَتَى الأَعْمَى في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ فَقَالَ : رَجُلٌ مِسْكينٌ وابنُ سَبيلٍ انْقَطَعتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَرِي فَلا بَلاَغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ أَسأَلُكَ بالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَركَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا في سَفري؟ فَقَالَ : قَدْ كُنْتُ أعمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللهِ مَا أَجْهَدُكَ اليَومَ بِشَيءٍ أخَذْتَهُ للهِ - عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ : أمْسِكْ مالَكَ فِإنَّمَا ابْتُلِيتُمْ فَقَدْ رضي الله عَنك وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيكَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, “বানী ঈস্রাইলের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ধবল-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয়জন টেকো এবং তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। ফলে তিনি তাদের কাছে একজন ফিরিশ্তা পাঠালেন। ফিরিশ্তা (প্রথমে) ধবল-কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর আমার নিকট থেকে এই রোগ দূরীভূত হোক---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার দেহে হাত ফিরালেন, যার ফলে (আল্লাহর আদেশে) তার ঘৃণিত রোগ দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দেওয়া হল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম ধন কী?’ সে বলল, ‘উট অথবা গাভী।’ (এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।) সুতরাং তাকে দশ মাসের গাভিন একটি উটনী দেওয়া হল। তারপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত (প্রাচুর্য) দান করুন।’ অতঃপর তিনি টেকোর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম জিনিস কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর কেশ এবং এই রোগ দূরীভূত হওয়া---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত ফিরালেন, যার ফলে তার (সেই রোগ) দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর কেশ দান করা হল (অতঃপর) তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ধন কোনটা?’ সে বলল, ‘গাভী।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন গাই দেওয়া হল এবং তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমার জন্য বরকত দান করুন।’ অতঃপর তিনি অন্ধের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমার নিকটে প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ‘এই যে, আল্লাহ তাআলা যেন আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন যার দ্বারা আমি লোকেদেরকে দেখতে পাই।’ সুতরাং তিনি তার চোখে হাত ফিরালেন। ফলে আল্লাহ তাকে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশ্তা বললেন, ‘তুমি কোন ধন সবচেয়ে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘ছাগল।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন ছাগল দেওয়া হল। অতঃপর ঐ দু’জনের (কুষ্ঠরোগী ও টেকোর) পশু (উটনী ও গাভীর) পাল বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই অন্ধেরও ছাগলটিও বাচ্চা প্রসব করল। ফলে এর এক উপত্যকা ভর্তি উট, এর এক উপত্যকা ভর্তি গরু এবং এর এক উপত্যকা ভর্তি ছাগল হয়ে গেল। পুনরায় ফিরিশ্তা (পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পূর্বের চেহারা ও আকৃতিতে) কুষ্ঠরোগীর কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আমি মিসকীন মানুষ, সফরে আমার সকল পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার কোন উপায় নেই। সেজন্য আমি ঐ সত্তার নামে তোমার কাছে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক দান করেছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে উত্তর দিল যে, ‘(আমার দায়িত্বে আগে থেকেই) বহু অধিকার ও দাবি রয়েছে।’(এ কথা শুনে) ফিরিশ্তা বললেন, ‘তোমাকে আমার চেনা মনে হচ্ছে। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না, লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করত? তুমি কি দরিদ্র ছিলেনা, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ধন প্রদান করেছেন?’ সে বলল, ‘এ ধনতো আমি পিতা ও পিতামহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’ ফিরিশ্তা বললেন, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’অতঃপর তিনি তার পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে টেকোর কাছে এলেন এবং তাকেও সে কথা বললেন, যে কথা কুষ্ঠরোগীকে বলেছিলেন। আর টেকোও সেই জবাব দিল, যে জবাব কুষ্ঠরোগী দিয়েছিল। সে জন্য ফিরিশ্তা তাকেও বললেন যে, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’পুনরায় তিনি তাঁর পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে অন্ধের নিকট এসে বললেন যে, ‘আমি একজন মিসকীন ও মুসাফির মানুষ, সফরের যাবতীয় পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে স্বদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার আর কোন উপায় নেই। সুতরাং আমি তোমার নিকট সেই সত্তার নামে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে বলল, ‘নিঃসন্দেহে আমি অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। (আর এই ছাগলও তারই দান) অতএব তুমি ছাগলের পাল থেকে যা ইচ্ছা নাও ও যা ইচ্ছা ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম আজ তুমি আল্লাহ আযযা অজাল্লার জন্য যা নেবে, সে ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন কষ্ট বা বাধা দেব না।’ এ কথা শুনে ফিরিশ্তা বললেন, ‘তুমি তোমার মাল তোমার কাছে রাখ। নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হল (যাতে তুমি কৃতকার্য হলে)। ফলে আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার সঙ্গীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন।’ (বুখারী ৩৪৬৪, মুসলিম ৭৬২০নং)