পরিচ্ছদঃ ৫৭
অল্পে তুষ্টি, চাওয়া হতে দূরে থাকা এবং মিতাচারিতা ও মিতব্যয়িতার মাহাত্ম্য এবং অপ্রয়োজনে চাওয়ার নিন্দাবা/পাশাদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ ৬ আয়াত)তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)তিনি অন্যত্র বলেন,অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।” (সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)এ ব্যাপারে পূর্বের দুই পরিচ্ছেদে অধিকাংশ হাদীস পার হয়েছে। আরো কিছু হাদীস নিম্নরূপঃ-
রিয়াদুস সলেহিন : ৫২৯
রিয়াদুস সলেহিনহাদিস নম্বর ৫২৯
وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه، قَالَ: سألتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَأعْطَانِي، ثُمَّ سَألْتُهُ فَأَعْطَانِي، ثُمَّ سَألْتُهُ فَأعْطَانِي، ثُمَّ قَالَ: «يَا حَكِيم، إنَّ هَذَا المَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ، فَمَنْ أخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ أخَذَهُ بإشرَافِ نَفسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَكَانَ كَالَّذِي يَأكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ، وَاليَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى» قَالَ حَكِيم: فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أرْزَأُ أحَداً بَعْدَكَ شَيْئاً حَتَّى أُفَارِقَ الدُّنْيَا، فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ رضي الله عنه يَدْعُو حَكيماً لِيُعْطِيَه العَطَاء، فَيَأبَى أنْ يَقْبَلَ مِنْهُ شَيْئاً، ثُمَّ إنَّ عُمَرَ رضي الله عنه دَعَاهُ لِيُعْطِيَه فَأَبَى أنْ يَقْبَلَهُ. فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ المُسْلِمِينَ، أُشْهِدُكُمْ عَلَى حَكيمٍ أنّي أعْرِضُ عَلَيْهِ حَقَّهُ الَّذِي قَسَمَهُ اللهُ لَهُ في هَذَا الفَيءِ فَيَأبَى أَنْ يَأخُذَهُ . فَلَمْ يَرْزَأْ حَكِيمٌ أحَداً مِنَ النَّاسِ بَعْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى تُوُفِّي . متفقٌ عَلَيْهِ
হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।) হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’ তারপর আবূ বাক্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। (‘ফাই’ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তুরমত যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে ‘মালে গনীমত’ বলা হয়।)
( সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিযী ২৪৬৩, নাসায়ী ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবূ দাউদ ১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩, ২৭৫০)