পরিচ্ছেদঃ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”- এর শর্তসমূহ
(১) এ বিষয়ে ইলম থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া সকল গাইরুল্লাহকে অস্বীকার করে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করা এবং এ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“আর জেনে রেখো, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই।” (সূরাহ মুহাম্মাদ : ১৯)==“তবে যারা সজ্ঞানে সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” (সূরাহ যুখরুফ : ৮৬)অর্থাৎ কালেমার সাক্ষ্য, তারা মুখে যা বলে সেটি অন্তর দিয়ে জানে।নাবী (সাঃ) বলেছেন : “যে লোক এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, জীবিত অবস্থায় সে জানত, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)(২) দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা : কোনরূপ সন্দেহ ছাড়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর বিশ্বাস অন্তরে পূর্ণভাবে থাকতে হবে। কালেমাকে এমন পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে যাতে সংশয়-সন্দেহ না থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“সত্যিকারের মু’মিন হল তারাই, যারা আল্লাহ্ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং ঈমান আনার পর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না।” (সূরাহ্ আল-হুজুরাত : ১৫)।নাবী (সাঃ) বলেছেন : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর রাসূল। যে লোক এতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)(৩) কবুল করা : অর্থাৎ অন্তর ও জিহবার দ্বারা স্বীকার করা। মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“তাদেরকে যখন বলা হত, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত : একজন পাগল কবির কথায় আমরা কি আমাদের ইলাহগুলোকে পরিত্যাগ করব?।” (সূরাহ সাফফাত : ৩৫-৩৬)এ আয়াতের তাফসীরে হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : মু’মিনগণ যেমনিভাবে এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করতেন ঠিক তার বিপরীত কাফিররা তা বলতে অস্বীকার করত অহঙ্কারের কারণে। কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে নাবী কারীম (সাঃ) বলেন : “আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। যখন কেউ তা মেনে নিবে ও মুখে উচ্চারণ করবে তখন সাথে সাথে তার জীবন ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের যে হাক্বাসমূহ আছে তা আদায় করতে হবে এবং তার হিসাব নিবেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)(৪) আত্মসমপর্ণ ও যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ কর।” (সূরাহ্ যুমার : ৫৪)।(৫) সত্যবাদিতা, যা মিথ্যার বিপরীত : তা হল অন্তরে সর্বান্তকরণে কালেমাকে উচ্চারণ করা। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সাবধান করে বলেন :===“আলিফ লাম-মীম : লোকেরা কি ভেবে নিয়েছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” (সূরাহ্ আনকাবূত : ১-৩)রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যদি কেউ খাটি অন্তরে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল, তবে আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন।” (সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম)(৬) ইখলাস : তা হচ্ছে নিয়্যাতকে শুদ্ধ করে যাবতীয় শির্ক থেকে নিজেকে দূরে রেখে নেক ‘আমল করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :==“তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে ইখলাসের সাথে আল্লাহর আনুগত্যসহ ‘ইবাদাত করতে।” (সূরাহ বাইয়্যিনাহ্ : ৫)রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফা’য়াত পাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্বীকার করে।” (সহীহুল বুখারী)==তিনি (সাঃ) আরো বলেছেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন যে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।” (সহীহুল বুখারী)(৭) কালেমা তায়্যিবার প্রতি ভালবাসা পোষণ করা : কালেমার দাবী হলো, যে সকল মু’মিন উপরোক্ত শর্তসমূহ মানবে মানুষ কেবল তাদেরকেই ভালবাসবে এবং যারা তা মানবে না তাদেরকে ঘৃণা করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“মানুষের মাঝে এমন লোকও রয়েছে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে যেমন ভালবাসতে হয় তেমন তাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা প্রকৃত ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা আরো মজবুত।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ১৬৫)রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে : এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়।” (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)(৮) তাগুতের প্রতি কুফরী করা : তাগুত হল ঐ সকল বাতিল ইলাহ্ আল্লাহকে ছাড়া যাদের ‘ইবাদাত করা হয়। সুতরাং কালেমা পাঠকারী তাদেরকে বর্জন করবে, যদিও সে একমাত্র আল্লাহকে রব্ব এবং সত্যিকারের ইলাহ্ বলে স্বীকার করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :===“আর যে লোক তাগুতদের অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে নিশ্চয়ই সে এমন এক শক্ত বন্ধনকে আঁকড়ে ধরল যা ছুটবার নয়।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ২৫৬)রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি অন্তর থেকে বলে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যে সকল ইলাহর ‘ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে তার জীবন ও সম্পদ (নষ্ট করা) অন্যের জন্য হারাম।” (সহীহ মুসলিম)-----------
সহিহ ফাযায়েলে আমল : ৬৩
সহিহ ফাযায়েলে আমলহাদিস নম্বর ৬৩
বর্ণনাকারী হতে বর্ণিতঃ
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ত্বালহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তা পাঠ করবে তার মৃত্যুকষ্ট দূর হয়ে যাবে, তার রং মৃত্যুর সময় উজ্জ্বল হতে থাকবে এবং সে আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখতে পাবে।” কিন্তু আমি উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)- কে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। সেজন্য আমি মনক্ষূন্ন আছি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। ত্বালহা (রাঃ) আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কি? ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি অবগত আছি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কালেমা আর নেই যা তিনি স্বীয় চাচা আবু ত্বালিবকে মৃত্যুর সময় পেশ করেছিলেন, অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ত্বালহা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম এটাই, আল্লাহর কসম এটাই সেই কালেমা।”
বায়হাক্বীর আসমা ওয়াস সিফাত হা/১৭২- উপরোক্ত শব্দে, দূররে মানসুর, হাকিম হা/১২৪৪, আহমাদ হা/১৩৮৪, আবূ ইয়াসা। ইমাম হাকিম বলেন : বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী একে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : এর সানাদ সহীহ