পরিচ্ছেদঃ

জিহাদ ওয়াজেব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,وَقَاتِلُوا المُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ المُتَّقِينَ অর্থাৎ, আর অংশীবাদীদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ সাবধানীদের সাথে রয়েছেন। (সূরা তাওবাহ ৩৬ আয়াত)তিনি অন্যত্র বলেছেন,كُتِبَ عَلَيْكُمُ القِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئاً وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئاً وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ অর্থাৎ, তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এ তোমাদের কাছে অপছন্দ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাক্বারাহ-০২: ২১৬ আয়াত)তিনি আরো বলেছেন,انْفِرُوا خِفَافاً وَثِقَالاً وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ অর্থাৎ, দুর্বল হও অথবা সবল সর্বাবস্থাতেই তোমরা বের হও এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদ কর। (সূরা তাওবাহ ৪১ আয়াত) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,إنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ المُؤْمِنِينَ أنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْداً عَلَيْهِ حَقّاً فِي التَّوْرَاةِ وَالإنْجِيلِ وَالقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الفَوْزُ العَظِيمُ অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় ক’রে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ (যুদ্ধে)র দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যা তোমরা সম্পাদন করেছ। আর এটা হচ্ছে মহা সাফল্য। (সূরা তাওবাহ ১১১ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেছেন,لاَ يَسْتَوِي القَاعِدُونَ مِنَ المُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأنْفُسِهِمْ فَضَّلَ اللهُ المُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى القَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُلاًًّ وَعَدَ اللهُ الحُسْنَى وَفَضَّلَ اللهُ المُجَاهِدِينَ عَلَى القَاعِدِينَ أَجْراً عَظِيماً، دَرَجَاتٍ مِنْهُ وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً وَكَانَ اللهُ غَفُوْراً رَحِيماً অর্থাৎ, বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহা পুরস্কার দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা ৯৫-৯৬ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন,يَا أيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ ألِيمٍ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً في جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الفَوْزُ العَظِيمُ وَأُخْرَى تُحِبُّونَهَا نَصْرٌ مِن اللهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ وَبَشِّرِ المُؤمِنينَ অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপরাশিকে ক্ষমা ক’রে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর তিনি তোমাদেরকে দান করবেন বাঞ্ছিত আরো একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা সাফ্ ১০-১৩ আয়াত)এ মর্মে প্রসিদ্ধ বহু আয়াত রয়েছে। আর জিহাদের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসও রয়েছে অগণিত। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপঃ

হাদিস সম্ভারহাদিস নম্বর ১৯১৭

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَضَمَّنَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ لاَ يُخْرِجُهُ إِلاَّ جِهَادٌ فِي سَبِيلِي وَإِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي فَهُوَ عَلَيَّ ضَامِنٌ أَنْ أُدْخِلَهُ الجَنَّةَ أَوْ أُرْجِعَهُ إِلَى مَنْزِلِهِ الَّذِيْ خَرَجَ مِنْهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا مِنْ كَلْمٍ يُكْلَمُ فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ جَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ كُلِم ؛ لَوْنُهُ لَوْنُ دَمٍ وَرِيحُهُ رِيحُ مِسْكٍ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْلاَ أَنْ يَشُقَّ عَلَى المُسْلِمِينَ مَا قَعَدْتُ خِلاَفَ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبيلِ اللهِ أَبَداً وَلكِنْ لاَ أَجِدُ سَعَةً فَأَحْمِلُهُمْ وَلاَ يَجِدُونَ سَعَةً وَيَشُقُّ عَلَيْهِمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي وَالَّذِي نَفْس مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنْ أَغْزُوَ فِي سَبيلِ اللهِ فَأُقْتَلَ ثُمَّ أَغْزُوَ فَأُقْتَلَ ثُمَّ أَغْزُوَ فَأُقْتَلَرواه مسلم وروى البخاري بعضه

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ সে ব্যক্তির (রক্ষণাবেক্ষণের) দায়ভার গ্রহণ করেন, যে ব্যক্তি তাঁর রাস্তায় বের হয়। (আল্লাহ বলেন,) ‘আমার পথে জিহাদ করার স্পৃহা, আমার প্রতি বিশ্বাস, আমার পয়গম্বরদেরকে সত্যজ্ঞানই তাকে (স্বগৃহ থেকে) বের করে। আমি তার এই দায়িত্ব নিই যে, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, না হয় তাকে নেকী বা গনীমতের সম্পদ দিয়ে তার সেই বাড়ির দিকে ফিরিয়ে দেব, যে বাড়ি থেকে সে বের হয়েছিল।’ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! আল্লাহর পথে দেহে যে কোন যখম পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে তা ঠিক এই অবস্থায় আগমন করবে যে, যেন আজই যখম হয়েছে। (টাটকা যখম ও রক্ত ঝরবে।) তার রং তো রক্তের রং হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত। সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে! যদি মুসলিমদের জন্য কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে আমি কখনো এমন মুজাহিদ বাহিনীর পিছনে বসে থাকতাম না, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। কিন্তু আমার এ সঙ্গতি নেই যে, আমি তাদের সকলকে বাহন দিই এবং তাদেরও (সকলের জিহাদে বের হওয়ার) সঙ্গতি নেই। আর (আমি চলে গেলে) আমার পিছনে থেকে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হবে। সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে! আমার আন্তরিক ইচ্ছা যে, আমি আল্লাহর পথে লড়াই করি এবং শহীদ হই। অতঃপর আবার (জীবিত হয়ে) লড়াই করি, পুনরায় শাহাদত বরণ করি। অতঃপর (পুনর্জীবিত হয়ে) যুদ্ধ করি এবং পুনরায় শহীদ হয়ে যাই।” (বুখারী কিদয়ংশ ৩৬, ৩১২৩, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩, মুসলিম ৪৯৬৭ নং)

সেটিংস

ফন্ট সেটিংস

আরবি ফন্ট ফেস

আরবি ফন্ট সাইজ

২৪

অনুবাদ ফন্ট সাইজ

১৮

আল হাদিস অ্যাপ ডাউনলোড করুন

App Banner

ইসলামের জ্ঞান প্রচারে সহায়ক হোন

আপনার নিয়মিত সহায়তা আমাদের দ্বীনি ভাই-বোনের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে সাহয্য করবে। আমাদের মিশনে আপনিও অংশ নিন এবং বড় পরিবর্তনের অংশীদার হোন।

সাপোর্ট করুন